ভুমিকাঃ মানুষের জীবনে বৈচিত্রের প্রয়োজন আছে। আর সব চেয়ে বেশি বৈচিত্র আনতে পারে একটা ভ্রমন। কিন্তু ব্যাস্ততার কারনে ভ্রমন হয় না আজকাল।
কিছুদিন আগে কলেজ বন্ধ ছিলো। এক বন্ধু চিঠি লিখে বললো ঢাকা গিয়ে ঘুরে আসতে। আমার হাতে যেহেতু সময় আছে সেহেতু ভাবলাম ঘুরে আসা যায়।
যাত্রার শুরুঃ নিদৃষ্ট দিনে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে। টিকিট কাটলাম। কেটে আমার আসন গ্রহন করলাম। কিছুক্ষন পর বাস ছাড়লো। জানালার পাশে আসন থাকায় আমার দারুন লাগছিলো।
চারপাশের দৃশ্যঃ আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে চারপাশের দৃশ্যে দেখতে লাগলাম। কিন্তু দেখার মতো কিছুই পেলাম না। একটু পর ভাঙ্গা এবড়ো থেবড়ো রাস্তা ছাড়া আমার চোখে কিছুই পড়লো না। আমি মহা বিরক্তি নিয়ে সিটেই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
একটু পর অবস্থা আরো কেরোসিন হয়ে গেলো। বাস পড়লো ইয়া লম্বা এক জ্যামে। গরমের দিন, তার উপর এই জ্যাম। আমার গা থেকে ঘাম বেরুতে থাকলো। আমি টিস্যু দিয়ে ঘাম মোছার চেষ্টা করলাম।
জ্যাম-এর পরঃ জ্যাম শেষ হলো। এবার বাস চলা শুরু করলো। ও খোদা! এ তো চলা নয়। বাস যেনো উড়াল দিচ্ছে। সাইসাই করে পার হয়ে যাচ্ছে পথ। এতো গতি দেখে আমি দোয়া ইউনুস পড়া শুরু করলাম।
আরেকটু পরঃ বাস এভাবেই চলছিলো। হঠাৎ… আমি সিট থেকে দেখলাম সামনে থেকে প্রচন্ড গতিতে আসছে এক ট্রাক। সরু রাস্তা। আমাদের গাড়িও চলছে প্রচন্ড জোরে। ড্রাইভার গতি কমানোর চেষ্টা করলো না। ট্রাকের ড্রাইভারও ট্রাক নিয়ে আসতে লাগলো।
দুইটা গাড়ি সামনাসামনি এসে ভয়ংকর গতিতে ধাক্কা খেলো। প্রচন্ড জোরে একটা শব্দ শুনলাম। তারপর শুনলাম কিছু চিৎকার চেচামেচি। আমার মাথাতে কিছু একটা এসে প্রচন্ড জোরে আঘাত করলো। পুরো শরীরে মনে হলো কেউ কয়েক টন ওজন তুলে দিয়েছে। আমি নড়তে চাইলাম। পারলাম না। তারপর আর কিছু মনে নেই।
হাসপাতালঃ জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আমি হাসপাতালে। এক চোখ মেলতে পারছি না। একটু চেতনা ফেরার পর আমার সামনে চলে আসলো এক ঝাক টিভি ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন। সবার আগে প্রশ্ন করলেন মুন্নি সাহা।
- আপনার এখন কেমন লাগছে?
- আছি কোনরকম।
- আপনি যে বাসে ছিলেন সে বাসের সবাই মারা গেছে। শুধু আপনিই বেচে আছেন।
- বলেন কি!
- হ্যা সেটাই।
মুন্নি সাহাকে ঠেলে আরেক সাংবাদিক যায়গা দখল করলেন।
- আচ্ছা বলুন তো দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটলো?
- আমি কি জানি!
- দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থা আজ খুবই নাজুক। ভেঙ্গে পড়েছে অভ্যন্তরীক সড়কগুলোর অবকাঠামোগত দিক। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যবান বয়ান কি?
আমি মুমূর্ষু ব্যাক্তি। তারপরেও কোন রকমে উত্তর দিলাম “জানি না”
রাজনীতিবিদদের ক্ষপ্পরেঃ হঠাৎ পুরো হাসপাতালে হুড়োহুড়ি পড়ে গেলো। বুঝলাম সাংঘাতিক কেউ এসেছেন। আমার ধারনা সত্যি। এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি মুখ পর্যাপ্ত পরিমান বেজার করে আমার বিছানার পাশে দাড়ালেন। আমার কপালে হাত রাখলেন। তারপর টিভি ক্যামেরাকে ইশারা করলেন ছবি তুলতে।
আমার মা বসেছিলেন আমার পাশে। তাকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী কান্না শুরু করলেন।
“স্বজন হারানোর ব্যাথা আমি বুঝি। আজ এই বাস দুর্ঘটনায় আমি অত্যান্ত শোকাহত। আপনার ছেলে বেছে গেছে। এটা তার কপাল। কপালে থাকলে কেউ কাউকে মারতে পারে না। যেমন আমাকে পারেনি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বেচে গেছি। ২১ আগস্ট বেচেছি। এখন গনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি।”
প্রধানমন্ত্রীর কান্না দেখে আমার মাও কেদে ফেললেন।
কিছুক্ষন পর আমার পাশে আসলেন বিরোধী দলিয় নেত্রি বেগম খালেদা জিয়া। টিস্যু দিয়ে লিপিস্টিক ঠিক করতে করতে তিনিও আমার মাথায় হাত রেখে দাড়ালেন। ক্যামেরার আলোতে তখন পুরো কেবিন আলোিত হয়ে গেলো।
এই নেত্রীও গেলেন আমার মায়ের কাছে। জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললেন “আমি আওয়ামিলীগের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে আরো বেশি শোকাহত। দুঃখ করবেন না। আপনার ছেলে বেচে গেছে। এটা তার কপাল। আমার ছেলে দুইটাও বেচে গেছে বাকশালি সরকারের হাত থেকে। আপনার ছেলে আমারও ছেলে”
বেগম জিয়া আমার “আশু রোগমুক্তি” কামনা করে বিদায় নিলেন।
এরপর আসলেন যোগাযোগমন্ত্রী। আমি ভাবেছিলাম তিনিও মনে হয় কপালে হাত রাখবেন। কিন্তু এ কি!
মন্ত্রী সাহেব পুরা ফায়ার। তিনি আমাকে বললেন “তুমি বাসে উঠলা কেনো? হেটে হেটে লংমার্চ করে সিলেট থেকে ঢাকা আসতে পারলা না? ড্রাইভারের কি দোষ? কোন দোষ নাই। এতো মানুষ মরেছে এটাও ব্যাপার না। আল্লাহর মাল আল্লাহয় নিছে। যাই হোক। এবার প্রথম বলে তোমাকে আমি রাষ্ট্রপতির মতো ক্ষমা করে দিলাম। পরের বার যদি শুনি না হেটে বাস দিয়ে সিলেট থেকে ঢাকায় আসছো তাহলে তোমার খবর আছে”
মন্ত্রী আমার মায়ের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার ছেলে ইয়ং। ওকে হাটাহাটি করাবেন। ওকে?”
উপসংহারঃ এভাবে আমার জীবনের স্মরনীয় বাস ভ্রমনটি শেষ হলো।
আপনারা কেউ বাসে চড়বেন না। হাটাহাটি করবেন। হাটাহাটি স্বাস্থের জন্য ভালো।
কিছুদিন আগে কলেজ বন্ধ ছিলো। এক বন্ধু চিঠি লিখে বললো ঢাকা গিয়ে ঘুরে আসতে। আমার হাতে যেহেতু সময় আছে সেহেতু ভাবলাম ঘুরে আসা যায়।
যাত্রার শুরুঃ নিদৃষ্ট দিনে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে। টিকিট কাটলাম। কেটে আমার আসন গ্রহন করলাম। কিছুক্ষন পর বাস ছাড়লো। জানালার পাশে আসন থাকায় আমার দারুন লাগছিলো।
চারপাশের দৃশ্যঃ আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে চারপাশের দৃশ্যে দেখতে লাগলাম। কিন্তু দেখার মতো কিছুই পেলাম না। একটু পর ভাঙ্গা এবড়ো থেবড়ো রাস্তা ছাড়া আমার চোখে কিছুই পড়লো না। আমি মহা বিরক্তি নিয়ে সিটেই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
একটু পর অবস্থা আরো কেরোসিন হয়ে গেলো। বাস পড়লো ইয়া লম্বা এক জ্যামে। গরমের দিন, তার উপর এই জ্যাম। আমার গা থেকে ঘাম বেরুতে থাকলো। আমি টিস্যু দিয়ে ঘাম মোছার চেষ্টা করলাম।
জ্যাম-এর পরঃ জ্যাম শেষ হলো। এবার বাস চলা শুরু করলো। ও খোদা! এ তো চলা নয়। বাস যেনো উড়াল দিচ্ছে। সাইসাই করে পার হয়ে যাচ্ছে পথ। এতো গতি দেখে আমি দোয়া ইউনুস পড়া শুরু করলাম।
আরেকটু পরঃ বাস এভাবেই চলছিলো। হঠাৎ… আমি সিট থেকে দেখলাম সামনে থেকে প্রচন্ড গতিতে আসছে এক ট্রাক। সরু রাস্তা। আমাদের গাড়িও চলছে প্রচন্ড জোরে। ড্রাইভার গতি কমানোর চেষ্টা করলো না। ট্রাকের ড্রাইভারও ট্রাক নিয়ে আসতে লাগলো।
দুইটা গাড়ি সামনাসামনি এসে ভয়ংকর গতিতে ধাক্কা খেলো। প্রচন্ড জোরে একটা শব্দ শুনলাম। তারপর শুনলাম কিছু চিৎকার চেচামেচি। আমার মাথাতে কিছু একটা এসে প্রচন্ড জোরে আঘাত করলো। পুরো শরীরে মনে হলো কেউ কয়েক টন ওজন তুলে দিয়েছে। আমি নড়তে চাইলাম। পারলাম না। তারপর আর কিছু মনে নেই।
হাসপাতালঃ জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আমি হাসপাতালে। এক চোখ মেলতে পারছি না। একটু চেতনা ফেরার পর আমার সামনে চলে আসলো এক ঝাক টিভি ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন। সবার আগে প্রশ্ন করলেন মুন্নি সাহা।
- আপনার এখন কেমন লাগছে?
- আছি কোনরকম।
- আপনি যে বাসে ছিলেন সে বাসের সবাই মারা গেছে। শুধু আপনিই বেচে আছেন।
- বলেন কি!
- হ্যা সেটাই।
মুন্নি সাহাকে ঠেলে আরেক সাংবাদিক যায়গা দখল করলেন।
- আচ্ছা বলুন তো দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটলো?
- আমি কি জানি!
- দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থা আজ খুবই নাজুক। ভেঙ্গে পড়েছে অভ্যন্তরীক সড়কগুলোর অবকাঠামোগত দিক। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যবান বয়ান কি?
আমি মুমূর্ষু ব্যাক্তি। তারপরেও কোন রকমে উত্তর দিলাম “জানি না”
রাজনীতিবিদদের ক্ষপ্পরেঃ হঠাৎ পুরো হাসপাতালে হুড়োহুড়ি পড়ে গেলো। বুঝলাম সাংঘাতিক কেউ এসেছেন। আমার ধারনা সত্যি। এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি মুখ পর্যাপ্ত পরিমান বেজার করে আমার বিছানার পাশে দাড়ালেন। আমার কপালে হাত রাখলেন। তারপর টিভি ক্যামেরাকে ইশারা করলেন ছবি তুলতে।
আমার মা বসেছিলেন আমার পাশে। তাকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী কান্না শুরু করলেন।
“স্বজন হারানোর ব্যাথা আমি বুঝি। আজ এই বাস দুর্ঘটনায় আমি অত্যান্ত শোকাহত। আপনার ছেলে বেছে গেছে। এটা তার কপাল। কপালে থাকলে কেউ কাউকে মারতে পারে না। যেমন আমাকে পারেনি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বেচে গেছি। ২১ আগস্ট বেচেছি। এখন গনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি।”
প্রধানমন্ত্রীর কান্না দেখে আমার মাও কেদে ফেললেন।
কিছুক্ষন পর আমার পাশে আসলেন বিরোধী দলিয় নেত্রি বেগম খালেদা জিয়া। টিস্যু দিয়ে লিপিস্টিক ঠিক করতে করতে তিনিও আমার মাথায় হাত রেখে দাড়ালেন। ক্যামেরার আলোতে তখন পুরো কেবিন আলোিত হয়ে গেলো।
এই নেত্রীও গেলেন আমার মায়ের কাছে। জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললেন “আমি আওয়ামিলীগের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে আরো বেশি শোকাহত। দুঃখ করবেন না। আপনার ছেলে বেচে গেছে। এটা তার কপাল। আমার ছেলে দুইটাও বেচে গেছে বাকশালি সরকারের হাত থেকে। আপনার ছেলে আমারও ছেলে”
বেগম জিয়া আমার “আশু রোগমুক্তি” কামনা করে বিদায় নিলেন।
এরপর আসলেন যোগাযোগমন্ত্রী। আমি ভাবেছিলাম তিনিও মনে হয় কপালে হাত রাখবেন। কিন্তু এ কি!
মন্ত্রী সাহেব পুরা ফায়ার। তিনি আমাকে বললেন “তুমি বাসে উঠলা কেনো? হেটে হেটে লংমার্চ করে সিলেট থেকে ঢাকা আসতে পারলা না? ড্রাইভারের কি দোষ? কোন দোষ নাই। এতো মানুষ মরেছে এটাও ব্যাপার না। আল্লাহর মাল আল্লাহয় নিছে। যাই হোক। এবার প্রথম বলে তোমাকে আমি রাষ্ট্রপতির মতো ক্ষমা করে দিলাম। পরের বার যদি শুনি না হেটে বাস দিয়ে সিলেট থেকে ঢাকায় আসছো তাহলে তোমার খবর আছে”
মন্ত্রী আমার মায়ের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার ছেলে ইয়ং। ওকে হাটাহাটি করাবেন। ওকে?”
উপসংহারঃ এভাবে আমার জীবনের স্মরনীয় বাস ভ্রমনটি শেষ হলো।
আপনারা কেউ বাসে চড়বেন না। হাটাহাটি করবেন। হাটাহাটি স্বাস্থের জন্য ভালো।