Pages

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬

দ্যা বিউটি অব p53

ক্যানসার চিকিৎসার ইতিহাসকে মোটামুটি দুইভাগে ভাগ করা যায়। p53 আবিষ্কারের আগের পর্যায়,  p53 আবিষ্কারের পরের পর্যায়।
p53 জিনিসটা তাহলে কী?
যে আঙ্গুল দিয়ে একটু আগে মাউসে ক্লিক করেছি সেখান থেকে একটা কোষ নেই। কোষের ভেতরে নিউক্লিয়াসে যাই। সেখানে গেলে দেখতে পাবো সুতার মতো দেখতে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম নাচানাচি করছে। সবচেয়ে লম্বা 'ক্রোমোজোম কাপল'টির নাম দেই ক্রোমোজোম নাম্বার এক। পরেরটির নাম দেই ক্রোমোজোম নাম্বার দুই। এভাবে সাজাতে থাকি।
সাজানো শেষ হলে ১৭ নাম্বার ক্রোমোজোমটি হাতে নেই। এই ১৭ নাম্বারের ভেতরেই লুকিয়ে আছে আমাদের p53 জিন। প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন স্যার ডেভিড লেইন। সুন্দর একটা বিশেষণও দিয়েছিলেন p53কে - 'গার্ডিয়ান অব জিনোম'।
আমাদেরকে ক্যানসারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই জিনটি প্রতি মুহূর্তে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে যাচ্ছে তা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কবিতাটির চেয়েও সুন্দর, সবচেয়ে রহস্যময় গল্পটির চেয়েও রহস্যময়।
একটা উদাহারণ দেই।
আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কোষ বিভাজন একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় মা কোষ থেকে নতুন বাচ্চা কোষ তৈরী হয়। তৈরি হওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই মা কোষের ডিএনএর কপি যায় বাচ্চা কোষে। মা কোষের ডিএনএ'তে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা বাচ্চা কোষে যাবে - এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় নষ্ট ডিএনএ-ওয়ালা মা কোষ নতুন বাচ্চা কোষ তৈরি করতে পারেনা। কারণ আমাদের আছে জিনোমের গার্ডিয়ান - THE p53!
এই p53র দুইটি হাত। এক হাত থাকে পকেটে। পকেটে কী থাকে সেটা পরে বলছি।
আরেক হাতে থাকে লাঠি। এই লাঠি নিয়ে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সুস্থ মা কোষ বাচ্চা তৈরি করার প্রস্তুতি নিলে p53 কিছুই করেনা। সে মা'কে তার কাজ করতে দেয়।
কিন্তু... যখনই একটা একটা অসুস্থ ডিএনএ-ওয়ালা মা কোষ নতুন কোষ তৈরির প্রস্তুতি নেয় তখনই মাঠে নামে আমাদের p53। প্রায় আক্ষরীক অর্থেই p53 লাঠি দিয়ে অসুস্থ মা কোষকে পেটানো শুরু করে। আর বলতে থাকে, 'এত বড় সাহস! নষ্ট ডিএনএ নিয়ে এসেছো বাচ্চাকাচ্চা ফুটাতে? যাও ডিএনএ ঠিক করে তারপর আসো।'
মা কোষটি যতোবার ডিএনএ ঠিক না করে নতুন কোষ তৈরি করতে আসবে ততবারই p53 তাকে পিটিয়ে বাড়ি পাঠাবে। ডিএনএ ঠিক করে আসলে তবেই সে এলাউ করবে - ওকে ফাইন, তুমি এবার বংশ বৃদ্ধি করতে পারো।
কিন্তু এমন যদি হয় - ডিএনএ-তে এতো বেশি গন্ডোগোল যে মা কোষ আর তার ডিএনএকে কোনোভাবেই ঠিক করতে পারছেনা সেক্ষেত্রে p53 কী করে?
আগেই বলেছি p53-র এক হাত থাকে পকেটে। ঐ হাতে আসলে ধরা থাকে একটি পিস্তল।
এক্ষেত্রে p53 আর লাঠি দিয়ে পেটায় না। সে পকেট থেকে তার পিস্তলটা বের করে। পিস্তলটা মা কোষের হাতে দেয়। দিয়ে বলে, 'তোমার আর এ নষ্ট জীবন রেখে কী হবে? তুমি বরং আত্মহত্যা করো।'
মা কোষ বাধ্য মেয়ের মতো p53-র কথা শুনে। সে নিজের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে এবং মরে যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে এপোপটোসিস।
এই হচ্ছে p53-র জাদু।
যদি কোনো কারণে আপনার p53 নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা অনেকগুন বেড়ে যাবে। হয়ও তাই। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্যানসারে দেখা যায় p53-র মিউটেশন হয়ে গেছে এবং সে লাঠিও তৈরি করতে পারছেনা, বন্দুকও তৈরি করতে পারছেনা।
আজ থেকে ঠিক ৩৭ বছর আগের এই দিনে স্যার ডেভিড লেইন তার গবেষণাটি লিখেছিলেন : p53-গার্ডিয়ান অব জিনোম
#পাই_ডে আছে, #p53_ডে থাকাও দরকার ছিলো। জিনিসটা সুইট। খুবই সুইট। সাংঘাতিক সুইট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।