একটি পৃথিবী, শত কোটি মানুষ, একটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপের উদ্বোধনের দায়িত্বে বাংলাদেশ। এর চেয়ে আনন্দের এর চেয়ে গর্বের বিষয় আর কি হতে পারে। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে নানা রকম গুজবে আমরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা পারবো তো!
সব আশংকা, সব দ্বিধাকে মিথ্যা প্রমান করে বাংলাদেশ প্রমান করেছে- বাংলাদেশও পারে বিশ্বকে চমকে দিতে। বাংলাদেশও পারে বিশ্বকে মুগ্ধ করে দিতে। বাংলাদেশ পারে বিশ্বকে "অবাক তাকিয়ে থাকতে" বাধ্য করতে।
সব আশংকা, সব দ্বিধাকে মিথ্যা প্রমান করে বাংলাদেশ প্রমান করেছে- বাংলাদেশও পারে বিশ্বকে চমকে দিতে। বাংলাদেশও পারে বিশ্বকে মুগ্ধ করে দিতে। বাংলাদেশ পারে বিশ্বকে "অবাক তাকিয়ে থাকতে" বাধ্য করতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির ব্যাপ্তি ছিলো প্রায় আড়াই ঘন্টা। ছোট খাটো কিছু ব্যাপার বাদ দিলে প্রায় পুরো অনুষ্ঠানটিকেই মাতিয়ে রেখেছিলো বাংলাদেশ।
সন্ধ্যা ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয় ২০ মিনিট পরে।
প্রথমেই ছায়ানটের শিল্পীরা পরিবেশন করে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। তাদের অসাধারণ গায়কী, পোশাক, আর স্টেডিয়ামে মৃদু আলোর ঝলকানি সবার আবেগকে নাড়া দিয়ে যায়। দর্শকদের অনেকের চোখেই তখন ছিলো শিহরন আনন্দ আর গর্বের অশ্রু।
জাতীয় সঙ্গীত শেষে মঞ্চে আসেন ইবরার টিপু। তার সাথে ছিলেন মিলা, বালাম, এলিটা সহ অনেক শিল্পী। তারা পরিবেশন করেন "ও পৃথিবী বাংলাদেশ নাও চিনে" গানটি। অসাধারণ কথা সুর সঙ্গীত আয়োজন গানটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে নিঃসন্দেহে। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও গানটি মানুষের মুখে মুখে ঘুরবে এ কথা চোখ বুজে বলা যায়।
এরপর রিক্সায় করে মাঠে আসেন ১৪ টি দেশের অধিনায়ক। রিক্সায় করে মাঠে আসার ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ।
এরপর গান পরিবেশ করেন ভারতীয় শিল্পী সনু নিগাম। তার গাওয়া "লেটস গো ফোর গ্লোরি" গানটি এক কথায় ছিলো চমৎকার।
এরপর শুরু হয় বক্তৃতা পর্ব। অসম্ভব সুন্দর একটি অনুষ্ঠানে এই বক্তৃতা পর্বটি একটু দাগ ফেলেছে বলতে হবে। এই পর্ব শুরু হয় ৬ টা পয়তাল্লিশ মিনিটে। শেষ হয় ৭ টা পনেরো মিনিটে। বক্তৃতা পর্বটাকে এতোটা দীর্ঘ করার কোন মানে ছিলো না।
প্রথমে বক্তৃতা দেন লোটাস কামাল। প্রায় আট মিনিট লম্বা ভাষনে ছিলো অযথা ব্যাক্তি বন্দনা আর একই কথার পুনরাবৃত্তি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের খরচের ব্যাপারে কোন কথা না বললেও তিনি পারতেন।
এরপর বক্তৃতা দেন ক্রীড়া মন্ত্রী। ভুল উচ্চারণ আর যথারীতি ব্যাক্তি বন্দনা ছিলো তার ভাষনেও। বার বার বলছিলেন- "ওয়ার্ল্ডকাপ ক্রিকেট অফ টু জিরো জিরো ওয়ান।"
তারপর আসেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর ভাষন এরকম একটা অনুষ্ঠানের সাথে কতোটা মানানসই সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে।
এরপর আসেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও একই ভুল করেন। বলেন "২০০১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট" যাই হোক প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকাপের উদ্বোধন ঘোষনা করতেই মাঠের চারিদিক থেকে শুরু হয় আতশবাজির মিছিল। সে এক অসাধারণ মুহুর্ত। ঢাকার আকাশ তখন ছিলো আতশবাজির আলোয় ঢাকা।
এর ঠিক পর পরই পৃথিবী প্রথম বারের মতো প্রত্যক্ষ করে "এরিয়েল ক্রিকেট।" পাশের শিল্প ব্যাংকের দেয়ালে ইলেক্ট্রোনিক ডিটেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয় এই অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি। ভার্টিকাল দেয়ালে চমৎকার ভাবে ক্রিকেট খেলে গেলো কয়েকটি ছেলে। অসাধারণ সেই দৃশ্য।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় কিছুক্ষন পর। ভারত শ্রীলংকা আর বাংলাদেশ একে একে নিজেদের সংস্কৃতিকে প্রদর্শন করে বিশ্বের সামনে।
প্রথমে ভারত ও শ্রীলংকা তাদের প্রদর্শনী শেষ করে।
এরপর মাঠে আসে বাংলাদেশ। অভূতপূর্ব সে দৃশ্য। চারিদিকে সোনালী আলোর ঝলকানী, তার মাঝেখান থেকে মঞ্চে আসলেন সাবিনা ইয়াসমিন। একে একে গাইলেন একটা গ্রাম দেখা যায়, রসিয়া বন্ধুরে, একটি বাংলাদেশ।
তারপর মমতাজ এসে গাইলেন- মরার কোকিলে, খায়রুন লো, পোলা তো নয়। তার ফোক গান গুলো দর্শকের মনে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করেছিলেন।
রুনা লায়লা এসে গাইলেন- শিল্পী আমি, হারদাম পাইরা তেরী। তিনজনের অসাধারণ গায়কী বাংলাদেশকে অন্যভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বিশ্বের সামনে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অবশ্য যারা একটু বেশী খুত খুতে তারা প্রশ্ন করতে পারেন তাদের সাথে কি নতুন প্রজন্মের কাউকে রাখা যাতো না?
সাবিনা ইয়াসমিন, মমতাজ ও রুনা লায়লার গানের পরে একটি মন মাতানো ডিসপ্লে পরিবেশন করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাস সংস্কৃতি সব তুলে আনা হয় ঐ ডিসপ্ল্যাতে।
৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ কোন কিছু বাদ যায় নি। শামিম আরা নিপা আর শিবলী মোহাম্মদের নৃত্য পরিচালনাকে এক কথায় বলা যায় অসাধারণ।
এরপর বাংলাদেশ দেখায় "বাংলাদেশ-- স্কুল ফর অল" নামের কয়েক মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ। অবিশ্বাস্য সুন্দর এই ক্লিপে দেখানো হয় বাংলাদেশের সব সৌন্দর্য। বাদ যায় নি কক্স বাজার, সুন্দরবন, সিলেট, কুষ্টিয়া, বরিশাল কিছুই। এই ভিডিও ক্লিপটি বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে মঞ্চে আসেন। ব্রায়ান এডামস। পরিবেশন করেন তার সামার সিক্সটি নাইন, এইটিন টিল আই ডাই সহ জনপ্রিয় কিছু গান।
অনুষ্ঠান শেষ হয় আতশ বাজির বর্নিল খেলার মধ্য দিয়ে।
আড়াই ঘন্টার এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে নিজেকে অনন্তকালের জন্য পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। সত্যি, বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুন করে চিনে নিয়েছে।
পূর্বে বিডিস্পোর্টসনিউজ -এ প্রকাশিত।
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।