কয়েক মাস আগের কথা। হঠাৎ করে বন্ধুরা ঠিক করলাম কক্সবাজার যাব। যেই ভাবা
সেই কাজ। দু-এক দিনেই আমরা কক্সবাজার যাওয়ার সব পরিকল্পনা ঠিক করে ফেললাম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন সন্ধ্যায় আমরা কক্সবাজারের উদ্দেশে বাসে
উঠলাম। কক্সবাজার গিয়ে পৌঁছালাম পরের দিন।
প্রায় ১৫ ঘণ্টার জার্নি। হোটেলে রুম ঠিক করা ছিল আগেই। প্রচণ্ড টায়ার্ড হয়ে আমরা রুমে ঢুকলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে মোবাইল থেকে ফেসবুক ওপেন করলাম। জীবনে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার এসেছি, সবাইকে না জানালে চলবে? তাই সমুদ্র পাহাড় ইত্যাদি মিক্স করে দিলাম কঠিন কাব্যিক এক স্ট্যাটাস। স্ট্যাটাস পাবলিশ করার আগে ‘অ্যাট কক্সবাজার’ লিখে চেক ইন দিতে ভুললাম না।
স্ট্যাটাস দিয়ে কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
কোনো কমেন্ট এল না, তবে ইনবক্সে একটা মেসেজ এল। ইনবক্স খুলে খুব খুশি হলাম। এক মেয়ের মেসেজ, ‘আপনি এখন কক্সবাজারে? কবে এলেন?’
আমি রিপ্লাই দিলাম, ‘এই তো কিছুক্ষণ আগে।’
মেয়ে আবার মেসেজ দিল, ‘থাকবেন কত দিন এখানে?’
হোটেল রুমে অলস দুপুর। মেসেজে কথা বলতে ভালোই লাগছিল। আমি কথা চালিয়ে গেলাম,
—বেশি না, তিন-চার দিন থাকব। কেন বলুন তো?
—না, এমনি! কক্সবাজার কি এবারই প্রথম এলেন?
—হ্যাঁ, এবারই প্রথম।
—ভালো করে ঘুরেটুরে দেখবেন। এখানে দেখার আছে অনেক কিছু।
—আচ্ছা। দেখব।
—আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
আমি জবাব দিলাম ‘করেন’।
—আপনি রস+আলোতে লেখেন না?
—এই তো টুকটাক!
—আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত।
আমি মেয়ের কথা শুনে টাশকি খেলাম। বলে কী এই মেয়ে! আমার ভক্ত! ভেতরে ভেতরে আমার খুশিতে ঢোল হওয়ার দশা। তার পরও যথেষ্ট বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘আরে নাহ! কী যে বলেন!’
মেয়ে আবার রিপ্লাই দিল, ‘না। আসলেই। আমি সত্যি বলছি। আপনাকে আমার দেখার খুব শখ।’
হায় হায়! বলে কী! মেয়ের কথা শুনে আমার ১৫ ঘণ্টা জার্নির ক্লান্তি নিমেষেই
নাই হয়ে গেল। নিজেকে হঠাৎ করে খুব চাঙা আর ফুরফুরে মনে হতে লাগল।
যা-ই হোক, আমি আবার ভাবের সঙ্গে বললাম, ‘তাই? সন্ধ্যার দিকে বিচে থাকব। চলে আসবেন।’
মেয়ে রিপ্লাই দিল, ‘আপনাকে চিনব কীভাবে?’
বললাম, ‘আমার পরনে থাকবে কালো টি-শার্ট। আপনার?’
মেয়ে বলল, ‘আমিও কালো জামা পরব।’
‘ওকে।’
কিছুক্ষণ কোনো কথা চালাচালি হলো না আর। বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়ে আবার মেসেজ দিল, ‘দেখা হলে আপনার একটা অটোগ্রাফ নেব। দেবেন?’
বলে কী এই মেয়ে! আমি আবার টাশকি খেলাম। টাশকির চোটে এবার শোয়া থেকে উঠে বসে গেলাম। কাঁপা কাঁপা হাতে রিপ্লাই দিলাম, ‘ওকে, দেব নে!’
আমার ভেতরে তখন উথাল-পাতাল অবস্থা! কেউ আমার অটোগ্রাফ চাচ্ছে! তা-ও আবার এক মেয়ে। এ কীভাবে সম্ভব? আমি তো সেলিব্রিটি হয়ে গেলাম পুরা। কিন্তু কী অটোগ্রাফ দেব মেয়েকে? আমি জীবনে কারও অটোগ্রাফ নিইনি। অটোগ্রাফে কী লিখতে হয়, সে সম্পর্কেও তেমন কোনো ধারণা নেই। কী করব এখন? জীবনে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা! ভালো অটোগ্রাফ না দিতে পারলে তো মান-ইজ্জত শেষ।
যার কেউ নেই, তার গুগল আছে। তৎক্ষণাৎ গুগল খুলে বসলাম। হাউ টু রাইট অটোগ্রাফ, টিউটোরিয়াল: অটোগ্রাফ রাইটিং, স্যাম্পল অব এ নাইস অটোগ্রাফ ইত্যাদি লিখে সার্চ দিতে থাকলাম। ইমেজ সার্চ থেকে ক্ল্যাসিক এবং বিখ্যাত কিছু অটোগ্রাফের ছবিও দেখার চেষ্টা করলাম। গুগল আমাকে হতাশ করল না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অটোগ্রাফের ওপর আমার ভালো দখল চলে এল। গুগলের টিউটোরিয়াল আর নিজের চিন্তাভাবনা মিক্স করে অবশেষে চমৎকার একটি অটোগ্রাফ ঠিক করলাম মনে মনে। এই অটোগ্রাফটাই দেব মেয়েকে। মেয়ে মুগ্ধ না হয়ে যাবে কই!
এবার শুধু সন্ধ্যা হওয়ার অপেক্ষা, মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার অপেক্ষা।
সন্ধ্যাবেলা বিচে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
ফেসবুকে আগেই ছবি দেখায় চিনতে বেশি বেগ পেতে হলো না। অতি সুন্দরী মেয়ে।
বিচিত্র কারণে সে ধারণা করে বসে আছে সাহিত্য-টাহিত্য নিয়ে আমার জ্ঞান অনেক। সে আমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করছিল। আমি ভুজং ভাজং দিয়ে তাল মেলাচ্ছিলাম। আমার মাথায় তখন অটোগ্রাফ দেওয়ার চিন্তা। অটোগ্রাফ চাচ্ছে না কেন মেয়ে? একবার ভাবলাম নিজ থেকেই বলি, ‘অটোগ্রাফ নিবা না?’ পরে ভাবলাম, নাহ! ব্যাপারটা কী রকম হয়ে যায়।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এল। মেয়ের অটোগ্রাফ নেওয়ার নাম নেই।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা একসঙ্গে অনেক দূরে চলে এসেছি। হঠাৎ মেয়েটা বলল, ‘ভাইয়া, আপনার অটোগ্রাফ নেওয়ার খুব শখ ছিল। কিন্তু হয়েছে কী জানেন? আমি কলম আনতে ভুলে গেছি। তা ছাড়া রাত হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে। আরেক দিন দেখা হলে নেব নাহয়। ঠিক আছে? মন খারাপ করবেন না।’
মেয়ের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ফ্যাসফ্যাস করে বললাম, ‘না না! ঠিক আছে। নেক্সট টাইম হবে।’
‘আচ্ছা ভাইয়া, যাই। পরেরবার মনে করে কলম নিয়ে আসব।’
এটা বলে মেয়ে হাঁটা শুরু করল।
আমি তার ফেরার পথের দিকে
তাকিয়ে রইলাম।
রস আলো ১৩-০৫-২০১৩
পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন সন্ধ্যায় আমরা কক্সবাজারের উদ্দেশে বাসে
উঠলাম। কক্সবাজার গিয়ে পৌঁছালাম পরের দিন।
প্রায় ১৫ ঘণ্টার জার্নি। হোটেলে রুম ঠিক করা ছিল আগেই। প্রচণ্ড টায়ার্ড হয়ে আমরা রুমে ঢুকলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে মোবাইল থেকে ফেসবুক ওপেন করলাম। জীবনে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার এসেছি, সবাইকে না জানালে চলবে? তাই সমুদ্র পাহাড় ইত্যাদি মিক্স করে দিলাম কঠিন কাব্যিক এক স্ট্যাটাস। স্ট্যাটাস পাবলিশ করার আগে ‘অ্যাট কক্সবাজার’ লিখে চেক ইন দিতে ভুললাম না।
স্ট্যাটাস দিয়ে কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
কোনো কমেন্ট এল না, তবে ইনবক্সে একটা মেসেজ এল। ইনবক্স খুলে খুব খুশি হলাম। এক মেয়ের মেসেজ, ‘আপনি এখন কক্সবাজারে? কবে এলেন?’
আমি রিপ্লাই দিলাম, ‘এই তো কিছুক্ষণ আগে।’
মেয়ে আবার মেসেজ দিল, ‘থাকবেন কত দিন এখানে?’
হোটেল রুমে অলস দুপুর। মেসেজে কথা বলতে ভালোই লাগছিল। আমি কথা চালিয়ে গেলাম,
—বেশি না, তিন-চার দিন থাকব। কেন বলুন তো?
—না, এমনি! কক্সবাজার কি এবারই প্রথম এলেন?
—হ্যাঁ, এবারই প্রথম।
—ভালো করে ঘুরেটুরে দেখবেন। এখানে দেখার আছে অনেক কিছু।
—আচ্ছা। দেখব।
—আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
আমি জবাব দিলাম ‘করেন’।
—আপনি রস+আলোতে লেখেন না?
—এই তো টুকটাক!
—আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত।
আমি মেয়ের কথা শুনে টাশকি খেলাম। বলে কী এই মেয়ে! আমার ভক্ত! ভেতরে ভেতরে আমার খুশিতে ঢোল হওয়ার দশা। তার পরও যথেষ্ট বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘আরে নাহ! কী যে বলেন!’
মেয়ে আবার রিপ্লাই দিল, ‘না। আসলেই। আমি সত্যি বলছি। আপনাকে আমার দেখার খুব শখ।’
হায় হায়! বলে কী! মেয়ের কথা শুনে আমার ১৫ ঘণ্টা জার্নির ক্লান্তি নিমেষেই
নাই হয়ে গেল। নিজেকে হঠাৎ করে খুব চাঙা আর ফুরফুরে মনে হতে লাগল।
যা-ই হোক, আমি আবার ভাবের সঙ্গে বললাম, ‘তাই? সন্ধ্যার দিকে বিচে থাকব। চলে আসবেন।’
মেয়ে রিপ্লাই দিল, ‘আপনাকে চিনব কীভাবে?’
বললাম, ‘আমার পরনে থাকবে কালো টি-শার্ট। আপনার?’
মেয়ে বলল, ‘আমিও কালো জামা পরব।’
‘ওকে।’
কিছুক্ষণ কোনো কথা চালাচালি হলো না আর। বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়ে আবার মেসেজ দিল, ‘দেখা হলে আপনার একটা অটোগ্রাফ নেব। দেবেন?’
বলে কী এই মেয়ে! আমি আবার টাশকি খেলাম। টাশকির চোটে এবার শোয়া থেকে উঠে বসে গেলাম। কাঁপা কাঁপা হাতে রিপ্লাই দিলাম, ‘ওকে, দেব নে!’
আমার ভেতরে তখন উথাল-পাতাল অবস্থা! কেউ আমার অটোগ্রাফ চাচ্ছে! তা-ও আবার এক মেয়ে। এ কীভাবে সম্ভব? আমি তো সেলিব্রিটি হয়ে গেলাম পুরা। কিন্তু কী অটোগ্রাফ দেব মেয়েকে? আমি জীবনে কারও অটোগ্রাফ নিইনি। অটোগ্রাফে কী লিখতে হয়, সে সম্পর্কেও তেমন কোনো ধারণা নেই। কী করব এখন? জীবনে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা! ভালো অটোগ্রাফ না দিতে পারলে তো মান-ইজ্জত শেষ।
যার কেউ নেই, তার গুগল আছে। তৎক্ষণাৎ গুগল খুলে বসলাম। হাউ টু রাইট অটোগ্রাফ, টিউটোরিয়াল: অটোগ্রাফ রাইটিং, স্যাম্পল অব এ নাইস অটোগ্রাফ ইত্যাদি লিখে সার্চ দিতে থাকলাম। ইমেজ সার্চ থেকে ক্ল্যাসিক এবং বিখ্যাত কিছু অটোগ্রাফের ছবিও দেখার চেষ্টা করলাম। গুগল আমাকে হতাশ করল না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অটোগ্রাফের ওপর আমার ভালো দখল চলে এল। গুগলের টিউটোরিয়াল আর নিজের চিন্তাভাবনা মিক্স করে অবশেষে চমৎকার একটি অটোগ্রাফ ঠিক করলাম মনে মনে। এই অটোগ্রাফটাই দেব মেয়েকে। মেয়ে মুগ্ধ না হয়ে যাবে কই!
এবার শুধু সন্ধ্যা হওয়ার অপেক্ষা, মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার অপেক্ষা।
সন্ধ্যাবেলা বিচে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
ফেসবুকে আগেই ছবি দেখায় চিনতে বেশি বেগ পেতে হলো না। অতি সুন্দরী মেয়ে।
বিচিত্র কারণে সে ধারণা করে বসে আছে সাহিত্য-টাহিত্য নিয়ে আমার জ্ঞান অনেক। সে আমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করছিল। আমি ভুজং ভাজং দিয়ে তাল মেলাচ্ছিলাম। আমার মাথায় তখন অটোগ্রাফ দেওয়ার চিন্তা। অটোগ্রাফ চাচ্ছে না কেন মেয়ে? একবার ভাবলাম নিজ থেকেই বলি, ‘অটোগ্রাফ নিবা না?’ পরে ভাবলাম, নাহ! ব্যাপারটা কী রকম হয়ে যায়।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এল। মেয়ের অটোগ্রাফ নেওয়ার নাম নেই।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা একসঙ্গে অনেক দূরে চলে এসেছি। হঠাৎ মেয়েটা বলল, ‘ভাইয়া, আপনার অটোগ্রাফ নেওয়ার খুব শখ ছিল। কিন্তু হয়েছে কী জানেন? আমি কলম আনতে ভুলে গেছি। তা ছাড়া রাত হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে। আরেক দিন দেখা হলে নেব নাহয়। ঠিক আছে? মন খারাপ করবেন না।’
মেয়ের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ফ্যাসফ্যাস করে বললাম, ‘না না! ঠিক আছে। নেক্সট টাইম হবে।’
‘আচ্ছা ভাইয়া, যাই। পরেরবার মনে করে কলম নিয়ে আসব।’
এটা বলে মেয়ে হাঁটা শুরু করল।
আমি তার ফেরার পথের দিকে
তাকিয়ে রইলাম।
রস আলো ১৩-০৫-২০১৩
পুরাই সাসপেন্স স্টোরি মশাই ! আমি তো ভাবছিলাম নিখাদ প্রেমের গল্প ... হাহাহা কী যে দাঁড়ালো শেষমেশ :p
উত্তরমুছুনএটা কিছুটা সত্য গল্প :)
মুছুন