Pages

বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯

দুঃসাহস...

চেম্বার দিচ্ছি। সপ্তাহে দুই দিন। আজ প্রথমদিন।
সিলেটের সীমান্তবর্তী সে এলাকা। আকাশের কোলে চোখ রাখলে দেখা যায় খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়।
শিক্ষার হার ২২%, স্যানিটেশনের হার ১৮%। দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে অধিকাংশ মানুষ। সারাদিনে যে টাকা আয় করে ভাত ডাল কেনার পরে তার আর তেমন কিছু বাকি থাকেনা।
সেখানে ২৫+ মেয়েরা ধরে নেয় তাঁদের জীবন এখন সায়াহ্নে। ৩৫+ পুরুষরা ধরে নেয় ছোট ছেলেটা যেহেতু পাথর কুয়ারিতে যাওয়া শিখে গেছে সেহেতু তাঁর এখন মরে গেলেও চলবে।

চিকিৎসা! এ আবার কী?
ইনভেস্টিগেশন! কী বলেন এইগুলো?
ওষুধ! গত বছর একটা ভিটামিন ফাইল খেয়েছিলাম।
বড় ডাক্তার! আচ্ছা, আগামী শীতে ধানের টাকা তুলে ওসমানিতে চলে যাব একবার।
এই হচ্ছে অবস্থা!
এলাকার রোগীর টাকা নাই।
আমারও পুজি নেই।
তবে একটা স্টেথোস্কোপ আছে। একটা বিপি মেশিন আছে। হ্যামার আছে। টিউনিং ফর্ক আছে। থার্মোমিটার আছে।
রোগীর প্রস্রাব জ্বাল দেয়ার জন্য টিউব আর ল্যাম্প আছে, অপথালমোস্কোপ আছে।
এফসিপিএস এর জন্য জমানো ট্রেনিং আছে, ডেভিডসন নামক এক ব্যাক্তির লেখা একটা বইয়ের প্রতি অসম্ভবরকম ভালোবাসা আছে।
... প্রাইমারি এবং হাই স্কুলে প্রতিদিন ৩ কিলোমিটার+৩ কিলোমিটার = ৬ কিলোমিটার হাঁটার স্মৃতি আছে। বিকাল বেলায় কাদায় পড়ে পাওয়া আঘাতের দাগ আছে।
... প্রফেসর গৌতম কুমার রায়ের কাছ থেকে পাওয়া মন্ত্র আছে - ডোন্ট ট্রিট দ্যা ডিজিজ, ডোন্ট ট্রিট দ্যা ইনভেস্টিগেশন, ট্রিট দ্যা প্যাশেন্ট।
... এবং আব্বার কাছ থেকে পাওয়া সাহস আছে - যাও। মানুষের সাথে মিশো। কথা বলো।
ভিজিট? টাকা?
ডালভাত কিনে যা থাকে সেখান থেকে একটু হয়তো... কিংবা এক আটি কচুশাক কিংবা একটা লাউ কিংবা একটা পেপে কিংবা কিছুই না।
দোয়া করবেন।
আর দাওয়াত থাকলো। যদি সিলেট আসেন, যদি জাফলং-লালাখাল দেখতে ইচ্ছা করে তাহলে আরেকটু এগুলেই পাওয়া যাবে আমাকে। এখানে ৫ টাকায় খুব ভালো 'চানা-পোলাও' পাওয়া যায়। আমরা স্কুলে থাকতে খেতাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।