কার্ডিয়াক এক্সিস জিনিসটাকে আমার ভয়াবহ কঠিন মনে হয়েছিলো। দায়টা কিছু বইয়ের। তারা এক্সিসকে এত জটিল করেছে! আমার কী দোষ?
অথচ কার্ডিয়াক এক্সিসের সাথে সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা কম বেশি পরিচিত। অবাক হচ্ছেন?
নিজের অভিজ্ঞতাটা বলছি।
তখন ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনে পড়ি সম্ভবত। আমার এক বড় ভাই ছিলেন নাম বদরুল। তিনি লাইন মারতেন আমার আরেক আপুর সাথে। আপুর নাম সালমা। তাদের প্রেমপত্র বেশিরভাগ সময় আমাকেই চালাচালি করতে হতো। বিনিময়ে চকলেট পেতাম অনেকগুলো। তবে শর্ত ছিলো চিঠি খুলে পড়া যাবেনা।
এই শর্ত দেয়ার পর চিঠি না পড়ে থাকা কঠিন। তাই আমি প্রতিটি চিঠি মনোযোগ দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তাম।
কী লজ্জ্বার সব ব্যাপার স্যাপার লেখা থাকতো চিঠিতে। সেগুলো না বলি আপাতত। তবে সব চিঠির শেষে একটা পান পাতা আঁকা থাকতো। পাতার একদিকে লেখা B. আরেকদিকে S. B আর S এর মাঝ দিয়ে থাকতো একটা তীর।
ছবিটা এরকমঃ
ঐ তীরটাই হচ্ছে আসলে কার্ডিয়াক এক্সিস।
আসুন এক্সিস নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ইন্টারে আমরা ভেক্টর নিয়ে পড়েছিলাম। বইয়ে ভেক্টরের কী সংজ্ঞা ছিলো ভুলে গেছি। তবে এরকম একটা ছবির কথা মনে আছে বেশ।
অর্থাৎ AB ভেক্টর প্লাস BC ভেক্টর ইকুয়েল টু AC ভেক্টর।
আমরা আগেই জেনেছি হার্টের কারেন্ট SA নোডে তৈরী হয়ে পুরো হার্টে ছড়িয়ে যায়। এই ছড়ানোর সময় কারেন্ট ছোট ছোট ভেক্টর তৈরী করে। অনেকটা উপরের ছবির AB ও BC এর মতো।
একটা ছবি দেয়ার চেষ্টা করা যাক -
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট ভেক্টর মিলে আসল ভেক্টর তৈরী করেছে। প্রথম ছবির AC ভেক্টরের মতো আর কী!
এই মিন ভেক্টরটাই হলো সব নাটের গুরু অর্থাৎ কার্ডিয়াক আক্সিস।
এই এক্সিসটা দেখা যাচ্ছে প্রায় ঘড়ির কাটার চার/পাঁচ এর বরাবর আছে। এটা নরমাল হার্টে বেশিরভাগ সময় এই বরাবরই থাকে। তারপরেও এটার একটা রেঞ্জ আছে।
নিচের ছবিতে রেঞ্জটা দেখে নেয়া যাক -
অর্থাৎ এক্সিস যতক্ষন -৩০ থেকে +৯০ ডিগ্রি এর মধ্যে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত ওকে।
বাট যদি -৩০ এর বাইরে চলে যায় তাহলে এটাকে বলে লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন, আবার যদি +৯০ এর বাইরে চলে যায় তাহলে সেটাকে বলে রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন।
নিচের ছবিতে লেফট এক্সিস ডেভিয়েশনের ম্যাকানিজম দেখানোর চেষ্টা করলাম।
কাঁচা হাতে নিখুত আঁকতে পারিনি, তবে আশা করি একটু বুঝাতে পেরেছি :P
রাইট এক্সিস ডেভিয়েশনের ম্যাকানিজম পাঠকের জন্য হোমওয়ার্ক। :)
কার্ডিয়াক এক্সিস শুধু ভেন্ট্রিকলের মাসল মাস দিয়ে নির্ধারিত হয়না। আরেকটা জিনিস দিয়েও নির্ধারিত হয়। সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
লেফট বান্ডল ব্রাঞ্চের আবার তিনটা ডিভিশন আছে।
১। সেপটাল ব্রাঞ্চ
২। anterior fascicular ব্রাঞ্চ
৩। posterior fascicular ব্রাঞ্চ
সেপটাল ব্রাঞ্চকে আমরা টোটালি ভুলে যাবো। মনে রাখবো বাকি দুইটাকে। কারণ সেপটাল ব্রাঞ্চ কার্ডিয়াক এক্সিসে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনা।
anterior fascicular এবং posterior fascicular ব্রাঞ্চ যে ডিরেকশনে কারেন্ট দেয় তা নিচের টুডি ছবিতে দেখানোর চেষ্টা করলাম।
এখন এই দুই ব্রাঞ্চের কারেন্টের ভেক্টর বের করার চেষ্টা করবো।
দেখা যাচ্ছে, এক্সিস আগের মতো -৩০ থেকে +৯০ এর ভেতরে আছে।
এখন anterior fascicular এবং posterior fascicular ব্রাঞ্চকে ব্লক করে দেখবো কার্ডিয়াক এক্সিস কোনদিক নড়ে যায়।
প্রথমে anterior fascicular কে ব্লক করে দেখি কী হয়-
দেখা যাচ্ছে এক্সিস সরে যাচ্ছে -৩০ ডিগ্রির বাইরে। মানে anterior fascicular ব্লক-এ হয় লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন।
একইভাবে posterior fascicular ব্লক-এ হয় রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন।
posterior fascicular ব্লক-এর ছবি আঁকতে এনার্জি পাচ্ছিনা। এটা পাঠকের জন্য হোমওয়ার্ক। :)
অর্থাৎ-
লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন হয় দুইটা কন্ডিশনে -
ক) এনটেরির ফেসিকুলার ব্লক
খ) লেফট ভেন্ট্রকুলার হাইপারট্রফি
আবার
রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন হয় দুইটা কন্ডিশনে
ক) পস্টেরিওর ফেসিকুলার ব্লক
খ) রাইট ভেন্ট্রকুলার হাইপারট্রফি
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ইসিজি দেখে এক্সিস ডেভিয়েশন কীভাবে বুঝবো?
অনেকরকম উপায় অনেক বইতে লেখা আছে।
সবচেয়ে সহজ উপায় হলো -
লিড I ও III এর QRS কমপ্লেক্স দেখবো।
* যদি দেখি I এর QRS উপরের দিকে, III এর QRS নিচের দিকে তাহলে লেফট এক্সিস ডেডিয়েশন
* আবার যদি দেখি I এর QRS নিচের দিকে আর III এর QRS উপরের দিকে তাহলে রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন।
লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন -
রাইট এক্সিস ডেভিয়েশনঃ
এই উপর-নিচের ম্যাকানিজম আবার আরেক কাহিনী। ওটাতে না যাই আপাতত। আজ শেষ।
ব্যাস :) হ্যাপ্পি ইসিজি-ইং :)
বিদ্রঃ টুডি ছবি এঁকে এক্সিস দেখানো একটু কঠিন। তারপরেও চেষ্টা করলাম আর কী! :) ভুল টুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।আগের পর্ব -
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব শূন্য- আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব এক - লাইট... ক্যামেরা... অ্যাকশন...
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব দুই - খাম্বা সিন্ডিকেট
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব তিন - কী করিলে বলো পাইবো তোমারে
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব চার - যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে...
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব পাঁচ - হৃদয় আমার নাচেরে
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ছয় - আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ৭ - হার্ট রেট
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ৮ - ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ৯ - একিউট করোনারি সিন্ড্রোম
অথচ কার্ডিয়াক এক্সিসের সাথে সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা কম বেশি পরিচিত। অবাক হচ্ছেন?
নিজের অভিজ্ঞতাটা বলছি।
তখন ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনে পড়ি সম্ভবত। আমার এক বড় ভাই ছিলেন নাম বদরুল। তিনি লাইন মারতেন আমার আরেক আপুর সাথে। আপুর নাম সালমা। তাদের প্রেমপত্র বেশিরভাগ সময় আমাকেই চালাচালি করতে হতো। বিনিময়ে চকলেট পেতাম অনেকগুলো। তবে শর্ত ছিলো চিঠি খুলে পড়া যাবেনা।
এই শর্ত দেয়ার পর চিঠি না পড়ে থাকা কঠিন। তাই আমি প্রতিটি চিঠি মনোযোগ দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তাম।
কী লজ্জ্বার সব ব্যাপার স্যাপার লেখা থাকতো চিঠিতে। সেগুলো না বলি আপাতত। তবে সব চিঠির শেষে একটা পান পাতা আঁকা থাকতো। পাতার একদিকে লেখা B. আরেকদিকে S. B আর S এর মাঝ দিয়ে থাকতো একটা তীর।
ছবিটা এরকমঃ
ঐ তীরটাই হচ্ছে আসলে কার্ডিয়াক এক্সিস।
আসুন এক্সিস নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ইন্টারে আমরা ভেক্টর নিয়ে পড়েছিলাম। বইয়ে ভেক্টরের কী সংজ্ঞা ছিলো ভুলে গেছি। তবে এরকম একটা ছবির কথা মনে আছে বেশ।
অর্থাৎ AB ভেক্টর প্লাস BC ভেক্টর ইকুয়েল টু AC ভেক্টর।
আমরা আগেই জেনেছি হার্টের কারেন্ট SA নোডে তৈরী হয়ে পুরো হার্টে ছড়িয়ে যায়। এই ছড়ানোর সময় কারেন্ট ছোট ছোট ভেক্টর তৈরী করে। অনেকটা উপরের ছবির AB ও BC এর মতো।
একটা ছবি দেয়ার চেষ্টা করা যাক -
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট ভেক্টর মিলে আসল ভেক্টর তৈরী করেছে। প্রথম ছবির AC ভেক্টরের মতো আর কী!
এই মিন ভেক্টরটাই হলো সব নাটের গুরু অর্থাৎ কার্ডিয়াক আক্সিস।
এই এক্সিসটা দেখা যাচ্ছে প্রায় ঘড়ির কাটার চার/পাঁচ এর বরাবর আছে। এটা নরমাল হার্টে বেশিরভাগ সময় এই বরাবরই থাকে। তারপরেও এটার একটা রেঞ্জ আছে।
নিচের ছবিতে রেঞ্জটা দেখে নেয়া যাক -
অর্থাৎ এক্সিস যতক্ষন -৩০ থেকে +৯০ ডিগ্রি এর মধ্যে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত ওকে।
বাট যদি -৩০ এর বাইরে চলে যায় তাহলে এটাকে বলে লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন, আবার যদি +৯০ এর বাইরে চলে যায় তাহলে সেটাকে বলে রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন।
নিচের ছবিতে লেফট এক্সিস ডেভিয়েশনের ম্যাকানিজম দেখানোর চেষ্টা করলাম।
কাঁচা হাতে নিখুত আঁকতে পারিনি, তবে আশা করি একটু বুঝাতে পেরেছি :P
রাইট এক্সিস ডেভিয়েশনের ম্যাকানিজম পাঠকের জন্য হোমওয়ার্ক। :)
কার্ডিয়াক এক্সিস শুধু ভেন্ট্রিকলের মাসল মাস দিয়ে নির্ধারিত হয়না। আরেকটা জিনিস দিয়েও নির্ধারিত হয়। সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
লেফট বান্ডল ব্রাঞ্চের আবার তিনটা ডিভিশন আছে।
১। সেপটাল ব্রাঞ্চ
২। anterior fascicular ব্রাঞ্চ
৩। posterior fascicular ব্রাঞ্চ
সেপটাল ব্রাঞ্চকে আমরা টোটালি ভুলে যাবো। মনে রাখবো বাকি দুইটাকে। কারণ সেপটাল ব্রাঞ্চ কার্ডিয়াক এক্সিসে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনা।
anterior fascicular এবং posterior fascicular ব্রাঞ্চ যে ডিরেকশনে কারেন্ট দেয় তা নিচের টুডি ছবিতে দেখানোর চেষ্টা করলাম।
এখন এই দুই ব্রাঞ্চের কারেন্টের ভেক্টর বের করার চেষ্টা করবো।
দেখা যাচ্ছে, এক্সিস আগের মতো -৩০ থেকে +৯০ এর ভেতরে আছে।
এখন anterior fascicular এবং posterior fascicular ব্রাঞ্চকে ব্লক করে দেখবো কার্ডিয়াক এক্সিস কোনদিক নড়ে যায়।
প্রথমে anterior fascicular কে ব্লক করে দেখি কী হয়-
দেখা যাচ্ছে এক্সিস সরে যাচ্ছে -৩০ ডিগ্রির বাইরে। মানে anterior fascicular ব্লক-এ হয় লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন।
একইভাবে posterior fascicular ব্লক-এ হয় রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন।
posterior fascicular ব্লক-এর ছবি আঁকতে এনার্জি পাচ্ছিনা। এটা পাঠকের জন্য হোমওয়ার্ক। :)
অর্থাৎ-
লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন হয় দুইটা কন্ডিশনে -
ক) এনটেরির ফেসিকুলার ব্লক
খ) লেফট ভেন্ট্রকুলার হাইপারট্রফি
আবার
রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন হয় দুইটা কন্ডিশনে
ক) পস্টেরিওর ফেসিকুলার ব্লক
খ) রাইট ভেন্ট্রকুলার হাইপারট্রফি
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ইসিজি দেখে এক্সিস ডেভিয়েশন কীভাবে বুঝবো?
অনেকরকম উপায় অনেক বইতে লেখা আছে।
সবচেয়ে সহজ উপায় হলো -
লিড I ও III এর QRS কমপ্লেক্স দেখবো।
* যদি দেখি I এর QRS উপরের দিকে, III এর QRS নিচের দিকে তাহলে লেফট এক্সিস ডেডিয়েশন
* আবার যদি দেখি I এর QRS নিচের দিকে আর III এর QRS উপরের দিকে তাহলে রাইট এক্সিস ডেভিয়েশন।
লেফট এক্সিস ডেভিয়েশন -
রাইট এক্সিস ডেভিয়েশনঃ
এই উপর-নিচের ম্যাকানিজম আবার আরেক কাহিনী। ওটাতে না যাই আপাতত। আজ শেষ।
ব্যাস :) হ্যাপ্পি ইসিজি-ইং :)
বিদ্রঃ টুডি ছবি এঁকে এক্সিস দেখানো একটু কঠিন। তারপরেও চেষ্টা করলাম আর কী! :) ভুল টুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।আগের পর্ব -
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব শূন্য- আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব এক - লাইট... ক্যামেরা... অ্যাকশন...
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব দুই - খাম্বা সিন্ডিকেট
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব তিন - কী করিলে বলো পাইবো তোমারে
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব চার - যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে...
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব পাঁচ - হৃদয় আমার নাচেরে
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ছয় - আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ৭ - হার্ট রেট
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ৮ - ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি
# ইসিজির অ আ ক খঃ পর্ব ৯ - একিউট করোনারি সিন্ড্রোম
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।