রাজনীতিবিদদের বদান্যতায় পেলাম টানা ছয় দিনের ছুটি। ছয় দিন দেশ অচল। দারুন একটা ব্যাপার। রাজপথে মারামারি করবে রাজনৈতিক দলগুলো। আমি অলস মানুষ। ঘরেই বসে থাকবো। ভাবলাম এই ফাকে একটা কাজ করি। আমিও ঘরের মধ্যে আন্দোলন শুরু করি। আমার প্রিয় বাবার কাছে ৬ দিনে ছয় দফা গনতান্ত্রিক দাবী উত্থাপন করবো। দাবীগুলো কি কি তারই একটা খসড়া প্রদান করছেন আলিম আল রাজি
প্রথম দফাঃ বাক স্বাধীনতা
ঘরের মধ্যে কথাই বলা যায় না আজকাল। ভাগ্যের জোরে পেয়েছিলাম একটা প্রেমিকা। বেচারী আমার সাথে কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। কিন্তু বাবার অগনতান্ত্রিক আচরণের জন্য আমি আমার প্রেমিকার সাথে কথা বলতে পারি না। কথা বললেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলে উঠেন “বান্দর থাবড়াইয়্যা তোর দাত ফেলে দেবো। এতো রাতে ফুসুর ফাসুর করে কার সাথে কথা?” তাই আমার প্রথম দাবী হলো বাকস্বাধীনতা দিতে হবে।
দ্বিতীয় দফাঃ মধ্যবর্তী অর্থায়ন
আমি ইয়ং মানুষ। উলটা পালটা কতো কাজ কাম আমার থাকে। মাসে বাবা আমাকে দেন মাত্র কিছু টাকা। যা দিয়ে পুরোটা মাস চালিয়ে দেয়া অতিব কষ্টের কাজ। স্পষ্ঠত এটা মানবাধিকার লংঘন। রাজনৈতিক দলগুলো যেমন মধ্যবর্তী নির্বাচন চায় তেমনি আমি বাবার কাছে চাই মধ্যবর্তী অর্থায়ন।
তৃতীয় দফাঃ অন্তঃবর্তীকালিন বুয়া যোগান দেয়া
বাসায় একটা বুয়া আছে। বেশ ভালো কথা। এই বুয়ার কথা বার্তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। তখন বাসা একলা হলে ঘাম ছুটে যায় আমার। কাপড় ধুয়া, রান্না করা, বাসন মাজা সব কাজ একা করতে হয় আমার। এসবের কোন মানে হয়? আমি ইজ্জতওয়ালা ছেলে। আমার এই বেইজ্জতি আমি কিভাবে মানবো? তাই বাবার কাছে নিবেদন সংকট কালীন অবস্থায় ভালো একটা বুয়ার ব্যাবস্থা করে দিতে হবে।
চতুর্থ দফাঃ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিতে হবে
গত মাসে আমার পকেটে ছিলো ৮ টা ৫০০ টাকার নোট। এই টাকা দিয়ে কতো ভুজং ভাজং করার প্ল্যান আমার ছিলো। কিন্তু আমার কপালটাই খারাপ। যে পকেটে ছিলো টাকা সেই পকেটে ছিলো কলম। কলমের কালী লেগে আমার ৮ টা ৫০০ টাকার নোটই কালো হয়ে গেছে। এগুলো আর এখন চলছে না। বাবাকে টাকা বদলিয়ে দেয়ার কথা বলায় তিনি
বললেন “তোমারে উষ্ঠা দেবো। এতোগুলা টাকা নষ্ট করছো কেনো?” এমতাবস্থায় বাবার কাছে আমার দাবী হলো অতিসত্বর আমার কালো টাকাগুলো নিয়ে সাদা টাকা দিতে হবে।
পঞ্চম দফাঃ ডায়নিং টেবিলে বসার সুযোগ দিতে হবে
আমি এমনিতে অতি ভালো ছেলে। সভ্য ছেলে। মাঝে মাঝে একটু মাথাটা ক্র্যাক করে ফেলে। যার ফলে প্রায়ই ডায়নিং টেবিল থেকে আমার হাত ফষ্কে গ্লাস প্লেট ইত্যাদি পড়ে ভেঙ্গে যায়। এই কারনে আমাকে ফ্লোরে খেতে দেয়া হয়। এটা আমার
জন্য অপমানজনক। এই কারণে আমার পঞ্চম দাবী হলো আমাকে ডায়নিং টেবিলে বসার সুযোগ দিন। না হলে রাজপথে চলে যেতে বাধ্য হবো।
ষষ্ঠ দফাঃ সহনশীল আচরণ করতে হবে
আমি এতো বড় একটা ছেলে। আমার একটা ইজ্জত আছে। মাঝে মাঝে দুষ্টামি আমি করতেই পারি। কিন্তু এতে কেনো আমার লাঠিপেটা করা হবে? কেনো কান মলে দেয়া হবে? এটা কিরকম গনতান্ত্রিক আচরণ। তাই আমি সর্বশেষ দাবী হলো আমার সাথে সহনশীল আচরণ করতে হবে।
লেখাটি আজকের যুগান্তরে প্রকাশিত।
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।