আদনান মুকিত দীপ্র-র ফেসবুক নোট থেকে।
প্রচলিত মিডিয়ার প্রতি আমার আস্থা কম। তারা প্রকৃত প্রতিভার দাম দেয় না। তাই, মিডিয়ার উপর ভরসা না করে আমি নিজেই কিবোর্ড হাতে তুলে নিয়েছি।বিকল্প মিডিয়া হিসেবে ফেসবুক আছে না? তাই এই আয়োজন- ‘লাল চা উইথ আদনান মুকিত’। এ আয়োজনে আমরা জানবো বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সম্পর্কে। জানবো তাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা সহ নানা জানা-অজনা তথ্য। আসুন, দেখি কে আছেন আজ আমাদের সঙ্গে।
স্বপ্নে হেঁটে কেবল ক্লান্ত হওয়া যায়। তবে পথ পেরুনো যায়না একটুও: আলিম আল রাজি
ছোট্ট সুন্দর একটা উপজেলা গোয়াইনঘাট। সিলেটের অন্যান্য উপজেলার মতই প্রাকৃতিত শোভায় একেবারে পরিপূর্ণ। অনেক কিছুই ছিল এই উপজেলায়। স্কুল-কলেজ তো ছিলই, তার পাশাপাশি বন্যাদূর্গতদের আশ্রয়ের জন্য ছিল ফ্লাড সেন্টার। কিন্তু কোন বন্যা ছিল না। তাই ওই ফ্লাড সেন্টারকে সরকারী কোয়ার্টার বানিয়ে ফেলেছিল সরকার। তারপর ১৯৯১ সালের ১৭ নভেন্মর বন্যা এলো। তবে বর্ষার বন্যা নয়, আনন্দের বন্যা। আর হবে না কেন? সেই কোয়ার্টারেরই এক বাড়িতে জন্মেছিলেন ব্লগের নিয়মিত এবং রস+আলোর অনিয়মিত লেখক আলিম আল রাজি। সরকারি চাকরির সুবাদে কোয়ার্টার পেয়েছিলেন রাজির নানা। ওই সময় বাবার বাড়িতেই ছিলেন রাজির মা। ঐতিহাসিক ১৭ নভেম্বরে পুরো ফ্লাড সেন্টার এলাকাকে আনন্দের ফ্লাডে ভাসিয়েছিলেন রাজি। তবে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সময় দেখা গেল রাজির জন্ম তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। শুধু রাজি নয়, ক্লাসের ৭৬ জনেরই জন্ম তারিখ এক, ৩১ ডিসেম্বর। স্কুলের শিক্ষক ছিলেন একতায় বিশ্বাসী। তাই হয়তো সবার জন্মতারিখ এক করে দিয়েছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই দুষ্টুমিতে দারুন পারদর্শী ছিলেন রাজি। দুষ্টুমি করলে এমনিতেই বাবা-মা নামক দুটি বাধা পেরোতে হয়। কিন্তু যৌথ পরিবারে বড় হওয়ায় রাজিকে পেরোতে হত সাত সমুদ্রের মত সাতটি বাধা। বাবা, মা, তিন চাচা, দাদা, দাদী। তবে তাদের বাধা রুখতে পারেনি রাজিকে। কোন কিছুই একা করতেন না তিনি। এমনকি হাত-পা ভাঙলেও না। সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে রাজির ভাঙলো এক হাত, আর তার চাচার ভাঙলো দুই পা। কারণ মহামাণ্য রাজি সাইকেল তুলে দিয়েছিলেন তার চাচার পায়ের উপর। অন্য গল্পগুলো তার মুখেই শোনা যাক।
# গ্রামের স্কুলটা কেমন ছিল?
রাজি: প্রাইমারি পড়েছি একদম গ্রামের একটা স্কুলে। বাংলাদেশ সীমান্তের একদম উত্তর পূর্ব কোনের একটা স্কুল। হাই স্কুলও গ্রামের। ১০ টায় স্কুল শুরু হতো। আমরা বেরোতাম ৮ টায়। বৃষ্টি হলে আরো আগে। হেঁটে যেতে হত। বৃষ্টির দিনে মাঠে হতো পানি। যার ফলে শত শত গরু মহিষ হাঁটার জন্য ব্যাবহার করতো কাঁচা রাস্তা। আমরা মাঠ দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম। ক্ষেতের আইল দিয়ে হেঁটে। কারণ রাস্তা দিয়ে হাঁটলে উরু সমান কাদা। আর মাঠ দিয়ে হাটলে হাঁটু সমান কাদা! কোনটা ভালো? তাই আমরা হাঁটতাম মাঠ দিয়ে। গরু হাঁটতো রাস্তা দিয়ে। হোয়াট এ ট্র্যজেডি। তবে আমাদের স্কুলটা দারুন ছিলো। এত গহীনে থেকেও এত ভালো রেজাল্ট হতো যে কয়েকবার সিলেটের সেরা স্কুলের পুরষ্কার পেয়েছে।
# বাহ, দারুন তো। শিক্ষকরা কেমন ছিলেন?
রাজি: শিক্ষক ছিলেন মাত্র ৩ জন । বৃত্তির ক্লাসগুলো ছিলো মজার। আমাদের ১২ জনকে সিলেক্ট করা হয়েছিলো বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য। স্কুলে কারেন্ট ছিলো না। আমরা সন্ধ্যার পরে হাতে লন্ঠন নিয়ে দল বেঁধে আবার স্কুলে যেতাম। স্যাররা সেখানে পড়াতেন কোন পারিশ্রমিক ছাড়া। ১২ জনের মধ্যে আমরা ১১ জনই বৃত্তি পেয়েছিলাম।
# বৃত্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কিরকম?
রাজি: পরীক্ষার দিন হয়েছিলো একটা কাহিনী। পুরো গ্রামের মুরব্বি, আলেম ওলামা একসাথে কোরআন খতম দিয়েছিলেন। আমরা যখন পরীক্ষার হলে ছিলাম তখন তারা খতম দিচ্ছেন। আর নফল নামায পড়ছেন।
# আর হাইস্কুলের অবস্থা কী?
রাজি: হাই স্কুল ছিলো আরো মজার। এতোই ভাব নিয়ে ঘুরতাম যে মনে হতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।
# লেখালেখির শুরু কিভাবে?
রাজি: ক্লাস সিক্সে আমি একটা পারিবারিক পত্রিকা বের করেছিলাম, নাম "ঘরের খবর"। আমিই ছিলাম সম্পাদক, রিপোর্টার, লেখক, সব। পত্রিকা হাতে লিখে ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। এক সংখ্যায় আমার চাচার প্রেম কাহীনি সবিস্তারে লিখেছিলাম। খবরের সাথে তার প্রেম পত্র স্ট্যাপলার মেরে দেয়া হয়েছিলো। পত্রিকায় তার এহেন দুষ্কর্মের কাহিনী প্রকাশের পর চাচাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন দাদা। অন্যদিকে চাচা আমার উপর এমনই খেপেছিলেন যে আমাকে পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো।
# দাদা তোমাকে কিছু বলেননি?
রাজি: দাদা তো সৎ সাংবাদিকতার প্রশংসা করেছিলেন। চাচার অত্যাচারে যখন পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হলো তখন আমার মনে জিদ চাপলো। সত্য প্রকাশে পিছ পা হবো না। "সত্য যতো কঠিন হোক প্রকাশ করো" - আল হাদিস। এটাই আমার মূলমন্ত্র। শুধু বাসায় এসে পরীক্ষার রেজাল্টটা একটু মিথ্যা বলা ছাড়া আমি তেমন কোন মিথ্যা তাই বলি না।
# লেখালেখি কি ‘ঘরের খবর’ দিয়েই শুরু?
রাজি: স্কুল ম্যাগাজিনের দায়িত্ব একবার পড়েছিলো আমার কাঁধে। হেডস্যারকে গিয়ে বললাম, ‘স্যার, ম্যাগাজিনে তো একটা ব্যাপার কমন। সব হেডস্যার খালি বানি দেয়। আমি চাচ্ছি ব্যাতিক্রমি কিছু করতে।‘ স্যার বললেন, "বানি না দিয়ে কি দেবো?" আমি বললাম ‘স্যার যদি একটা ছড়া লিখে দিতেন! আটুল বাটুল শ্যামলা শাটুল টাইপ।’ স্যার এটা শুনে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। এরপর আমাকে আর স্কুল ম্যাগাজিন সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এভাবেই আমার লেখালেখি জীবনে বারবার আঘাত এসেছে।
# হেডস্যার কি ছড়া লিখেছিলেন?
রাজি: নাহ। বাণিই দিয়েছিলেন। ‘আমি জেনে আনন্দিত যে আমাদের স্কুলের ছাত্ররা...আমি সফলতা কামনা করছি’ এইসব।
# সময় কাটাতা কিভাবে? তুমি নিশ্চয়ই এখনকার পোলাপানের মত কম্পিউটারে গেম খেলতা না?
রাজি: উহু। কম্পিউটার তো ইউজ করি দেড় বছর হলো। এর আগে সারাজীবনে কম্পুতে দুইটা টিপও মনে হয় দেইনি। আমাদের স্কুল ছিলো সকাল দশটা থেকে বিকাল ৪ টা। মাঝে ৩০ মিনিট গ্যাপ। আর স্কুল আমার বাড়ি থেকে এতো দূরে ছিলো যে যাওয়া আসা করতে করতেই সময় চলে যেতো। খেলাধুলা হতো বিকেলে। এমন কোন খেলা নাই যেটা হতোনা। জুতা দিয়ে হকি খেলতাম। নরম চামড়ার জুতা, কারো হাতে লাগলেও ব্যাথা পাওয়া যেতো না। কোমর নুইয়ে খেলতে হতো। এটাই যা ঝামেলা। নইলে খেলাটা বেশ মজার। ক্রিকেট ফুটবল মাশ আল্লাহ... সব চলতো।
# নৌকা চালানো, মাছ ধরা এসব কর নাই?
রাজি: একদম ধানের চারা লাগানোর অভিজ্ঞতা আছে। আমার বাড়ির পাশে সারী নদী। নদীর পাশে দেখা যায় উঁচু উঁচু খাশিয়া জৈন্তা পাহাড়। তবে ওই পাহাড়ে ওঠা হয়নি, অন্য পাহাড়ে উঠেছি। সাঁতারে দুর্বল ছিলাম, ফলে কখনোই সাঁতরে নদী পার হতে পারিনি। বন্ধুরা পারতো। আমি প্রায় মাঝ নদী পর্যন্ত যেতে পারতাম। বন্যা হলে মাছ ধরা হতো অনেক। আমাদের ছিলো দুইটা পুকুর। বন্যার সময় পুকুরের ঢালে কোকা (এক প্রকার মাছ ধরার যন্ত্র) বসিয়ে বহুত মাছ ধরেছিলুম।
# সিলেটের বন্যা তো বেশ বিখ্যাত।
রাজি: অনেক বড় বড় বন্যা হতো। একবার বন্যার সময় বাবা অফিস থেকে রাস্তার উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছেন। রাস্তা দিয়ে পানি যাচ্ছে। হঠাৎ একটা স্রোত এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। চারিদিকে পানি আর পানি। সাগর টাইপ অবস্থা। বাবাকে ভাসিয়ে হাওরে নিয়ে গেলো। এতোই স্রোত যে তিনি শুধু ভেসে আছেন। কিন্তু কোন দিকে নিজের ইচ্ছায় যেতে পারছন না। কিছুক্ষন এভাবে ভাসলে তাকে নদীতে ফেলে দিতো। তিনিও খুব ক্লান্ত। এমন সময় কোথা থেকে প্রায় অলৌকিকভাবে একটা ইঞ্জিন নৌকা এসে বাবাকে উদ্ধার করেছিলো। এটা ২০০৭ এর ঘটনা
# ব্লগিং এর শুরুটা কিভাবে? কবে থেকে?
রাজি: ব্লগিং করি মূলত গত এপ্রিল মাস থেকে। যদিও রেজিষ্ট্রেশন করা অনেক আগে থেকেই। শুরুটা হয়েছিলো ইশতিয়াক আহমেদ ভাইয়ের দেয়া একটা লিংক থেকে। তার দেয়া লিংকটা পড়লাম। ভালো লাগলো। এরপর দেখি হাজার হাজার লেখা। ভাবলাম আমিও লেখা শুরু করি। অভ্র দিয়ে শুরু করলাম লেখা।
# কী ধরনের লেখা দিয়ে শুরু করেছিলে?
রাজি: প্রথমে দিতাম দেশ সমাজ অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে সিরিয়াস লেখা। দেখি কেউ পড়ে না। এরপর শুরু করলাম ফাজলামো লেখা। এবার দেখি লোকজন আস্তে আস্তে পড়ছে। আমারও ভাল্লাগ্লো। আমিও কিবোর্ড চালাতে লাগলাম। লোকজন উৎসাহ দিতে শুরু করলো। আমিও মজা পেলাম। রাজনীতিবিদদের পচাইয়্যা কিছু পোস্ট বেশ ভালো জনপ্রিয় হলো। একটা পড়ে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ প্রশংসা করেছিলেন। আমার দারুন লেগেছিলো। সামহোয়্যার ইন ব্লগের সব চেয়ে বেশি পঠিত পোস্টটা মনে হয় আমার লেখা। সব চেয়ে বেশিবার পঠিত গল্পটাও মনে হয় আমার লেখা। এই আরকি!
# ১০২৩৭ মন্তব্য কেমন লাগে?
রাজি: মন্তব্য একেবারে কম না। ভালোই লাগে।এত মন্তব্য পাবো আশা করি নি আসলে। আর মন্তব্যগুলো সব সময় উৎসাহ দেয়।
# সম্প্রতি ভিকারুন্নিসার আন্দোলনের পুরো আপডেট তুমি ব্লগে লাইভ দিয়েছ। হুমকিও পেয়েছ। এ বিষয়ে বল।
রাজি: ঐ ইস্যুতে প্রচলিত মিডিয়াগুলোর অবহেলা ছিলো চোখে পড়ার মতো।ওইদিন ভিকারুননিসার ভেতরে কী হচ্ছিলো কেউই জানতে পারছিলো না। বরং যা জানছিলো ভুল জানছিলো। সৌভাগ্যবশত আমার কাছে একটা সুযোগ চলে আসে ভেতরে কী ঘটছে তা জানার। ভাবলাম, আরো অ্যাকটিভ হলে আরো খবর পাওয়া যাবে। ভেতরে আমার কয়েকজন বড় আপু ছিলেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করলাম।তারাও আমাকে সাহায্য করতে রাজি হলেন। আস্তে আস্তে ব্লগে আপডেট জানাতে থাকলাম। আমি ভেতরের একটা খবর পেয়ে সেটা নিশ্চিত হতে একটুই সময় নিতাম। কয়েক জায়গায় ফোন করে তারপর ব্লগে। এভাবেই চালিয়ে গিয়েছিলাম।মূল কৃতিত্বটা কয়েকজন অতি ভালো আপুর।
# আর হুমকির কৃতিত্বটা কার?
রাজি: প্রসঙ্গক্রমেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলেছিলাম। যার ফলে mor midding নামের একটা অ্যাকাউন্ট থেকে হুমকি দিয়েছিলো ফেসবুকে। আধা ঘন্টার ভেতরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লেখা লাইন না মুছলে আমার নাকি খবর আছে! কিন্তু আধা মাসের বেশি চলে গেলো। আমার তো কিছুই হলো না।
# বোঝাই যাচ্ছে সাংবাদিকরা কোন খবর করতে পারেন না। রস আলোর শুরুটা কিভাবে?
রাজি: গত মার্চে সিমু ভাইকে ফোন দিলাম। সামাজিক সৌজন্য ফোন আরকি। সিমু ভাই আমার সামাজিক সোজন্যের ধার ধারলেন না। বললেন, "ওই মিয়া, ব্লগে আর কতো! তোমার 'মরার পরে যদি পোস্ট দেয়া যেতো' সহ আরো কয়েকটা লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো। তোমার সেন্স ভালো। আমরা বিশ্বাকাপ ক্রিকেট নিয়ে একটা বের করছি। লেখা পাঠাও। নাইলে..." আমি ভয়ে ভয়ে একটা লেখা লিখে পাঠালাম, "রাজিনীতিবিদ যখন ক্রিকেটার" দেখি ছাপা হয়ে গেলো। এরপর আমিও মাঝে মাঝে লেখা পাঠাই। নিজের ইচ্ছায় কিংবা সিমু ভাইয়ের ধমকে। এভাবেই চলছে।
# আর কোথাও লেখ নাই?
রাজি: ২/৩ বছর আগে যুগান্তরের বিচ্ছুতে ৩/৪ টা লেখা ছাপা হয়েছিলো। এরপর আর লেখা পাঠাই নি। পোস্ট অফিসে গিয়ে লেখা পাঠানো কষ্টের কাজ।
# তোমাকে নিয়ে তোমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা কী? লেখালেখি নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
রাজি: আমি বাবা-মার একমাত্র ছেলে তো! তাদের ইচ্ছা বহুমুখী। তারা চান আমি একই সাথে MBBS আর LAW দুইটাই পড়ি। আমার ধারনা MBBS শেষ হলে তারা আমাকে জোর করে ল পড়াবেন। লেখালেখি নিয়ে তারা টেনশনে থাকেন। রস আলো-তে প্রেম বিষয়ক লেখাগুলো ছাপা হওয়ার পর বাবা আমার উপর নজরদারী জোরদার করেছেন।
# পরিবারের সদস্যরা তোমাকে কী ভাবে?
রাজি: বলদ ভাবে(এইটা অফ দ্যা রেকর্ড)।ভাবে কোন কাজেরই না। ভাবে এইটা শুধু ফাইজলামী জানে সিরিয়াস কাজে ঠন ঠন।
# তোমার নিজের ধারণা কেমন?
রাজি: আমি যে কত বড় সেয়ানা এইটা যদি ফ্যামিলির লোকজন বুঝতো! তারা আমার সম্পর্কে কিছুই জানে না
# বন্ধুরা কী ভাবে? তুমিই বা কী ভাবো?
রাজি: বন্ধুরা আমাকে বিচিত্র কারনে অতি পছন্দ করে। আমিও তাদেরকে পছন্দ করি। আমার বন্ধু ভাগ্য পৃথিবীর সবার চেয়ে ভালো। আমার নিজের ধারনা, আমি ভালো মানুষ। সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে কাউকে কখনো কষ্ট দেইনি মনে হয়। দেবও না আশা করি। জীবনে মিথ্যা বলেছি খুব কম। যতবারই বলেছি ততবারই ধরা পড়ে গেছি।
# ছোটবেলায় কী হইতে চেয়েছিলে?
রাজি: এক সময় হতে চাইতাম লাইব্রেরির মালিক। যার ফলে গল্পের বই আর কিনে পড়তে হতো না এক সময় হতে চাইতাম RAB। তাদেরকে দেখে ভাল্লাগতো। কালো জিনিসপত্র নিয়ে ঘোরে। দেখলে সমীহ জাগে, তাই।
# প্রচুর বই তো নিশ্চই পড়, প্রিয় লেখক কারা?
রাজি: হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, রবী বাবু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আইজাক আজিমভ। এমনকি কাশেম বিন আবু বকরের সব বইও পড়েছিলাম। তিন গোয়ান্দা, মাসুদ রানা, হরর গল্প, অভিজিত রায়, এসব পড়তেও ভাল্লাগে। গান শুনি প্রচুর। দিনের একটা বড় অংশ কাটে গান শুনে।
# বাহ, সব ধরনের বই-ই তো পড় দেখছি।
রাজি: জ্বি। ক্লাস নাইনের একটা কাহিনী বলি। পাঠ্যবইয়ের নিচে লুকিয়ে ঢাউশ সাইজের আরেকটা বই পড়ছি। মা টের পেয়ে গেলেন। বললেন কি পড়িস? দেখা। আমি মুখে পর্যাপ্ত পরিমান হাসি এনে বললাম, ‘সামাজিক বিজ্ঞান’। মা বিশ্বাস করলেন না। আমি বই লুকানোর চেষ্টা করলাম। মা কে চিঁ চিঁ করে বলছি, ‘আরে আমি সামাজিক বিজ্ঞান পড়ছি।’ মা আক্রমনাত্মক হয়ে আমার গেঞ্জির ভেতর থেকে বইটা বের করলেন। বেরিয়ে এলো ‘স্বামী স্ত্রীর মধুর মিলন’ বইটি। এই আর কি!
# তারপরের ইতিহাস না বললেও চলবে, বুঝে নিলাম। কিন্তু এই বই পড়ার আগ্রহ হল কেন?
রাজি: এমনি। জানার কি কোন শেষ আছে?
# টিভি দেখ?
রাজি: আগে দেখতাম না। গত এক/দেড় বছরে সেই অভ্যাস কিছুটা বদলেছে। ডিস্কভারিতে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড আমার খুব ফেভারিট। নাটক ফাটক ছবি টবি জাস্ট ইয়াক! টিভি কম দেখার পেছনে জাফর ইকবাল স্যারের প্রভাব রয়েছে।
# জাফর ইকবালের সঙ্গে তোমার তোমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এটা নিয়ে কিছু বল।
রাজি: স্যারকে আমি যেমন পছন্দ করি, স্যারও আমাকে স্নেহ করেন। মেইল চালাচালি হয়। কথা হয়। স্যার ইজ স্যার! আর কোন কথা নাই।
# স্যার টিভি দেখেন না বলেই কি তুমি টিভি দেখ না?
রাজি: অনেকটা তাই। তাছাড়া আমার এই ব্যাপারে ধৈর্য্য কম। স্যারের সাথে আমার মিল আছে। স্যারও ঢেঁড়শ ভাজি খেতে পারেন না। আমিও খাই না। মানে আমিও খেতে পারি না।
# বাহ, আমিও খাই না। খাবারের প্রসঙ্গ যখন এসেই গেল তখন তো এ বিষয়ে কিছু না বলাটা খারাপ দেখায়। কি খেতে ভালোবাসো?
রাজি: মুরগী ভাল্লাগে। ভাল্লাগে সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস। সিলেটের একটা খবার আছে "শুটকি হুরু"। এটা আমার দারুন লাগে। ফ্রিজ থেকে বোতলে পর বোতল ফ্রুটিকা খেয়ে শেষ করার ব্যাপারে আমার সুনাম আছে।
# এই দেশের কিছু হবে না- এই কথা শুনলে তোমার কি মনে হয়?
রাজি: আমি পর্যাপ্ত পরিমান গাম্ভির্য নিয়ে মাথা ঝাঁকাই। দেখি কে বললো কথাটা। যদি এমন কেউ হয় যে দ্বিমত করলে চোখ মটমট করে তাকাবে তাহলে চুপ থাকি। আর যদি বন্ধু বান্ধবী বা জুনিয়র কেউ হয় তাহলে "তার খবর আছে"।
# তোমার স্বপ্ন নিয়ে কিছু বল।
রাজি: স্বপ্ন নিয়ে সাম্প্রতিক লেকচারটা হলো ‘স্বপ্নে হেঁটে কেবল ক্লান্ত হওয়া যায়। তবে পথ পেরুনো যায়না একটুও।’ একটা স্বপ্ন হলো, একদিন গোলাম আযমদের থাপ্পড় মারতে পারবো। আর ক্যারিয়ার নিয়ে কিছু স্বপ্ন তো আছেই।
# পড়ালেখা শেষ করে কি ঢাকায় আসবা?
রাজি: নাহ। সিলেটেই থাকবো। সিলেটেই জন্ম সিলেটেই মৃত্যু। সিলেটেই চেম্বার।
# অধিকাংশ ডাক্তারদের হাতের লেখা বোঝা যায় না, তোমার অবস্থা কী?
রাজি: আমার হাতের লেখা সম্পর্কে আমি কিভাবে বলবো! তবে আমার ধারনা "বোধগম্য"।
# স্কুলের সেই হেডস্যারের মত কোন বাণি দাও। শুধু ‘হেড’ রাই বাণি দেবেন এমন কোন কথা নাই। ফেসবুক নিয়েও বাণি দিতে পার।
রাজি: ফেসবুক আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে। একটি ফটো ট্যাগ আপনাকে আনন্দে ভাসিয়ে নেয়ার সূচনা করতে পারে। আবার অনেক কষ্টে ভাসিয়ে দেবার সূচনাও করতে পারে। জাতির উদ্দেশ্যে কিছু বলার নাই। তবে ফান ম্যাগাজিন সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে বলার আছে- ‘বিল রেডি রাইখেন গো’...!
সম্পাদকরা বিল রেডি রাখবেন, আর রাজির শুভাকাঙ্খীরা রেডি রাখবেন কিল। কারণ বারবার বলার পরও নাকি সে ঢাকায় আসে না। ঢাকায় আসলে কত ভালোই না হত। এখন অসুস্থ হলে সেই সিলেটে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে। আফসোস। ফ্রিজ থেকে বোতলের পর বোতল ফ্রুটিকা খাওয়ার কারণেই হয়তো ছেলেটা মিথ্যা কথা খুব বেশি বলতে পারে না। তবে হবু ডাক্তার আলিম আল রাজিকে দেখে শান্ত-শিষ্ট ভদ্র টাইপের ছেলে মনে হলেও ভেতরে ভেতরে যে সে কত বিটলা তা অনেকেই টের পায় না। আশা করি সে তার বিটলামি অব্যাহত রাখবে। কারণ তার বিটলামিগুলাই শুভাকাঙ্খীদের কাছে ভলো লাগে। গল্প শ্যাষ!
প্রচলিত মিডিয়ার প্রতি আমার আস্থা কম। তারা প্রকৃত প্রতিভার দাম দেয় না। তাই, মিডিয়ার উপর ভরসা না করে আমি নিজেই কিবোর্ড হাতে তুলে নিয়েছি।বিকল্প মিডিয়া হিসেবে ফেসবুক আছে না? তাই এই আয়োজন- ‘লাল চা উইথ আদনান মুকিত’। এ আয়োজনে আমরা জানবো বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সম্পর্কে। জানবো তাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা সহ নানা জানা-অজনা তথ্য। আসুন, দেখি কে আছেন আজ আমাদের সঙ্গে।
স্বপ্নে হেঁটে কেবল ক্লান্ত হওয়া যায়। তবে পথ পেরুনো যায়না একটুও: আলিম আল রাজি
ছোট্ট সুন্দর একটা উপজেলা গোয়াইনঘাট। সিলেটের অন্যান্য উপজেলার মতই প্রাকৃতিত শোভায় একেবারে পরিপূর্ণ। অনেক কিছুই ছিল এই উপজেলায়। স্কুল-কলেজ তো ছিলই, তার পাশাপাশি বন্যাদূর্গতদের আশ্রয়ের জন্য ছিল ফ্লাড সেন্টার। কিন্তু কোন বন্যা ছিল না। তাই ওই ফ্লাড সেন্টারকে সরকারী কোয়ার্টার বানিয়ে ফেলেছিল সরকার। তারপর ১৯৯১ সালের ১৭ নভেন্মর বন্যা এলো। তবে বর্ষার বন্যা নয়, আনন্দের বন্যা। আর হবে না কেন? সেই কোয়ার্টারেরই এক বাড়িতে জন্মেছিলেন ব্লগের নিয়মিত এবং রস+আলোর অনিয়মিত লেখক আলিম আল রাজি। সরকারি চাকরির সুবাদে কোয়ার্টার পেয়েছিলেন রাজির নানা। ওই সময় বাবার বাড়িতেই ছিলেন রাজির মা। ঐতিহাসিক ১৭ নভেম্বরে পুরো ফ্লাড সেন্টার এলাকাকে আনন্দের ফ্লাডে ভাসিয়েছিলেন রাজি। তবে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সময় দেখা গেল রাজির জন্ম তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। শুধু রাজি নয়, ক্লাসের ৭৬ জনেরই জন্ম তারিখ এক, ৩১ ডিসেম্বর। স্কুলের শিক্ষক ছিলেন একতায় বিশ্বাসী। তাই হয়তো সবার জন্মতারিখ এক করে দিয়েছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই দুষ্টুমিতে দারুন পারদর্শী ছিলেন রাজি। দুষ্টুমি করলে এমনিতেই বাবা-মা নামক দুটি বাধা পেরোতে হয়। কিন্তু যৌথ পরিবারে বড় হওয়ায় রাজিকে পেরোতে হত সাত সমুদ্রের মত সাতটি বাধা। বাবা, মা, তিন চাচা, দাদা, দাদী। তবে তাদের বাধা রুখতে পারেনি রাজিকে। কোন কিছুই একা করতেন না তিনি। এমনকি হাত-পা ভাঙলেও না। সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে রাজির ভাঙলো এক হাত, আর তার চাচার ভাঙলো দুই পা। কারণ মহামাণ্য রাজি সাইকেল তুলে দিয়েছিলেন তার চাচার পায়ের উপর। অন্য গল্পগুলো তার মুখেই শোনা যাক।
# গ্রামের স্কুলটা কেমন ছিল?
রাজি: প্রাইমারি পড়েছি একদম গ্রামের একটা স্কুলে। বাংলাদেশ সীমান্তের একদম উত্তর পূর্ব কোনের একটা স্কুল। হাই স্কুলও গ্রামের। ১০ টায় স্কুল শুরু হতো। আমরা বেরোতাম ৮ টায়। বৃষ্টি হলে আরো আগে। হেঁটে যেতে হত। বৃষ্টির দিনে মাঠে হতো পানি। যার ফলে শত শত গরু মহিষ হাঁটার জন্য ব্যাবহার করতো কাঁচা রাস্তা। আমরা মাঠ দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম। ক্ষেতের আইল দিয়ে হেঁটে। কারণ রাস্তা দিয়ে হাঁটলে উরু সমান কাদা। আর মাঠ দিয়ে হাটলে হাঁটু সমান কাদা! কোনটা ভালো? তাই আমরা হাঁটতাম মাঠ দিয়ে। গরু হাঁটতো রাস্তা দিয়ে। হোয়াট এ ট্র্যজেডি। তবে আমাদের স্কুলটা দারুন ছিলো। এত গহীনে থেকেও এত ভালো রেজাল্ট হতো যে কয়েকবার সিলেটের সেরা স্কুলের পুরষ্কার পেয়েছে।
# বাহ, দারুন তো। শিক্ষকরা কেমন ছিলেন?
রাজি: শিক্ষক ছিলেন মাত্র ৩ জন । বৃত্তির ক্লাসগুলো ছিলো মজার। আমাদের ১২ জনকে সিলেক্ট করা হয়েছিলো বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য। স্কুলে কারেন্ট ছিলো না। আমরা সন্ধ্যার পরে হাতে লন্ঠন নিয়ে দল বেঁধে আবার স্কুলে যেতাম। স্যাররা সেখানে পড়াতেন কোন পারিশ্রমিক ছাড়া। ১২ জনের মধ্যে আমরা ১১ জনই বৃত্তি পেয়েছিলাম।
# বৃত্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কিরকম?
রাজি: পরীক্ষার দিন হয়েছিলো একটা কাহিনী। পুরো গ্রামের মুরব্বি, আলেম ওলামা একসাথে কোরআন খতম দিয়েছিলেন। আমরা যখন পরীক্ষার হলে ছিলাম তখন তারা খতম দিচ্ছেন। আর নফল নামায পড়ছেন।
# আর হাইস্কুলের অবস্থা কী?
রাজি: হাই স্কুল ছিলো আরো মজার। এতোই ভাব নিয়ে ঘুরতাম যে মনে হতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।
# লেখালেখির শুরু কিভাবে?
রাজি: ক্লাস সিক্সে আমি একটা পারিবারিক পত্রিকা বের করেছিলাম, নাম "ঘরের খবর"। আমিই ছিলাম সম্পাদক, রিপোর্টার, লেখক, সব। পত্রিকা হাতে লিখে ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। এক সংখ্যায় আমার চাচার প্রেম কাহীনি সবিস্তারে লিখেছিলাম। খবরের সাথে তার প্রেম পত্র স্ট্যাপলার মেরে দেয়া হয়েছিলো। পত্রিকায় তার এহেন দুষ্কর্মের কাহিনী প্রকাশের পর চাচাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন দাদা। অন্যদিকে চাচা আমার উপর এমনই খেপেছিলেন যে আমাকে পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো।
# দাদা তোমাকে কিছু বলেননি?
রাজি: দাদা তো সৎ সাংবাদিকতার প্রশংসা করেছিলেন। চাচার অত্যাচারে যখন পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হলো তখন আমার মনে জিদ চাপলো। সত্য প্রকাশে পিছ পা হবো না। "সত্য যতো কঠিন হোক প্রকাশ করো" - আল হাদিস। এটাই আমার মূলমন্ত্র। শুধু বাসায় এসে পরীক্ষার রেজাল্টটা একটু মিথ্যা বলা ছাড়া আমি তেমন কোন মিথ্যা তাই বলি না।
# লেখালেখি কি ‘ঘরের খবর’ দিয়েই শুরু?
রাজি: স্কুল ম্যাগাজিনের দায়িত্ব একবার পড়েছিলো আমার কাঁধে। হেডস্যারকে গিয়ে বললাম, ‘স্যার, ম্যাগাজিনে তো একটা ব্যাপার কমন। সব হেডস্যার খালি বানি দেয়। আমি চাচ্ছি ব্যাতিক্রমি কিছু করতে।‘ স্যার বললেন, "বানি না দিয়ে কি দেবো?" আমি বললাম ‘স্যার যদি একটা ছড়া লিখে দিতেন! আটুল বাটুল শ্যামলা শাটুল টাইপ।’ স্যার এটা শুনে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। এরপর আমাকে আর স্কুল ম্যাগাজিন সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এভাবেই আমার লেখালেখি জীবনে বারবার আঘাত এসেছে।
# হেডস্যার কি ছড়া লিখেছিলেন?
রাজি: নাহ। বাণিই দিয়েছিলেন। ‘আমি জেনে আনন্দিত যে আমাদের স্কুলের ছাত্ররা...আমি সফলতা কামনা করছি’ এইসব।
# সময় কাটাতা কিভাবে? তুমি নিশ্চয়ই এখনকার পোলাপানের মত কম্পিউটারে গেম খেলতা না?
রাজি: উহু। কম্পিউটার তো ইউজ করি দেড় বছর হলো। এর আগে সারাজীবনে কম্পুতে দুইটা টিপও মনে হয় দেইনি। আমাদের স্কুল ছিলো সকাল দশটা থেকে বিকাল ৪ টা। মাঝে ৩০ মিনিট গ্যাপ। আর স্কুল আমার বাড়ি থেকে এতো দূরে ছিলো যে যাওয়া আসা করতে করতেই সময় চলে যেতো। খেলাধুলা হতো বিকেলে। এমন কোন খেলা নাই যেটা হতোনা। জুতা দিয়ে হকি খেলতাম। নরম চামড়ার জুতা, কারো হাতে লাগলেও ব্যাথা পাওয়া যেতো না। কোমর নুইয়ে খেলতে হতো। এটাই যা ঝামেলা। নইলে খেলাটা বেশ মজার। ক্রিকেট ফুটবল মাশ আল্লাহ... সব চলতো।
# নৌকা চালানো, মাছ ধরা এসব কর নাই?
রাজি: একদম ধানের চারা লাগানোর অভিজ্ঞতা আছে। আমার বাড়ির পাশে সারী নদী। নদীর পাশে দেখা যায় উঁচু উঁচু খাশিয়া জৈন্তা পাহাড়। তবে ওই পাহাড়ে ওঠা হয়নি, অন্য পাহাড়ে উঠেছি। সাঁতারে দুর্বল ছিলাম, ফলে কখনোই সাঁতরে নদী পার হতে পারিনি। বন্ধুরা পারতো। আমি প্রায় মাঝ নদী পর্যন্ত যেতে পারতাম। বন্যা হলে মাছ ধরা হতো অনেক। আমাদের ছিলো দুইটা পুকুর। বন্যার সময় পুকুরের ঢালে কোকা (এক প্রকার মাছ ধরার যন্ত্র) বসিয়ে বহুত মাছ ধরেছিলুম।
# সিলেটের বন্যা তো বেশ বিখ্যাত।
রাজি: অনেক বড় বড় বন্যা হতো। একবার বন্যার সময় বাবা অফিস থেকে রাস্তার উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছেন। রাস্তা দিয়ে পানি যাচ্ছে। হঠাৎ একটা স্রোত এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। চারিদিকে পানি আর পানি। সাগর টাইপ অবস্থা। বাবাকে ভাসিয়ে হাওরে নিয়ে গেলো। এতোই স্রোত যে তিনি শুধু ভেসে আছেন। কিন্তু কোন দিকে নিজের ইচ্ছায় যেতে পারছন না। কিছুক্ষন এভাবে ভাসলে তাকে নদীতে ফেলে দিতো। তিনিও খুব ক্লান্ত। এমন সময় কোথা থেকে প্রায় অলৌকিকভাবে একটা ইঞ্জিন নৌকা এসে বাবাকে উদ্ধার করেছিলো। এটা ২০০৭ এর ঘটনা
# ব্লগিং এর শুরুটা কিভাবে? কবে থেকে?
রাজি: ব্লগিং করি মূলত গত এপ্রিল মাস থেকে। যদিও রেজিষ্ট্রেশন করা অনেক আগে থেকেই। শুরুটা হয়েছিলো ইশতিয়াক আহমেদ ভাইয়ের দেয়া একটা লিংক থেকে। তার দেয়া লিংকটা পড়লাম। ভালো লাগলো। এরপর দেখি হাজার হাজার লেখা। ভাবলাম আমিও লেখা শুরু করি। অভ্র দিয়ে শুরু করলাম লেখা।
# কী ধরনের লেখা দিয়ে শুরু করেছিলে?
রাজি: প্রথমে দিতাম দেশ সমাজ অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে সিরিয়াস লেখা। দেখি কেউ পড়ে না। এরপর শুরু করলাম ফাজলামো লেখা। এবার দেখি লোকজন আস্তে আস্তে পড়ছে। আমারও ভাল্লাগ্লো। আমিও কিবোর্ড চালাতে লাগলাম। লোকজন উৎসাহ দিতে শুরু করলো। আমিও মজা পেলাম। রাজনীতিবিদদের পচাইয়্যা কিছু পোস্ট বেশ ভালো জনপ্রিয় হলো। একটা পড়ে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ প্রশংসা করেছিলেন। আমার দারুন লেগেছিলো। সামহোয়্যার ইন ব্লগের সব চেয়ে বেশি পঠিত পোস্টটা মনে হয় আমার লেখা। সব চেয়ে বেশিবার পঠিত গল্পটাও মনে হয় আমার লেখা। এই আরকি!
# ১০২৩৭ মন্তব্য কেমন লাগে?
রাজি: মন্তব্য একেবারে কম না। ভালোই লাগে।এত মন্তব্য পাবো আশা করি নি আসলে। আর মন্তব্যগুলো সব সময় উৎসাহ দেয়।
# সম্প্রতি ভিকারুন্নিসার আন্দোলনের পুরো আপডেট তুমি ব্লগে লাইভ দিয়েছ। হুমকিও পেয়েছ। এ বিষয়ে বল।
রাজি: ঐ ইস্যুতে প্রচলিত মিডিয়াগুলোর অবহেলা ছিলো চোখে পড়ার মতো।ওইদিন ভিকারুননিসার ভেতরে কী হচ্ছিলো কেউই জানতে পারছিলো না। বরং যা জানছিলো ভুল জানছিলো। সৌভাগ্যবশত আমার কাছে একটা সুযোগ চলে আসে ভেতরে কী ঘটছে তা জানার। ভাবলাম, আরো অ্যাকটিভ হলে আরো খবর পাওয়া যাবে। ভেতরে আমার কয়েকজন বড় আপু ছিলেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করলাম।তারাও আমাকে সাহায্য করতে রাজি হলেন। আস্তে আস্তে ব্লগে আপডেট জানাতে থাকলাম। আমি ভেতরের একটা খবর পেয়ে সেটা নিশ্চিত হতে একটুই সময় নিতাম। কয়েক জায়গায় ফোন করে তারপর ব্লগে। এভাবেই চালিয়ে গিয়েছিলাম।মূল কৃতিত্বটা কয়েকজন অতি ভালো আপুর।
# আর হুমকির কৃতিত্বটা কার?
রাজি: প্রসঙ্গক্রমেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলেছিলাম। যার ফলে mor midding নামের একটা অ্যাকাউন্ট থেকে হুমকি দিয়েছিলো ফেসবুকে। আধা ঘন্টার ভেতরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লেখা লাইন না মুছলে আমার নাকি খবর আছে! কিন্তু আধা মাসের বেশি চলে গেলো। আমার তো কিছুই হলো না।
# বোঝাই যাচ্ছে সাংবাদিকরা কোন খবর করতে পারেন না। রস আলোর শুরুটা কিভাবে?
রাজি: গত মার্চে সিমু ভাইকে ফোন দিলাম। সামাজিক সৌজন্য ফোন আরকি। সিমু ভাই আমার সামাজিক সোজন্যের ধার ধারলেন না। বললেন, "ওই মিয়া, ব্লগে আর কতো! তোমার 'মরার পরে যদি পোস্ট দেয়া যেতো' সহ আরো কয়েকটা লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো। তোমার সেন্স ভালো। আমরা বিশ্বাকাপ ক্রিকেট নিয়ে একটা বের করছি। লেখা পাঠাও। নাইলে..." আমি ভয়ে ভয়ে একটা লেখা লিখে পাঠালাম, "রাজিনীতিবিদ যখন ক্রিকেটার" দেখি ছাপা হয়ে গেলো। এরপর আমিও মাঝে মাঝে লেখা পাঠাই। নিজের ইচ্ছায় কিংবা সিমু ভাইয়ের ধমকে। এভাবেই চলছে।
# আর কোথাও লেখ নাই?
রাজি: ২/৩ বছর আগে যুগান্তরের বিচ্ছুতে ৩/৪ টা লেখা ছাপা হয়েছিলো। এরপর আর লেখা পাঠাই নি। পোস্ট অফিসে গিয়ে লেখা পাঠানো কষ্টের কাজ।
# তোমাকে নিয়ে তোমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা কী? লেখালেখি নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
রাজি: আমি বাবা-মার একমাত্র ছেলে তো! তাদের ইচ্ছা বহুমুখী। তারা চান আমি একই সাথে MBBS আর LAW দুইটাই পড়ি। আমার ধারনা MBBS শেষ হলে তারা আমাকে জোর করে ল পড়াবেন। লেখালেখি নিয়ে তারা টেনশনে থাকেন। রস আলো-তে প্রেম বিষয়ক লেখাগুলো ছাপা হওয়ার পর বাবা আমার উপর নজরদারী জোরদার করেছেন।
# পরিবারের সদস্যরা তোমাকে কী ভাবে?
রাজি: বলদ ভাবে(এইটা অফ দ্যা রেকর্ড)।ভাবে কোন কাজেরই না। ভাবে এইটা শুধু ফাইজলামী জানে সিরিয়াস কাজে ঠন ঠন।
# তোমার নিজের ধারণা কেমন?
রাজি: আমি যে কত বড় সেয়ানা এইটা যদি ফ্যামিলির লোকজন বুঝতো! তারা আমার সম্পর্কে কিছুই জানে না
# বন্ধুরা কী ভাবে? তুমিই বা কী ভাবো?
রাজি: বন্ধুরা আমাকে বিচিত্র কারনে অতি পছন্দ করে। আমিও তাদেরকে পছন্দ করি। আমার বন্ধু ভাগ্য পৃথিবীর সবার চেয়ে ভালো। আমার নিজের ধারনা, আমি ভালো মানুষ। সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে কাউকে কখনো কষ্ট দেইনি মনে হয়। দেবও না আশা করি। জীবনে মিথ্যা বলেছি খুব কম। যতবারই বলেছি ততবারই ধরা পড়ে গেছি।
# ছোটবেলায় কী হইতে চেয়েছিলে?
রাজি: এক সময় হতে চাইতাম লাইব্রেরির মালিক। যার ফলে গল্পের বই আর কিনে পড়তে হতো না এক সময় হতে চাইতাম RAB। তাদেরকে দেখে ভাল্লাগতো। কালো জিনিসপত্র নিয়ে ঘোরে। দেখলে সমীহ জাগে, তাই।
# প্রচুর বই তো নিশ্চই পড়, প্রিয় লেখক কারা?
রাজি: হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, রবী বাবু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আইজাক আজিমভ। এমনকি কাশেম বিন আবু বকরের সব বইও পড়েছিলাম। তিন গোয়ান্দা, মাসুদ রানা, হরর গল্প, অভিজিত রায়, এসব পড়তেও ভাল্লাগে। গান শুনি প্রচুর। দিনের একটা বড় অংশ কাটে গান শুনে।
# বাহ, সব ধরনের বই-ই তো পড় দেখছি।
রাজি: জ্বি। ক্লাস নাইনের একটা কাহিনী বলি। পাঠ্যবইয়ের নিচে লুকিয়ে ঢাউশ সাইজের আরেকটা বই পড়ছি। মা টের পেয়ে গেলেন। বললেন কি পড়িস? দেখা। আমি মুখে পর্যাপ্ত পরিমান হাসি এনে বললাম, ‘সামাজিক বিজ্ঞান’। মা বিশ্বাস করলেন না। আমি বই লুকানোর চেষ্টা করলাম। মা কে চিঁ চিঁ করে বলছি, ‘আরে আমি সামাজিক বিজ্ঞান পড়ছি।’ মা আক্রমনাত্মক হয়ে আমার গেঞ্জির ভেতর থেকে বইটা বের করলেন। বেরিয়ে এলো ‘স্বামী স্ত্রীর মধুর মিলন’ বইটি। এই আর কি!
# তারপরের ইতিহাস না বললেও চলবে, বুঝে নিলাম। কিন্তু এই বই পড়ার আগ্রহ হল কেন?
রাজি: এমনি। জানার কি কোন শেষ আছে?
# টিভি দেখ?
রাজি: আগে দেখতাম না। গত এক/দেড় বছরে সেই অভ্যাস কিছুটা বদলেছে। ডিস্কভারিতে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড আমার খুব ফেভারিট। নাটক ফাটক ছবি টবি জাস্ট ইয়াক! টিভি কম দেখার পেছনে জাফর ইকবাল স্যারের প্রভাব রয়েছে।
# জাফর ইকবালের সঙ্গে তোমার তোমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এটা নিয়ে কিছু বল।
রাজি: স্যারকে আমি যেমন পছন্দ করি, স্যারও আমাকে স্নেহ করেন। মেইল চালাচালি হয়। কথা হয়। স্যার ইজ স্যার! আর কোন কথা নাই।
# স্যার টিভি দেখেন না বলেই কি তুমি টিভি দেখ না?
রাজি: অনেকটা তাই। তাছাড়া আমার এই ব্যাপারে ধৈর্য্য কম। স্যারের সাথে আমার মিল আছে। স্যারও ঢেঁড়শ ভাজি খেতে পারেন না। আমিও খাই না। মানে আমিও খেতে পারি না।
# বাহ, আমিও খাই না। খাবারের প্রসঙ্গ যখন এসেই গেল তখন তো এ বিষয়ে কিছু না বলাটা খারাপ দেখায়। কি খেতে ভালোবাসো?
রাজি: মুরগী ভাল্লাগে। ভাল্লাগে সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস। সিলেটের একটা খবার আছে "শুটকি হুরু"। এটা আমার দারুন লাগে। ফ্রিজ থেকে বোতলে পর বোতল ফ্রুটিকা খেয়ে শেষ করার ব্যাপারে আমার সুনাম আছে।
# এই দেশের কিছু হবে না- এই কথা শুনলে তোমার কি মনে হয়?
রাজি: আমি পর্যাপ্ত পরিমান গাম্ভির্য নিয়ে মাথা ঝাঁকাই। দেখি কে বললো কথাটা। যদি এমন কেউ হয় যে দ্বিমত করলে চোখ মটমট করে তাকাবে তাহলে চুপ থাকি। আর যদি বন্ধু বান্ধবী বা জুনিয়র কেউ হয় তাহলে "তার খবর আছে"।
# তোমার স্বপ্ন নিয়ে কিছু বল।
রাজি: স্বপ্ন নিয়ে সাম্প্রতিক লেকচারটা হলো ‘স্বপ্নে হেঁটে কেবল ক্লান্ত হওয়া যায়। তবে পথ পেরুনো যায়না একটুও।’ একটা স্বপ্ন হলো, একদিন গোলাম আযমদের থাপ্পড় মারতে পারবো। আর ক্যারিয়ার নিয়ে কিছু স্বপ্ন তো আছেই।
# পড়ালেখা শেষ করে কি ঢাকায় আসবা?
রাজি: নাহ। সিলেটেই থাকবো। সিলেটেই জন্ম সিলেটেই মৃত্যু। সিলেটেই চেম্বার।
# অধিকাংশ ডাক্তারদের হাতের লেখা বোঝা যায় না, তোমার অবস্থা কী?
রাজি: আমার হাতের লেখা সম্পর্কে আমি কিভাবে বলবো! তবে আমার ধারনা "বোধগম্য"।
# স্কুলের সেই হেডস্যারের মত কোন বাণি দাও। শুধু ‘হেড’ রাই বাণি দেবেন এমন কোন কথা নাই। ফেসবুক নিয়েও বাণি দিতে পার।
রাজি: ফেসবুক আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে। একটি ফটো ট্যাগ আপনাকে আনন্দে ভাসিয়ে নেয়ার সূচনা করতে পারে। আবার অনেক কষ্টে ভাসিয়ে দেবার সূচনাও করতে পারে। জাতির উদ্দেশ্যে কিছু বলার নাই। তবে ফান ম্যাগাজিন সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে বলার আছে- ‘বিল রেডি রাইখেন গো’...!
সম্পাদকরা বিল রেডি রাখবেন, আর রাজির শুভাকাঙ্খীরা রেডি রাখবেন কিল। কারণ বারবার বলার পরও নাকি সে ঢাকায় আসে না। ঢাকায় আসলে কত ভালোই না হত। এখন অসুস্থ হলে সেই সিলেটে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে। আফসোস। ফ্রিজ থেকে বোতলের পর বোতল ফ্রুটিকা খাওয়ার কারণেই হয়তো ছেলেটা মিথ্যা কথা খুব বেশি বলতে পারে না। তবে হবু ডাক্তার আলিম আল রাজিকে দেখে শান্ত-শিষ্ট ভদ্র টাইপের ছেলে মনে হলেও ভেতরে ভেতরে যে সে কত বিটলা তা অনেকেই টের পায় না। আশা করি সে তার বিটলামি অব্যাহত রাখবে। কারণ তার বিটলামিগুলাই শুভাকাঙ্খীদের কাছে ভলো লাগে। গল্প শ্যাষ!
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।