আলিম আল রাজি 'র হ-য-ব-র-ল মার্কা ব্লগ

স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো বই পড়ার সময় সাবধান। ছাপার ভুলের কারণে আপনার মৃত্যু হতে পারে। মার্ক টোয়েন, সাহিত্যিক।। আমি সব সময়ই বিখ্যাত ছিলাম, কিন্তু এত দিন সবাই জানত না। লেডি গাগা, আমেরিকান পপশিল্পী।। যদি আপনার পিতা-মাতার কোনো সন্তান না থাকে, তাহলে আপনারও নিঃসন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ডিক ক্যাভেট, সাবেক আমেরিকান টিভি উপস্থাপক।। ঈশ্বর রোগ সারান কিন্তু সম্মানী নেন ডাক্তার। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, আমেরিকান রাজনীতিবিদ, লেখক ও বিজ্ঞানী।। প্রলোভনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো তার বশবর্তী হওয়া। অস্কার ওয়াইল্ড, অভিনেতা ও সাহিত্যিক।। ভুল করার পরও কেউ হাসার অর্থ হলো, সে ইতিমধ্যে দোষ চাপানোর মতো অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। রবার্ট ব্লক, সাহিত্যিক।। আমি অনেক বছর যাবৎ আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিনি। আমি তার বক্তব্যে বাধা দিতে চাই না। রডনি ডেঞ্জারফিল্ড, আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা।। একজন পুরুষ বিয়ের আগ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থাকে এবং বিয়ের পর সে শেষ হয়ে যায়। সা সা গাবুর, হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান অভিনেত্রী।। সবার হৃদয়ে নিজের নামটি লিখুন, মার্বেল পাথরের দেয়ালে নয়। চার্লস স্পার্জান, ব্রিটিশ লেখক।। শুধু দালমা আর জিয়াননিনাই আমার বৈধ সন্তান, বাকিরা সবাই আমার অর্থ ও ভুলের ফসল। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার।। কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়, তাহলে হয় গাড়িটা নতুন অথবা তার নতুন বিয়ে হয়েছে। প্রিন্স ফিলিপ, ব্রিটেনের রাজপুত্র।। আমি শিশুদের ভালোবাসি। কারণ আপনারা জানেন কি না জানি না, আমি নিজেও শিশু ছিলাম একসময়। টম ক্রুজ, হলিউড অভিনেতা।। জীবনের সব কাক্সিত বস্তুই হয় অবৈধ, কিংবা নিষিদ্ধ, কিংবা চর্বিযুক্ত, কিংবা ব্যয়বহুল, নয়তো বা অন্য কারও স্ত্রী। গ্রুশো মাক্স, সাহিত্যিক।। যতক্ষণ আপনি কোনো ছেলেকে অপছন্দ করবেন, সে আপনার জন্য তার সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকবে। যখন আপনি তাকে ভালোবাসতে শুরু করবেন, ততণে সে তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিয়ন্স নোয়েলস, মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী।। আমার একটা অ্যালার্ম ঘড়ি আছে। মজার বিষয় হলো, সেটা কোনো আওয়াজ করে না। এটা আলো দেয়। যতই সময় যেতে থাকে, সেটি ততই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকে। একপর্যায়ে আলোর চোটে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার সেই অ্যালার্ম ঘড়িটার নাম জানালা। জে লেনো, মার্কিন কৌতুক অভিনেতা।। আমাকে একটি গিটার দাও, আমি সেটা বাজাব। আমাকে একটি মঞ্চ দাও, আমি গাইব। আমাকে একটি অডিটরিয়াম দাও, আমি তা পরিপূর্ণ করে দেব। এরিক ক্যাপটন, সংগীতজ্ঞ।। আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমি কখনো প্রেমে পড়িনি, কয়েকবার পা রেখেছিমাত্র। রিটা রুডনার, মার্কিন কৌতুক অভিনেত্রী ও লেখিকা।। অবিবাহিত পুরুষদের ওপর উচ্চহারে কর বসানো উচিত। তারা কেন অন্যদের চেয়ে সুখে থাকবে? অস্কার ওয়াইল্ড, আইরিশ লেখক ও কবি।। বিয়ে হলো কল্পনার কাছে বুদ্ধির পরাজয়। দ্বিতীয় বিয়ে হলো আশার কাছে অভিজ্ঞতার পরাজয়। স্যামুয়েল জনসন, ব্রিটিশ লেখক।। বিয়ে হলো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার মতোই প্রাকৃতিক, অযৌক্তিক এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। লিসা হফম্যান, অভিনেতা ডাসটিন হফম্যানের স্ত্রী।। বুকমার্ক কেনার জন্য ডলার খরচ করার দরকার কী? ডলারটাকেই বুকমার্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। স্টিভেন স্পিলবার্গ, চলচ্চিত্র পরিচালক।। আমার মনে হয়, যেসব পুরুষের কান ফুটো করা, তারা বিয়ের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত। কারণ, তারা ব্যথা সহ্য করেছে এবং অলংকারও কিনেছে। রিটা রুডনার, আমেরিকান কৌতুকাভিনেত্রী, লেখিকা ও অভিনেত্রী।। ডায়েটের প্রথম সূত্র হলো : খাবারটা যদি তোমার খেতে খুব ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই জিনিসটা তোমার জন্য তিকর হবে। আইজ্যাক আজিমভ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকার।। আমার জন্মের পর আমি এত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে পাক্কা দেড় বছর কথাই বলতে পারিনি। গ্রেসি অ্যালেন, মার্কিন কৌতুকাভিনেত্রী।। আমি কোনো দিন বিখ্যাত হতে পারব না। আমি কিচ্ছু করি না। কিছুই না। আগে দাঁত দিয়ে নখ কাটতাম। এখন তা-ও করি না। ডরোথি পার্কার, আমেরিকান রম্যলেখিকা।। আমি কখনোই আমার স্কুলকে আমার শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটাতে দিইনি। মার্ক টোয়েন, সাহিত্যিক।। সত্যবাদিতাই সর্বোত্তম পন্থা, যদি না আপনি একজন অসাধারণ মিথ্যেবাদী হতে পারেন। জেরোম কে জেরোম, ব্রিটিশ লেখক।। আলস্য পুরোপুরিভাবে তখনই উপভোগ করা সম্ভব, যখন হাতে প্রচুর কাজ থাকে। জেরোম কে জেরোম, ব্রিটিশ লেখক।। যখনই টিভিতে পৃথিবীর সব অনাহারি ও দরিদ্র শিশুকে দেখি, কান্না ধরে রাখতে পারি না। মনে হয়, ইশ, আমার ফিগারটাও যদি ওই রকম হতো। মারায়া ক্যারি, সংগীতশিল্পী।। সুষম খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো খাদ্য। ফ্র্যান লেবোউইটজ, মার্কিন লেখক।। ধূমপান মৃত্যু ডেকে আনে। যদি আপনার মৃত্যু ঘটে, তাহলে জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আপনি হারাবেন। ব্রুক শিল্ডস, অভিনেত্রী।। বক্সিংয়ে এ পর্যন্ত ইনজুরি, মৃত্যু-দুটোই হয়েছে। কোনোটিই তেমন মারাত্মক ছিল না। অ্যালান মিন্টার, বক্সার।। অন্যের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সব সময় যাওয়া উচিত। তা না হলে তারাও আপনার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আসবে না। ইয়োগি বেরা, বেসবল খেলোয়াড়।। এমন কাজ তোমার করার দরকার নেই, যেটা আগামীকাল অন্যের ঘাড়ে এমনিতেই চাপবে। ডেভিড ব্রেন্ট, অভিনেতা।। আমাকে কোনো প্রশ্ন কোরো না, তাহলে আমাকেও কোনো মিথ্যা বলতে হয় না। ওলিভার গোল্ডস্মিথ, আইরিশ লেখক ও কবি।। মডেলরা হলো বেসবল খেলোয়াড়দের মতো। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিপুল অর্থের মালিক হই, কিন্তু বয়স ৩০ হতে না হতেই আবিষ্কার করি যে আমাদের উচ্চশিক্ষা নেই, কোনো কিছু করারই যোগ্যতা নেই। কিন্তু আমরা খুবই বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এমন সময় সবচেয়ে বুদ্ধির কাজ হলো কোনো মুভিস্টারকে বিয়ে করে ফেলা। সিন্ডি ক্রাফোর্ড, মডেল।। ফিলাডেলফিয়ার পথঘাট খুবই নিরাপদ। শুধু মানুষই সেগুলোকে অনিরাপদ বানিয়ে রেখেছে। ফ্রাংক রিজো, আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার সাবেক মেয়র।। সব সময় মনে রাখবেন, আপনি অনন্য। ঠিক আর সবার মতো। মার্গারেট মেড, নৃতত্ত্ববিদ।। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাগের মাথায় কখনো বাচ্চাদের মারবেন না। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে কখন মারব? মনে যখন আনন্দ থাকে তখন? রোজেইন বার, লেখক।। টেলিভিশন আমার কাছে খুবই শিক্ষামূলক। বাড়ির সবাই যখন টেলিভিশন দেখে, আমি তখন অন্য ঘরে গিয়ে বই পড়তে শুরু করি। গ্রুশো মার্ক্স, কৌতুকাভিনেতা।। হাল ছেড়ো না। একটা ডাকটিকিটকে দেখো। নিজ গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত তা একটি খামের সঙ্গেই লেগে থাকে। জশ বিলিংস, লেখক।। কেউ মহৎ হয়েই জন্মায়, কেউ অনেক চেষ্টা করে মহৎ হয়। বাকিরা পাবলিক রিলেশন অফিসারদের ভাড়া করে। ড্যানিয়েল জে বুরর্স্টিন, ইতিহাসবিদ।। বাস্তব ও কল্পকাহিনির মধ্যে পার্থক্য হলো, কল্পকাহিনিকে সব সময় যুক্তিপূর্ণ হতে হয়। টম ক্যান্সি, লেখক।। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের অন্যতম প্রিয় শখ হচ্ছে কবিতা না পড়া। ফিলিস ম্যাকগিনলে, লেখক।। চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য মানুষের ব্লাডারের সহ্যমতার সমানুপাতিক হওয়া উচিত। আলফ্রেড হিচকক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক।।



.

মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১১

কালের কন্ঠে ছাপা হওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টের ব্যাক আপ

মন্তব্যঃ টি মন্তব্যঃ . .

আগামীবার আমি প্রথম ভোট দেবো। নৌকা মার্কায় সিল মারার আগে অনুভব করার চেষ্টা করবো আমার বা পা-টা হাটু থেকে কাটা। এ ব্যাপারে আওয়ামিলীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর 'কিছুই করার ছিলো না'!
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ভূমিধস বিজয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন তরুণ ভোটাররা। এ রকমই বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। যেকোনো নির্বাচনেই ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররাই গড়ে দিতে পারেন বড় ব্যবধান। আগামী নির্বাচনের সেই তরুণ ভোটারদের ভাবনা জানার কোনো চেষ্টাই করে না আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো।

ঘটনাচক্রে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে এক তরুণের ফেসবুক স্ট্যাটাস। র‌্যাবের হাতে চিরতরে পঙ্গু হওয়া তরুণ লিমন প্রসঙ্গে জনগণের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় এই বাক্যগুলোতে। আগামী নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছেন এমন এক তরুণ জানিয়েছেন ব্যালট হাতে নিয়ে তিনি কী ভাববেন। তাঁর কথার পিঠে উঠে এসেছে এই প্রজন্মের তরুণদের রাজনৈতিক ভাবনা, আশা-হতাশার গল্প। আলীম আল রাজী নামের এই নতুন ভোটার এবং তাঁর ফেসবুক বন্ধুদের অনুমতিক্রমে আলোচনাটি আমরা তুলে দিলাম এ পৃষ্ঠায়। আমরা একে বলছি ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠক। জানি, আমাদের নেতা-নেত্রীরা এসব পড়বেন না, তবু তরুণদের এই ভাবনাগুলো না হয় তোলাই থাকল ছাপার হরফে...






রাহিক তামিম : ভাই রে, মনের কথাটা লিখছেন!
আকাশ নীলিমা : হা...হা...হা...!
হাট্টিমাটিমটিম : এ জন্যই আমি পায়ের চিন্তা না করে গতবার 'না ভোট' দিয়েছিলাম। প্রচুর ঝাড়িও খেয়েছিলাম যথারীতি।
সাজিদ রেজা : আমরা কী করব, রাজী? জামায়াতের অঙ্গসংগঠন বিএনপিকে ভোট দেব? অন্তত এটা তোমার-আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ভোটদান থেকে বিরত থাকব? তাহলে তো এই সুযোগে বিএনপি-জামায়াতের ভোট বেড়ে যাবে? আমাদের করণীয় কী? তোমার-আমার জন্য যে কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। উপায়হীন আমরা!
যিশু সেন : আসলেই আমরা অসহায়...! কাকেই বা ভোট দেব? জামায়াতকে তো প্রশ্নই আসে না। বিএনপি আর জামায়াত একই গোয়ালের গরু, 'না ভোট'ই ভালো...
সাজিদ রেজা : যিশু সেন, 'না ভোট' দেওয়া আর না দেওয়া একই কথা! আর সম্ভবত পরের নির্বাচনে 'না' ভোটের বিধান থাকছে না। রাজী, আমাকে যতই গালমন্দ করো তোমরা, যত দিন জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আছে, আমি নৌকায় সিল মেরে যাব। লীগ যত খারাপভাবেই দেশ চালাক না কেন, জামায়াতকে ক্ষমতায় দেখা আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়! তাকে ভোট দেওয়া তো দূরের কথা...
আলীম আল রাজী : সাজিদ ভাই, এ জন্যই আমি ১/১১র কট্টর সাপোর্টার।
সাজিদ রেজা : ১/১১ তো কোনো সমাধান নয়, বরং সমস্যা থেকে পালিয়ে যাওয়া। সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তোলা। আলটিমেটলি দেশের আরো বেশি ক্ষতি করা। তখন রাজনৈতিক নেতাদের বদলে দুর্নীতি করবে ক্যাপ্টেন-মেজররা। ১/১১ সময়ে কি মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়নি? হয়েছে। সেনাশাসন কোনো সমাধান নয়, রাজী। আবার সমাধান যে কী, তাও জানি না।
আলীম আল রাজী : রাজনীতিবিদদের হাতে ধর্ষিত হওয়ার চেয়ে সেনাশাসকদের হাতে দৌড়ানি খাওয়া অনেক ভালো।
শুভব্রত দেব : রাজী, ১/১১ একটি সাময়িক সমাধান। রাজনীতিবিদদের হাতে ধর্ষিত হওয়া মেনে নেওয়া যায় না; কিন্তু আর্মিরা যখন ধর্ষণ শুরু করে, তখন পালানোর পথ থাকে না। এরশাদ ৯টা বছর দেশকে চুষে খেয়েছে। জিয়া আর এরশাদ মিলে এ দেশের বারোটা বাজিয়েছে। যার খেসারত এখন দিচ্ছে। একটি বিশেষ সময়ের জন্য আর্মি শাসন ভালো, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হলে তার ফল ভালো হয় না। ১/১১-কে আমিও সমর্থন করছি; কিন্তু পরের পরিস্থিতির জন্য দেশের সব মানুষই ভুক্তভোগী। দেশে আওয়ামী লীগ বলো আর বিএনপি বলো, কেউ আলাদা নয়, তাদের সবারই চরিত্র প্রায় একই। গণতান্ত্রিক সময়ের গত ২০ বছর ধরে তো আমরা দেখছি।...
সাজিদ রেজা : যা বলেছ, তার অনেক কিছুর সঙ্গে আমি আপত্তি করি। কিন্তু এটাই কি শেষ সমাধান? ভুলে যেয়ো না এদের কারণেই আমরা মুজিব, তাজউদ্দীনদের হারিয়েছি। যার মাসুল আজও দিচ্ছি আমরা বাংলাদেশিরা। তাদের কারণেই জিয়ার জন্ম, যে জামায়াতে ইসলামীকে নবজন্ম দিয়েছিল, রাজাকারদের পুনর্বাসন করেছিল, হত্যা করেছিল অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা। দেশের উন্নয়নের চেয়ে অনুন্নয়নই বেশি হয়েছে এদের আমলে। হ্যাঁ, রাজনীতিবিদদের কাদা-ছোড়াছুড়ি দেখতে হয়নি। তাদের বকবক শুনতে হয়নি। শুনতে হয়নি তথাকথিত উন্নয়নের জোয়ারের কথা। একবার পাকিস্তানের দিকে তাকাও। তাদের বেহাল দশার জন্য যে সেনাশাসনই দায়ী। তাকাও ভারতের দিকে। তাদের রাজনীতিতে প্রতিমুহূর্তে সংঘাত, খুন হচ্ছে। দুর্নীতিও হচ্ছে। কিন্তু ভারতের আর্মি কখনোই ক্ষমতা দখল করেনি। আজ ভারতের নাম বিশ্বের পরাশক্তিরাও শ্রদ্ধার সঙ্গে নেয়। রাজনীতির সমস্যা রাজনীতিবিদদেরই ঠিক করতে হবে। গণতন্ত্রের সমস্যা গণতান্ত্রিকভাবেই করতে হবে। বন্দুকের নল দিয়ে নয়।
আশিকুর রহমান অমিত : সমস্যার একটাই সমাধান, আগামীবার নিজে ভোটে দাঁড়াও।
শুভব্রত দেব : রাজী, পাঁচ বছরের জন্য আর্মিকে ক্ষমতা দিয়ে দেখো কী অবস্থা দাঁড়ায়। পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী কে? ইন্ডিয়া যে ওপরে উঠছে, তার কারণ ওদের আর্মি কখনো রাজনীতিতে যুক্ত হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা করো। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেললে হবে না।
আশিকুর রহমান অমিত : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির লোকরা বোঝে না কেন যে জামায়াতকে বাদ দিলে তাদের ভোট বাড়বে, কমবে না। আন্দোলন করার মতো বিএনপিতে কর্মী আছে যথেষ্ট। আর আওয়ামী লীগের নেতাদের এক মুখই যথেষ্ট তাদের ভোট হারাতে। তা ছাড়া সেই রকম কেউ নেই যে তৃতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে।
শুভব্রত দেব : 'যায় দিন ভালো হয়'_আমাদের দেশে এটা সত্য ঘটনা। বিএনপি আমলে এমপিদের মানুষ দৌড়াইছে, এখন বিএনপি ভালো। 'আল্লাহর মাল' আলতাফ হোসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল। সেই বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষ বলবে, লীগই ভালো ছিল। এখানে কয়জন এরশাদের শাসন দেখেছেন জানি না, আমি কিছুটা মনে করতে পারি। তাই আর্মি শাসন চাই না।
আলীম আল রাজী : সাজিদ ভাই ও শুভদা, আমি বুঝি কম। আমার মতো করেই আমি কিছু বলি। আসলে 'প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র', 'দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল', 'সংবিধান' টাইপ কঠিন কথাগুলোর ওপর আমার খানিকটা অ্যালার্জি আছে। আমি এত কঠিন কঠিন বিষয় বুঝতে চাই না। আমি ১/১১-কে তখনই খারাপ বলব, যখন আমাকে ১/১১র ভালো বিকল্প এনে দেবেন। সোজাসুজিই বলছি, গত নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর দারুণ আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু দেখলাম তো গত আড়াই বছর। আবারও বলছি, আমি বুঝি কম। তাই বিশ্বাস করি, 'জনগণের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়'। আমাদের সাংবিধানিক সরকারগুলো আমাদের কী এমন রসগোল্লা দিয়েছে? আর এই গণতান্ত্রিক সরকার 'সংবিধান', 'আইন'_এগুলোর প্রতি কতটা শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে? কোন আইনে লিমনকে পঙ্গু করা হলো? সংবিধানের কোন ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রীয় খুন জায়েজ হয়ে গেল? (ব্যক্তি রাষ্ট্রের বিপক্ষে গেলে হয় রাষ্ট্রদ্রোহ। এখন তো দেখছি রাষ্ট্রই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চলে গেল। এটাকে কি ব্যক্তিদ্রোহ বলা যায় না?) আমাকে ১/১১র বিকল্প এনে দিন শুভদা, সাজিদ ভাই। ও হ্যাঁ, 'প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র' নামক বস্তুটা পাওয়ার জন্য কত হাওয়া ভবন, হারিছ চৌধুরী তৈরি করতে হবে, সেটা জানালেও খুশি হব। রাজনীতিবিদ জিন্দাবাদ, চরিত্রবান রাজনীতিবিদদের চরিত্র হরণকারী ১/১১ মুর্দাবাদ।
শুভব্রত দেব : রাজী, কথার পিঠে কিছু কথা বলি। যখন আইয়ুব খান ক্ষমতায় ছিল, সবাই খুব খুশি হয়েছিল। কারণ তার সরকার প্রথম এক বছর দুর্দান্ত উন্নয়ন করেছিল। কিন্তু যখন ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদি হলো, তখনই চরিত্র বেরিয়ে এল। তার পরের ফল আমরা জানি_১৯৭১। আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে ভোট দিতে হবে তা বলিনি, কিন্তু আর্মিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার ফল কোনো দেশই ভালো পায়নি। এখন অন্তত কোর্টে গিয়ে মামলা করতে পারো, তখন তাও পারবে না। বাংলাদেশে পদ্ধতির গলদ। এখানে আর্মির হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে তোমাকে রাতারাতি ভালো করে ফেলবে। বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে না। অর্থনীতি কোথায় দাঁড়াবে? যদি পরামর্শ চাও, দুটি বিকল্প আছে দেশে : তৃতীয় শক্তির উত্থান, যেটা অবশ্যই জামায়াত বা জাতীয় পার্টি হবে না। এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষমতা রাখবে, মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনায় সত্যিকারের বিশ্বাস রাখবে। আরেকটা হলো 'না ভোট'। 'না ভোট' যদি কোনো এলাকায় পড়ে, তাহলে ওই এলাকার এমপিকে ফেল ঘোষণা করা হবে, আর ওই এলাকার মানুষ তাদের ইচ্ছামতো দল বেছে নেবে।
সাজিদ রেজা : রাজী, আমার অনেক কথাই শুভদা বলে দিয়েছে। তুমি ১/১১র বিকল্প জানতে চাইছ। আমাকে বলো ১/১১ কোন দিক দিয়ে চারদলীয় জোট বা এই সরকারের চেয়ে ভালো? কোন দিক দিয়ে? তারা রাজনীতিবিদদের টেনেহিঁচড়ে জেলে ঢুকিয়েছে_এটাই কি সব? আর কী করেছে? ভোটার লিস্ট বাদে অন্য কিছু থাকলে বলো। তোমার মতো আমিও আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে হতাশায় আছি। তাই বলে আর যা-ই হোক, মার্শাল ল দেখতে চাই না।
আলীম আল রাজী : সাজিদ ভাই ও শুভদা, আমি চিরস্থায়ী সেনাশাসনের পক্ষপাতী না হলেও ১/১১র সমর্থক।
কারণ ওই সময় ১/১১র দরকার ছিল বলেই আমি মনে করি এবং এই মুহূর্তে আরেকটি ১/১১ এলে তাকেও আমি স্বাগত জানাব। কারণ ১/১১ আমাদের ভালো শাসন উপহার দিতে পারেনি সত্য, কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতো কুশাসন কিংবা অপশাসন উপহার দেয়নি। গণতন্ত্রের স্টিকার লাগিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার চেয়ে মনে হয় 'সেনাসমর্থিত' তকমা লাগিয়ে একটু কঠোর হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
১/১১ আমাদের কী দিয়েছে? আর কিছু না পারুক, রাজনীতিবিদদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। চোখে আঙুল দিয়ে বলেছে_দেখো, যারা এতকাল তোমার ভাগ্যবিধাতা ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, তাদের আসল রূপটা দেখো! তোমার একটি ভোটকে পুঁজি করে এরা দুর্নীতির অট্টালিকা বানিয়েছে। ১/১১ না এলে কি তারেক, কোকো, বাবরদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসত? অন্য কারো কথা বাদ দিলাম, আমার বাড়ির পাশের একজনের কথা বলি। আমি নিজের চোখে দেখেছি, চরিত্রবান রাজনীতিবিদদের একজন হারিছ চৌধুরী কিভাবে তাঁর বাড়িটা ছোট মেগাসিটিতে পরিণত করেছিলেন।
শুভদা, মানলাম ১/১১র সময় সরকারের বিপক্ষে মামলা করা কঠিন ছিল, কিন্তু এখন কি সহজ? আমাদের তথাকথিত স্বাধীন বিচার বিভাগ কি আসলেই স্বাধীন? সরকারের কথায় ঝাঁকে ঝাঁকে অপরাধীদের জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, ছেড়ে দেওয়া হয়। আমার সবচেয়ে দুঃখ হয় কখন, জানেন? যখন আমাদের রাজনীতিবিদরা তাঁদের চরিত্র হননের দায়ে ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দীনের বিরুদ্ধে চোখ-মুখে প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে মানববন্ধন করেন। পত্রিকায় বিবৃতি দেন (এই ইস্যুতে আবার আওয়ামী লীগ-বিএনপি একজোট)। এবার আওয়ামী লীগ কিছু না করলেও পরেরবার বিএনপি এলে ফখরুদ্দীন মইনউদ্দীনকে ছিঁড়ে ফেলবে। চরিত্রবান রাজনীতিবিদরা ঠিকই গদিতে বসে দেশটিকে চেটেপুটে খাবে।
জানি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রই সমাধান! কিন্তু ভাই, আমার সেই গণতন্ত্র লাগবে না, যেটাতে ভর করে ঠুসঠাস গুলি করে মানুষ পঙ্গু করা যায়। যেটার জন্য পরে রাষ্ট্রযন্ত্র দুঃখ প্রকাশ করার সৌজন্যটুকুও দেখায় না। যে গণতন্ত্র পাঁচ বছর পর পর একেকটা হাওয়া ভবন সৃষ্টি করবে, সেই গণতন্ত্রেরও আমার দরকার নেই।


আলোচনাটি ছাপা হয়েছিলো কালের কন্ঠের রাজনৈতিক ম্যাগাজিন "রাজনীতি"তে।
২৪ মে ২০১১।

0 মন্তব্য(গুলি) :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।

 
টেমপ্লেট ডিজাইন আলিম আল রাজি | ব্যাক্তিগত ব্লগসাইট খেয়ালিকা'র জন্য খেয়ালিকা | যোগাযোগ