আজমত সাহেবের মেজাজ খারাপ। এক ঘণ্টা ধরে গরুর হাটে ঘুরছেন, কিন্তু গরু পছন্দ হচ্ছে না। পছন্দ হচ্ছে না—কথাটা অবশ্য ঠিক নয়। দাম, রং, সাইজ—সব দেখে কয়েকটি গরু মনে ধরেছিল। কিন্তু বাদ সেধেছে তাঁর অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপ্লিকেশন ‘কাউ টেস্টার’। এই অ্যাপস ঈদ উপলক্ষে নতুন এসেছে। আজই মাত্র ইনস্টল করেছেন। অ্যাপসটির ব্যবহার বেশ সহজ। চালু করে গরুর হাম্বা ডাকটা রেকর্ড করে চেক বাটনটা চাপতে হয় শুধু। কিছুক্ষণের মধ্যে গরুর বিস্তারিত তথ্য চলে আসে স্ক্রিনে। গরুটা অসুস্থ কি না, গরুকে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা হয়েছে কি না, গরু চোরাই মাল কি না—কিছুই বাদ যায় না।
আজমত সাহেবের তিনটি গরু পছন্দ হয়েছিল। দুটির হাম্বা ডাক রেকর্ড করা গেছে। রিপোর্ট এসেছে একটি অসুস্থ, অন্যটিকে ওষুধ খাইয়ে মোটা করা হয়েছে। তৃতীয় গরুটিকে অনেক চেষ্টা করেও হাম্বা ডাকানো যায়নি। উল্টা আজমত সাহেবের তলপেটে গুঁতা মেরেছে। একবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে আজমত সাহেবের মেজাজ খারাপ হতেই থাকে। গরু না কিনে সেই রাতে বাসায় ফিরলেন তিনি।
পরদিন সকালবেলা। পত্রিকা পড়ছিলেন আজমত সাহেব। হঠাৎ মুঠোফোনে একটা এসএমএস এল— আপনার থ্রিজি ফোন দিয়ে গরু কিনতে গরু লিখে এসএমএস করুন। বিষয়টা মনে ধরল আজমত সাহেবের। বেশ সহজ মনে হলো পদ্ধতিটি। ফোনটা চালু করে গরু লিখে ১২৩ নম্বরে এসএমএস করলেন। ক্লিক করলেন ফিরতি এসএমএসে আসা লিংকে। ও মা! এ কী! শুধু গরু নয়, ছাগল, উট, মহিষ—সবকিছু আছে এই মার্কেটে। সঙ্গে সব গরু-ছাগলের সচিত্র বর্ণনা। ইচ্ছা করলে জুম করে চোখ, কান, লেজ—সবকিছু দেখা যায়। অনেকক্ষণ সাইটে ঘোরাঘুরি করে একটা গরু পছন্দ হলো আজমত সাহেবের। ক্লিক করলেন ‘কিনুন’ বাটনে। স্ক্রিনে লেখা উঠল, ‘আমাদের থ্রিজিসেবা আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চালু আছে। এই গরু-ছাগলের হাটও তাই পরীক্ষামূলক। আশা করি, আগামী ঈদে আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে হাটটি চালু করতে পারব। সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।’
আজমত সাহেবের মেজাজ ফের খারাপ হলো। তাঁর সঙ্গে এই ফাইজলামির মানে কী! মুঠোফোনের ব্যালান্স দেখে রাগ আরও বাড়ল তাঁর। যে টাকা গেছে, তা দিয়ে একটা ছাগল কেনা যেত।
প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলেন আজমত সাহেব। একটা স্ট্যাটাস দিতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ল তাঁর। ‘মারামারি ডটকম—গরু কিনুন অনলাইনেই’। আজমত সাহেবের পছন্দ হলো বিজ্ঞাপনটা। এই সাইট থেকে তিনি এর আগেও কেনাকাটা করেছেন। এদের ওপর ভরসা করা যায়।
লিংকে ক্লিক করলেন আজমত সাহেব। বিরাট বড় বাজার! অনেক গরু-ছাগল। বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর একটা গরু পছন্দ হলো তাঁর। ক্লিক করলেন ‘বাই’ বাটনে।
আজমত সাহেব ভেবেছিলেন, বাই বাটনে ক্লিক করলেই কাজ শেষ। কিন্তু তা না। মনিটরে লেখা এল, ‘জবাই করা অবস্থায় কিনতে চাইলে ওকে চাপুন। না হলে স্কিপ করুন।’ আজমত সাহেব অবাক হলেন। দারুণ তো! জবাই করা অবস্থায়ই কেনা ভালো। তাঁর আবার গরু জবাই করার জায়গার অভাব। তাই ওকে বাটনে ক্লিক করলেন।
আরেকটা পেজ এল এবার। ‘কোরবানির মাংস সমান তিন ভাগে ভাগ করতে চাইলে ওকে চাপুন। না হলে স্কিপ করুন।’ আজমত সাহেব আবার অবাক হলেন। এরা তো দেখি সেই রকম জিনিয়াস। ভাগাভাগি করার কষ্টও কমিয়ে দিয়েছে। ওকে চাপলেন।
আজমত সাহেবকে অবাক করে দিয়ে নতুন পেজ এল—‘আত্মীয়স্বজনের ভাগ আপনি না পাঠিয়ে আমাদের দ্বারা এখান থেকেই পাঠাতে চাইলে তাদের ঠিকানা টাইপ করে ওকে চাপুন। অথবা স্কিপ করুন। বি.দ্র.: প্রতি আত্মীয়ের জন্য আলাদা শিপিং চার্জ দিতে হবে।’
আজমত সাহেব চোখ বড় বড় করে ওকে চাপলেন। দারুণ! তাঁর আর ঈদের দিন কিছুই করতে হবে না তাহলে। একটু খরচ বেশি হবে—এই আর কি!
নতুন এক পেজ এল—‘আপনার ভাগ রান্না করা অবস্থায় পেতে চাইলে আবার ওকে চাপুন।’ আজমত সাহেব এবারও বিপুল উৎসাহে ওকে চাপলেন। এবার এল পরের পেজ, ‘রান্নায় মরিচ কম বেশি চাইলে ওকে ক্লিক করুন। না হলে স্কিপ করুন।’ আজমত সাহেব ঝাল কম খান। তিনি স্কিপ করলেন। লেখা এল—‘ধন্যবাদ। ঈদের দিন সকালে আপনার মাংস পৌঁছে যাবে।’
আজমত সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
পরিশেষ...
ঈদের নামাজ পড়ে এসে দরজার সামনে মাঝারি সাইজের একটা প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখেছিলেন আজমত সাহেব। প্যাকেটের ওপর স্টিকার লাগানো ছিল—‘মারামারি ডটকম।’ আজমত সাহেব প্রথমে ধাক্কার মতো খেয়েছিলেন! এত বড় গরুর এত ছোট প্যাকেট! প্যাকেট খোলার পর দেখেছিলেন, সেখানে কোনো গরু নেই, শুধু এক হালি মুলা আছে! কঠিন বিস্ময় নিয়ে কেটেছে আজমত সাহেবের ঈদ। গরু অর্ডার দেওয়ায় কেন মুলা এল, এ হিসাব কোনোভাবেই মেলাতে পারছিলেন না তিনি। হিসাব মিলেছিল সন্ধ্যার সময়, যখন ফেসবুকে এক বন্ধুর শেয়ার করা একটা খবর তাঁর চোখে পড়েছিল—মারামারি ডটকমের ওয়েবসাইট হ্যাকড। এক গ্রাহকের পণ্য চলে গেছে অন্য গ্রাহকের ঠিকানায়। সীমাহীন দুর্ভোগে হাজার হাজার গ্রাহক।
রস আলোঃ ০৭-১০-২০১৩
আজমত সাহেবের তিনটি গরু পছন্দ হয়েছিল। দুটির হাম্বা ডাক রেকর্ড করা গেছে। রিপোর্ট এসেছে একটি অসুস্থ, অন্যটিকে ওষুধ খাইয়ে মোটা করা হয়েছে। তৃতীয় গরুটিকে অনেক চেষ্টা করেও হাম্বা ডাকানো যায়নি। উল্টা আজমত সাহেবের তলপেটে গুঁতা মেরেছে। একবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে আজমত সাহেবের মেজাজ খারাপ হতেই থাকে। গরু না কিনে সেই রাতে বাসায় ফিরলেন তিনি।
পরদিন সকালবেলা। পত্রিকা পড়ছিলেন আজমত সাহেব। হঠাৎ মুঠোফোনে একটা এসএমএস এল— আপনার থ্রিজি ফোন দিয়ে গরু কিনতে গরু লিখে এসএমএস করুন। বিষয়টা মনে ধরল আজমত সাহেবের। বেশ সহজ মনে হলো পদ্ধতিটি। ফোনটা চালু করে গরু লিখে ১২৩ নম্বরে এসএমএস করলেন। ক্লিক করলেন ফিরতি এসএমএসে আসা লিংকে। ও মা! এ কী! শুধু গরু নয়, ছাগল, উট, মহিষ—সবকিছু আছে এই মার্কেটে। সঙ্গে সব গরু-ছাগলের সচিত্র বর্ণনা। ইচ্ছা করলে জুম করে চোখ, কান, লেজ—সবকিছু দেখা যায়। অনেকক্ষণ সাইটে ঘোরাঘুরি করে একটা গরু পছন্দ হলো আজমত সাহেবের। ক্লিক করলেন ‘কিনুন’ বাটনে। স্ক্রিনে লেখা উঠল, ‘আমাদের থ্রিজিসেবা আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চালু আছে। এই গরু-ছাগলের হাটও তাই পরীক্ষামূলক। আশা করি, আগামী ঈদে আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে হাটটি চালু করতে পারব। সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।’
আজমত সাহেবের মেজাজ ফের খারাপ হলো। তাঁর সঙ্গে এই ফাইজলামির মানে কী! মুঠোফোনের ব্যালান্স দেখে রাগ আরও বাড়ল তাঁর। যে টাকা গেছে, তা দিয়ে একটা ছাগল কেনা যেত।
প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলেন আজমত সাহেব। একটা স্ট্যাটাস দিতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ল তাঁর। ‘মারামারি ডটকম—গরু কিনুন অনলাইনেই’। আজমত সাহেবের পছন্দ হলো বিজ্ঞাপনটা। এই সাইট থেকে তিনি এর আগেও কেনাকাটা করেছেন। এদের ওপর ভরসা করা যায়।
লিংকে ক্লিক করলেন আজমত সাহেব। বিরাট বড় বাজার! অনেক গরু-ছাগল। বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর একটা গরু পছন্দ হলো তাঁর। ক্লিক করলেন ‘বাই’ বাটনে।
আজমত সাহেব ভেবেছিলেন, বাই বাটনে ক্লিক করলেই কাজ শেষ। কিন্তু তা না। মনিটরে লেখা এল, ‘জবাই করা অবস্থায় কিনতে চাইলে ওকে চাপুন। না হলে স্কিপ করুন।’ আজমত সাহেব অবাক হলেন। দারুণ তো! জবাই করা অবস্থায়ই কেনা ভালো। তাঁর আবার গরু জবাই করার জায়গার অভাব। তাই ওকে বাটনে ক্লিক করলেন।
আরেকটা পেজ এল এবার। ‘কোরবানির মাংস সমান তিন ভাগে ভাগ করতে চাইলে ওকে চাপুন। না হলে স্কিপ করুন।’ আজমত সাহেব আবার অবাক হলেন। এরা তো দেখি সেই রকম জিনিয়াস। ভাগাভাগি করার কষ্টও কমিয়ে দিয়েছে। ওকে চাপলেন।
আজমত সাহেবকে অবাক করে দিয়ে নতুন পেজ এল—‘আত্মীয়স্বজনের ভাগ আপনি না পাঠিয়ে আমাদের দ্বারা এখান থেকেই পাঠাতে চাইলে তাদের ঠিকানা টাইপ করে ওকে চাপুন। অথবা স্কিপ করুন। বি.দ্র.: প্রতি আত্মীয়ের জন্য আলাদা শিপিং চার্জ দিতে হবে।’
আজমত সাহেব চোখ বড় বড় করে ওকে চাপলেন। দারুণ! তাঁর আর ঈদের দিন কিছুই করতে হবে না তাহলে। একটু খরচ বেশি হবে—এই আর কি!
নতুন এক পেজ এল—‘আপনার ভাগ রান্না করা অবস্থায় পেতে চাইলে আবার ওকে চাপুন।’ আজমত সাহেব এবারও বিপুল উৎসাহে ওকে চাপলেন। এবার এল পরের পেজ, ‘রান্নায় মরিচ কম বেশি চাইলে ওকে ক্লিক করুন। না হলে স্কিপ করুন।’ আজমত সাহেব ঝাল কম খান। তিনি স্কিপ করলেন। লেখা এল—‘ধন্যবাদ। ঈদের দিন সকালে আপনার মাংস পৌঁছে যাবে।’
আজমত সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
পরিশেষ...
ঈদের নামাজ পড়ে এসে দরজার সামনে মাঝারি সাইজের একটা প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখেছিলেন আজমত সাহেব। প্যাকেটের ওপর স্টিকার লাগানো ছিল—‘মারামারি ডটকম।’ আজমত সাহেব প্রথমে ধাক্কার মতো খেয়েছিলেন! এত বড় গরুর এত ছোট প্যাকেট! প্যাকেট খোলার পর দেখেছিলেন, সেখানে কোনো গরু নেই, শুধু এক হালি মুলা আছে! কঠিন বিস্ময় নিয়ে কেটেছে আজমত সাহেবের ঈদ। গরু অর্ডার দেওয়ায় কেন মুলা এল, এ হিসাব কোনোভাবেই মেলাতে পারছিলেন না তিনি। হিসাব মিলেছিল সন্ধ্যার সময়, যখন ফেসবুকে এক বন্ধুর শেয়ার করা একটা খবর তাঁর চোখে পড়েছিল—মারামারি ডটকমের ওয়েবসাইট হ্যাকড। এক গ্রাহকের পণ্য চলে গেছে অন্য গ্রাহকের ঠিকানায়। সীমাহীন দুর্ভোগে হাজার হাজার গ্রাহক।
রস আলোঃ ০৭-১০-২০১৩
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।