Pages

সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

কনফেশন : যেমন ছিলো আমাদের নির্বাচন

ওয়ামী লীগ সমর্থন করে কিন্তু 'আমি আওয়ামী লীগ সমর্থন করি' এটা ফট করে ফেলতে পারেনা আশপাশের বেশিরভাগ মানুষই। উত্তর দিতে গিয়ে 'যদি, কিন্তু...' দিয়ে বাক্য ভারী করে ফেলতে দেখি তাঁদেরকে।
- আমি শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ না, আমি বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ করি...
- আমি আওয়ামীলীগ চিনি না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে...
- বিকল্প নাই তাই আওয়ামীলীগ করি...
ইত্যাদি, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি...।

আমি এত 'যদি... কিন্তু'র মাঝে নেই। একজন নাগরীক হিসেবে একটা দল সমর্থন করার অধিকার আমার আছে। তাই স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই - আমি আওয়ামীলীগ সমর্থন করি।
এখন আসি আমি কেমন আওয়ামীলীগ সমর্থক।
আমি পাঁচ বছরই আওয়ামীলীগের গোষ্ঠী উদ্ধার করি। খাবার টেবিলে আমার আর আব্বার মাঝে প্রতিযোগীতা থাকে কে বেশি আওয়ামীলীগের সমালোচনা করতে পারে। কোনো আগন্তুক যদি আমাদের আলোচনা শুনে ফেলে তাহলে আমাদেরকে তারেক জিয়ার শশুর বাড়ির লোক ভেবে বসে থাকবে সন্দেহ নেই।
সরকার দলীয় কেউ শুনলে ঘটনাস্থল থেকেই দুইজনকে ধরে থানায় নিয়ে যাবে - এ ব্যাপারেও বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
... এই যখন অবস্থা - তখন দেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসলো এবং ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলো।
আব্বা আর আমার গালাগালিও চলতে থাকলো।
বাসায় ২/৩ টা পত্রিকা রাখা হয়। নভেম্বরের 'প্রথম আলো' তখন ঐক্যফ্রন্টের মুখপত্র। আমরা প্রথম দিকে খুব খুশি হলাম - এইবার আওয়ামীলীগ বুঝবে রাজনীতি কী জিনিস! দুনিয়া এত ইজি না। কামাল সাহেব সাঙ্ঘাতিক লোক। অনেক অভিজ্ঞতা। হুহ!
আমরা দুইজনেরই মন খারাপ হয়ে গেলো ডিসেম্বরে এসে। প্রথম আলোর পাতায়, অনলাইন ভার্সনে জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না, বঙ্গবীরদের কঠিন সব উচ্চারণ - 'আছেনই তো আর ১০/১২ দিন... ', '২৪ তারিখের পর পরিস্থিতে বদলে যাবে...', 'আপনাদের দিন শেষ...' ইত্যাদি।
এর মধ্যে একদিনের ছবি দেখে আব্বার মনে হলো শেখ হাসিনার কপালে নাকি দুঃশ্চিন্তার ভাজ!
আমার আর আব্বার ভয় বেড়ে তখন দ্বিগুন। তাহলে কি আওয়ামীলীগ হেরে যাবে?
অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে - আব্বা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলেন প্রায়। আমারও একই অবস্থা।
আম্মা আমাদেরকে ঝাড়ির উপর রাখেন - 'বাপ ফুয়ার অইছে কিতা? আওয়ামীলীগের খাও না পরো? তোমরারে টেকা দেয় নি?' (সাবটাইটেল - বাপ ছেলের হয়েছে কী? আওয়ামীলীগের খাও না পরো? তোমাদেরকে টাকা দেয় নাকি?)
আব্বা আর আমি আম্মার কথায় কান দেই না। তাঁকে কী করে বুঝাই - আওয়ামীলীগ একটা অনুভূতির নাম! এখানে দেনা পাওনার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার দাদা আওয়ামী লীগ সমর্থন করতেন, আব্বা সমর্থন করেন, আমি সমর্থন করি, একদিন আমার ছেলেও করবে। এভাবে জ্বিন থেকে জ্বিনে বয়ে যাবে 'জয় বাংলা'।
যাই হোক - শুধু তো চিন্তা করলে হবেনা। দলের জন্য তো কাজও করতে হবে।
আব্বা শুরু করলেন তার মতো করে প্রচারণা। এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে তাঁর পরিচিতি আছে। কোর্টে, চেম্বারে মামলা মোকদ্দমার কঠিন আলোচনার ফাঁকে চট করে বলে ফেলতে ভুলেননা - ভোটটা তাইলে নৌকায় দিবা, ঠিক আছে তো? নেইন চা খাইন। (সাবটাইটেল - ভোটটা তাহলে নৌকায় দেবেন। ঠিক আছে তো? নেন, চা খান।)
আমিও প্রচারণা চালাই।
ডিপার্টমেন্টে বিএনপি সমর্থক ভাইদের সাথে প্রতিদিন তর্ক-বিতর্ক চলে।
সিলেটে পাঠাও তখন জনপ্রিয় হয়েছে। পাঠাও-তে উঠে চালকের সাথে আড্ডা জমাই। বলি - উন্নয়ন দরকার। ভোট নৌকায় দেবেন।
সিএনজিওয়ালার সাথে কথা বলি।
লিফটে উঠলে লোকজনকে শুনিয়ে আলোচনা করি - আমাদের নেত্রী কতো পারফেক্ট!
এর মধ্যে জানতে পারলাম, শেখ হাসিনা আসছেন সিলেটে। আমার উৎসাহ দেখে কে? আব্বাকে বললাম - সমাবেশে যাবো। আপত্তি করবা না।
আব্বার ধারণা এসব সমাবেশে গেলেই গ্রেনেড মেরে দেবে। তাই পারমিশন দেবেন না ধরেই নিয়েছিলাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে আব্বা বললেন, 'তুই যা। আমিও যাওয়ার চেষ্টা করবো।'
২২ তারিখ আসলো। হসপিটাল থেকে ছুটি নিলাম। দুপুর ১২ টায় দাঁড়ালাম সোবহানিঘাট পয়েন্টে। নেত্রী এদিক দিয়েই যাবেন।
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর অনেকগুলো গাড়ি সামনে দিয়ে চলে গেলো। এই গাড়িগুলোর কোনো একটাতে করেই যাচ্ছেন নেত্রী, আমাদের নেত্রী, আমাদের শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর রক্ত!
আমার চোখ তখন ছলছল। গলায় আটকে গেলো কিছু একটা। স্লোগান দিলাম 'জয় বাংলা... জয় বাংলা...।'
(সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে একটা জিনিস মাথায় আসলো। আমার মনে হলো শেখ হাসিনা আমার জন্য যেমন আবেগের যায়গা বেগম জিয়াও অনেকের কাছে তেমন আবেগের যায়গা। আমার মনে হলো এবার যদি শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসেন তাহলে আমি বেগম জিয়ার মুক্তি চাইবো। এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আমি বেগম জিয়ার মুক্তি চাইছি।)
১টার সময় মিছিল করতে করতে সমাবেশে গেলাম। মানুষ ঠেলে আমি আর কবির গেলাম একেবারে সামনে। মানুষ আর মানুষ।
দুইটার দিকে শেখ হাসিনা আসলেন সমাবেশে। দুই চোখ ভরে নেত্রীকে দেখলাম। বারবার চোখ ভিজে উঠলো নেত্রীর কথা শুনতে শুনতে। নেত্রী... আমাদের নেত্রী! বঙ্গবন্ধুর কন্যা!
৩০ তারিখ আসলো। সকাল ৭টায় উঠে আমি আর বোন গেলাম ভোট দিতে। আমাদের সেন্টারে আমরা দুইজনই প্রথম।
ভোট দিয়ে এসে টিভি বন্ধ করে বসে রইলাম। এত টেনশন নেয়া সম্ভব না।
বিকেলের দিকে বুঝতে পারলাম - পরিবেশ ভালো। জিতে যাচ্ছি।
আব্বা বাইরে যেতে চাইলেন। না করলাম। পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। কী দরকার!
আব্বা জোর করে গেলেন। একটু পরেই ফিরলেন। দুই হাতে মিস্টির প্যাকেট। আমরা মিস্টি খেলাম আর টিভির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এমন খুশির দিনে ঘরে বসে থাকা যায়?
আব্বা আম্মার নিষেধ উপেক্ষা করে চলে গেলাম আমাদের প্রার্থী জনাব মোমেন সাহেবের নির্বাচন কন্ট্রোল রুমে। হাফিজ কমপ্লেক্স পুরোটাই তখন কন্ট্রোল রুম।
একটু পর পর মিছিল আসছে। আমি প্রতিটা মিছিলের সাথে 'জয় বাংলা' বলে ঢুকি। আবার বের হয়ে যাই। আবার মিছিলের সাথে ঢুকি। কী আনন্দ! কী আনন্দ!
তখন মোবাইলে নেট এসে গেছে। ভাবলাম মোবাইল দিয়ে একটু পুরো দেশের ফলাফলটা দেখি।
একটু সময় দেখলাম। দেখে মাথা ধরে গেলো। এরকম বিজয় তো চাইনি!
আমি সোয়েটারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেটে হেটে বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি আব্বার গালাগালি শুরু হয়ে গেছে।
সে রাতে আমার নাইট ডিউটি ছিলো না। ইচ্ছা করে নাইট ডিউটি নিলাম এবং ডিউটি করলাম।
আমাদের বাসায় আগে পরিবেশ ফিরে এসেছে। আব্বা এবং আমি দুইজনই এখন 'আওয়ামীলীগের গোষ্ঠী উদ্ধার' মুডে আছি। উদ্ধার চলবে আগামী ৫ বছর। আবার যদি কখনো শেখ হাসিনার কপালে চিন্তার দাগ দেখি তাহলে আবারও আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে চলে যাবো...।

1 টি মন্তব্য:

  1. How to make money from gambling in a casino
    How do you bet in a casino? You will be asked to make money from your casino หารายได้เสริม balance at your chosen time on the 1xbet site. How Do I Use Money at an Online Casinos? 바카라 사이트

    উত্তরমুছুন

পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।