Pages

শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯

ভারতের বিখ্যাত অ্যাপোলো হাসপাতালের একটি প্রেসক্রিপশনের ময়না তদন্ত

ক বড়বোন। ইন্ডিয়া গিয়েছিলো এই মাসের শুরুর দিকে। সাথে তাঁর স্বামী, তাঁর বাবা, মা এবং ছোট ভাই। উদ্দেশ্য দুইটা - ১. ঘুরাঘুরি ২. হেলথ চেক আপ
১০ তারিখের দিকে হোয়াটসআপ-এ একটা কল আসলো। সেই বড় বোনের ফোন।
- রাজি?
- হ্যাঁ, বল। তোর ইন্ডিয়া ট্যুর কেমন যায়?
- ভালো না। আব্বার তো অপারেশন।
- আংকেলের আবার কী হলো। তিনি তো সুস্থ।
ওপাশ থেকে বললো, হ্যাঁ তিনি তো সুস্থযই। এমনিই ভাবলাম চেক আপ করে যাই।
- তাহলে কীসের অপারেশন?
- কিডনি কেটে অপারেশন করবে।
- মানে কী?
- হ্যাঁ, এখানকার ডাক্তার বললো। কিডনি থেকে মাংস নিয়ে পরীক্ষা করবে।
- বলিস কী! বায়োপসি!
- হ্যাঁ, হ্যাঁ। বায়োপসি।
তৎক্ষণাত কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম। সবগুলোর উত্তরই আসলো 'না'।
আমি খুব শক্তভাবে বললাম - কোনো দরকার নেই এই প্রসিডিউরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার। নিয়ে চলে আয় দেশে। যা হবার হবে।
আমার কথার উপর ভর করেই সে চলে আসলো দেশে।
এত টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়েছিলো। এত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা না করে, চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখে আমার কথাতেই দেশে চলে আসলো। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা বেশ ভারী দায় অনুভব করলাম। তাছাড়া আংকেল আমাকে অসম্ভব ভালোবাসেন। একবার দেখে আসা দরকার। আজ সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম দেখতে।
প্রচুর ওষুধ। এক বছরের ওষুধ নিয়ে এসেছেন আংকেল। সাথে কাগজপত্র তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো - সেই বড়বোন যখন নেফ্রোলোজিস্টকে একদম ইলেভেন্থ আওয়ারে জানিয়েছে যে সে তাঁর বাবার রেনাল বায়োপসি করাতে ইচ্ছুক না তখন ঐ নেফোলোজিস্ট আবার ইন্টার্নিস্টকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে রোগী বায়োপসি করতে রাজি না। বড়বোন বুদ্ধি করে সেই চিঠির ছবিটা তুলে এনেছিলো।
যাই হোক, সব কাগজপত্র এবং ওষুধ নিয়ে বসলাম। হাতে এক কাপ চা ছিলো।
ইনভেস্টিগেশন অনেক। অনেক এবং অনেক।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান, ক্ষুদ্র জানাশোনা এবং ক্ষুদ্র ট্রেইনিং সব একে একে ভেঙে পড়তে থাকলো এত এত ইনভেস্টিগেশন আর রিপোর্ট দেখে।
ওষুধ অবশ্য কম। ৫/৬ টা মাত্র।
এই ৫/৬ টা ওষুধের সাথে রোগীর আগের ইতিহাস, বর্তমান রিপোর্ট এবং ডাক্তারের প্ল্যান কিছুই মেলাতে পারলাম না।
সবচেয়ে বড় খটকাটা নিয়েই ভাবলাম প্রথমে। ডাক্তার কেন রেনাল বায়োপসির মতো প্রসিডিউরের মধ্য দিয়ে যেতে চাইলেন।
কাগজপত্র ঘাটলাম আরো কিচ্ছুক্ষণ। অ্যাবনরমালিটি বলতে শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিন ১.৭। আর কিচ্ছু নেই।
অথচ পুরো পৃথিবীতে যে বইকে মেডিসিনের বাইবেল হিসাবে গণনা করা হয় সেই বই-তে রেনাল বায়োপসি কখন করতে হবে তা খুব পরিষ্কার করে বলা আছে। এবং সেখানে একবারও বলা নেই ক্রিয়েটিনিন ১.৭ হলেই কিডনি কেটে মাইক্রোস্কোপের নিচে বসিয়ে দিতে হবে!
খটকা তবুও কাটে না। হাতের চা যখন ঠান্ডা হয়ে আসছে তখন বোন ফোন বের করে দেখালো সেই চিঠির ছবি। যে চিঠি নেফ্রোলোজিস্ট পাঠিয়েছেন ইন্টার্নিস্টকে। যেখানে বলা আছে রেনাল বায়োপসির ব্যাপারে।
চিঠিটা পড়লাম।
পরে আরেকবার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো।
নেফ্রোলোজিস্ট 'হাইপারটেনসিভ নেফ্রোপ্যাথি' আছে কিনা সেটা চেক করতে কিডনি কাটতে চান। ও ভাই রে ভাই! এইটা কী ছিলো!
যে রোগীর ১ যুগ থেকে ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন সে রোগীর 'হাইপারটেনসিভ নেফ্রোপ্যাথি' ডায়াগনোসিস করার জন্য কিডনি কেটে দেখা আর 'তোমায় হৃদমাঝারে রাখিবো' বলা গায়কের বুক কেটে হৃদয় চেক করা তো একই কথা!
নেফ্রোলোজিস্ট ভিভেক ব্রো-কে জিজ্ঞাস করতে চাই, বিবেক নাই? স্যান্স নাই? বুদ্ধি নাই? শিক্ষিত হইয়াও...
দ্বিতীয় খটকা।
নেফ্রোলোজিস্ট সন্দেহ করছেন 'হাইপারটেনসিভ নেফ্রোপ্যাথি'। অর্থাৎ উচ্চরক্তচাপের কারণে কিডনি সমস্যা। অথচ পুরো প্রেসক্রিপশনে কোথাও প্রেশারের কোনো ওষুধ নেই।
প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। এত বড় হসপিটাল! এত এত আয়োজন। এত সিরিয়াস চিকিৎসা। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও এন্টি হাইপারটেনসিভ থাকবে।
নাহ... কোথাও নেই।
অথচ এই রোগী এম্লোডিপিন আর অলমেসার্টানের কম্বিনেশন পেতেন। আর পেতেন একটা বিটা ব্লকার।
কথা নেই বার্তা নেই তিনটাই বন্ধ! ড্রাগ হিস্ট্রিতে তারা সব লিখেছে কিন্তু ডিসচার্জে একটাও নেই!
বিশেষ সিচুয়েশন ছাড়া কোনোভাবেই হুট করে প্রেশারের ওষুধ করা যাবেনা - এই সহজ জিনিসটা আমরা রাউন্ডে ইন্টার্নিকে শিখাই। আর উনারা এত বড় হাসপাতালের এত বড় বড় ডাক্তার!
এই রোগীর রক্তচাপ বেড়ে আজকে যদি বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন!
আর বিটা ব্লকার বন্ধের ব্যাপারটা তো খুন করে ফেলার মতো অন্যায়। হুট করে এই ওষুধ বন্ধ করলে ফ্যাটাল এরিদমিয়া হওয়ার ঘটনা আনকমন না। ফলাফল হার্ট বন্ধ হয়ে মৃত্যু!
তিনটা ওষুধ বন্ধ করার একটা লজিক অবশ্য পাওয়া গেছে। অন এক্সামিনেশন রোগীর ব্লাড প্রেশার নরমাল ছিলো। ব্যাস, ডাক্তার বন্ধ করে দিয়েছেন।
ভাইরে... রোগী ঐদিন সকালে ঐ তিনটা ওষুধ খেয়েছিলেন বলেই প্রেশার নরমাল ছিলো। এই সেন্সটা আপনাদের নাই?
আমাদের দেশের হাসপাতালে যেখানে এক ডাক্তার এক বসায় ২০০ রোগী দেখেন সেখানেও তো এইসব ভুল কমই হয়।
কিন্তু লাখ লাখ টাকার চিকিৎসার এই অবস্থা কেন!
ডায়াবেটিসের ব্যাপারে আসি একটু।
রোগী দেশ থাকতে পেতেন ভিলডাগ্লিপটিন। ওখান থেকে ডাক্তার দিয়ে দিয়েছেন সিটাগ্লিপটিন। দোষের কিছু না। কিন্তু যখন আপনি ক্রিয়েটিনিন বেশি পাবেন তখন সিটাগ্লিপটিন দিলে আমি আপত্তি করি বা না করি, ফার্মাকোলোজি বই ঠিকই আপত্তি করে বসবে।
এত এত পরীক্ষা করলেন একটা ক্রিয়েয়িনিন ক্লিয়ারেন্স করলে কেমন হতো! তখন না হয় দিতেন আপনার সিটাগ্লিপটিন।
আর যদি এতই ডিপিপি-4 ইনহিবিটর দিতে ইচ্ছা করছে তাহলে রেনাল ফ্রেন্ডলি একটা গ্লিপটিন দিলে কী হতো? নাকি লিনাগ্লিপটিনের দাম কম বলে...? আর যে রোগীর HbA1C প্রায় সন্তোষজনক তার ড্রাগ রুটিনকে ম্যাসাকার করে দেবারই বা কী দরকার ছিলো!
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো তারা রোগীকে এক বছরের সিটাগ্লিপটিন কিনিয়ে দিয়েছে। এগুলো নাকি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না! হলি কাউ!
'চেক আপ'এর নামে এক সেটিং-এ তাঁরা কী পরিমান ইনভেস্টিগেশন করিয়েছে সে প্রসঙ্গ আর না-ই বা তুললাম। বই পত্রে কিছু নিয়মকানুন দেয়া আছে। আপনি হুট করে লাইন ছেড়ে বেলাইনে ইনভেস্টিগেশন করতে পারবেন না। ইথিক্স তার অদৃশ্য হাতে আপনার কলম আটকাবেই। অবশ্য বোকা মুরগী পেয়ে এক চিপায় সব ডিম বের করে ফেলার টেন্ডেন্সি থাকলে অন্য বিষয়।
আংকেলকে জিজ্ঞেস করেছিলাম - একদিনে কত খরচ হলো? আংকেল হাসিমুখে উত্তর দিয়েছেন - এক লাখ।
অনেকেই ভালো চিকিৎসা পান, অস্বীকার করছিনা।
তবে এটাও নিশ্চিত - একটা বড় অংশ বড় টাকার বিনিময়ে এভাবেই ভগিচগি চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসেন। তাঁদের প্রতি পরামর্শ। একটু সাবধানে থাকবেন। টাকাগুলো আপনার পরিশ্রমের।









৭টি মন্তব্য:

  1. শালাদের হোগা মারা দরকার

    উত্তরমুছুন
  2. আমার বাবা কে খুলনা কোন এক সরকারী হাসপাতালে কোমরে তীব্র ব্যাথা জনিত কারণে ভর্তি করা হয়েছিলো। বাবার দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপের হিস্ট্রি জেনে ও কোন ধরনের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনের ওষুধ দেয়নি। পরে ডাক্তারকে অন্য ডাক্তার দিয়ে ফোন করিয়ে রোগী যে নিয়মিত ইনসুলিন নিতেন হটাৎ বন্ধ করার কারন জানতে চাওয়ার পরে, পুনরায় প্রেসক্রিপশন পাল্টান।
    এটা আমাদের দেশের চিত্র।
    প্রসঙ্গত: আমি কখনো অন্য দেশে চিকিৎসা করাইনি।আর আমার বিদেশপ্রীতি নেই।

    উত্তরমুছুন
  3. চিকিৎসা নামে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা কেন ?

    উত্তরমুছুন
  4. আমাদের দেশের ডাক্তারদের ওপর আস্থাহীনতার দরুন আজ এই অবস্থা । দাদারা সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া করবে কেন ?

    উত্তরমুছুন
  5. Apollo hospital mafia der hospital. Ora ja khushi tai kore jachhe. Amar vaier vul operation koray mrittu hoyeche. Taderke operation er record dite bolechilam Kintu deyni. Bangladesh theke jaway oshohay er moto lash niye chole ashte hoyeche. Apollo hospital puro puri akta bodmaishder hospital.

    উত্তরমুছুন
  6. আমার সম্পর্কে সত্যিকারের জীবন গল্প মিস নারায়ণ হাসপাতালে মিস মারিয়া প্যাট্রিসিয়োভ এবং ডাঃরাজ, যিনি আমি আমার কিডনিতে একটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছিলাম এবং ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ার কয়েকদিন আগে তিনি আমাকে কিছু পরিমাণ (৪৫০,০০০,০০০ ডলার) অর্থ দিয়েছিলেন, আমি ব্যবহার করেছি খুব দরিদ্র হতে এবং আমার পক্ষে খাওয়া আমার পক্ষে কঠিন মনে হয়, আমি কীভাবে ডাক্তার রাজকে নিয়ে কথা বলার একটি সাক্ষ্য পেয়েছি
               এক কেইন শান তার কিডনি দিয়ে তাকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন যিনি বলেছিলেন যে যে কেউ আগ্রহী সেটিকে এটি একটি ট্রায়াল দিতে হবে এবং সাক্ষ্য দিতে ফিরে আসবে, আমি ইমেলটি (Lilavatihospital.in@gmail.com) হিসাবে অনুলিপি করে তাকে ইমেল করেছি তিন ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আমি ডাক্তারের কাছ থেকে জবাব পেয়েছিলাম এবং আমরা দর কষাকষি করি এবং আমি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করি, নিবন্ধন করি, সমস্ত প্রয়োজনীয় চুক্তি গ্রহণ করি, সমস্ত সমস্যা সমাধান করি, কয়েক দিনের মধ্যে আমার উভয়ের সম্মতি অনুসারে বেতন পেলাম এবং একটি তারিখ ছিল অপারেশনের জন্য নেওয়া হয়েছিল এবং কোনও সমস্যা ছাড়াই রোগীকে বাঁচানোর জন্য আমার উপর অপারেশন করে এবং আমার ব্যালেন্সের অর্থ পেয়েছি, আমি এখন আর্থিকভাবে নিষ্পত্তি এবং দৃ firm় আছি, দয়া করে হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।
     এবং আপনার কিডনি এটি বিক্রি করুন (Lilavatihospital.in@gmail.com) আমার আর্থিক সমস্যাটি জীবনের শেষ হয়েছে এবং এখন আমি সুখী জীবনযাপন করছি।

    উত্তরমুছুন

পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।