আশরাফুল, তোমার কাছে কীভাবে পৌছাবো বুঝতে পারছি না। তাই ফেইসবুকের আশ্রয় নিলাম। খুব সম্ভবত চিঠিটা তোমার কাছে পৌছাবে না শেষ পর্যন্ত। তারপরেও আশা করে বসে আছি এটা তুমি পড়বে। পড়লে আমার ভালো লাগবে।
প্রিয় আশরাফুল,
আমি জানি তুমি ভালো নেই। ভালো থাকার কথাও না।
খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি কী অসহ্য মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে তুমি যাচ্ছো। আজ প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া একটা ছবিতে দেখলাম খুব মন খারাপ করে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো তুমি। আমি ছবিটার দিকে খুব বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারিনি। তোমার বিষণ্ন মুখটার দিকে একটু তাকিয়েই পাতা উলটে পরের পাতায় চলে গেছি।
প্রিয় আশরাফুল,
তোমার ব্যাট দিয়ে তুমি আমাদের জন্য কিছু অসাধারণ মুহূর্ত এনে দিয়েছিলে। আমার মনে আছে অস্ট্রেলিয়াকে যেবার তুমি একাই হারিয়ে দিয়েছিলে তখন আমি শিশুর মতো কেঁদেছিলাম আনন্দে। তোমার প্রতি প্রত্যাশার পারদও বেড়ে গিয়েছিলো অনেক। কিন্তু অসংখ্যবার আমাদের হতাশ করেছো তুমি। প্রতিবার তোমাকে গালি দিয়েছি। কখনো সবার সামনে, কখনো মনে মনে।
কিন্তু যখনই ভালো খেলেছো তখন আবার তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছি। এই তো কিছু দিন আগের কথা, তোমাকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ফেইসবুকে। সেখানে প্রথম বাক্যটাই ছিলো এরকম, 'আমাদের বোকা বোকা চেহারার অ্যাশ আজ যা করলো...'
প্রিয় আশরাফুল, তুমি যখন আমাদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছো তখন তোমাকে ভালোবেসে আমরা 'অ্যাশ' ডেকেছি।
এই লেখাটা যখন লিখছি তখন তোমাকে 'অ্যাশ' ডাকতে ইচ্ছে করছে। ভয় নেই, অন্য কোনো অনুভূত নিয়ে নয়, আগের মতো প্রচন্ড রকম ভালোবাসা নিয়ে।
প্রিয় অ্যাশ,
তোমাকে বাইরের পৃথিবী, বাইরের মানুষ কিংবা মিডিয়ার সাথে যতটা যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমি জানি তার চেয়ে অনেক বেশি যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজের সাথে।
আমি দেখিনি, কিন্তু ধারণা করতে পারি কী হচ্ছে তোমার বাসায় গত কিছুদিন ধরে? কী করছো তুমি বাসাটার ভেতরে?
তুমি নিশ্চয়ই কিছু খেতে পারোনি এই ক'দিনে। মা-বাবার জোরাজুরিতে হয়তো খেতে বসেছো কয়েকবার কিন্তু গলা দিয়ে এক ফোঁটা পানিও নামে নি তোমার। তুমি নিশ্চয়ই এক পৃথিবী সমান অপরাধবোধ আর কিছুটা অভিমান নিয়ে তোমার বাবার দিকে তাকিয়েছো বারবার। আর প্রতিবার গলায় এসে দলা পাকিয়েছে খুব অচেনা কিছু কষ্ট। খাওয়া ফেলে বাথরুমে গিয়েও তুমি নিশ্চয়ই থমকে যাচ্ছো বারবার। আয়নায় নিজের মুখটা দেখে অদ্ভূত সব অনুভূতি খেলা করছে তোমার ভেতরে।
তোমার বেডরুমে ও ড্রয়িং রুমে নিশ্চয়ই ক্রিকেটের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে সেখানে রাখা আছে অনেক ক্রেস্ট। দেয়ালে নিশ্চয়ই টানানো আছে অনেক ছবি।
প্রিয় অ্যাশ, আমি জানি এইসব তুমি যখনই দেখছো তখনই নিজের প্রতি এক ধরনের করুনা অনুভব করছো।
প্রিয় অ্যাশ,
সত্যি কথা বলতে কী তোমার প্রতি খুব রাগ হয়েছিলো প্রথম দিন। মনে মনে সেদিন কিছু গালিও দিয়েছিলাম। রাগটা কেটে যাবার পর অভিমান হয়েছিলো খুব। আমাদের বোকাবোকা চেহারার আশরাফুল এটা কীভাবে করলো? আমাদের ভালোবাসাকে এভাবে...? ছিহ্।
অভিমানটা কেটে যেতেও সময় লাগে নি, যখন তোমাকে টিভিতে খুব কাঁদতে দেখলাম।
আশরাফুল,তুমি শুধু নিজেই কাঁদোনি সেদিন, কাঁদিয়েছো সবাইকে। অন্যদের কথা জানি না, সেদিন প্রেস কনফারেন্স শেষ হবার পরেই যে কথাটা মাথায় এসেছিলো সেটা হলো, 'অ্যাশ, সাথে ছিলাম, এখনো আছি।'
অ্যাশ,
নিজেকে নিশ্চয়ই স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছো অনেক। আমি নতুন করে আর স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করবো না। শুধু নিজে কী অনুভব করছি সেটা সংক্ষেপে বলি।
তোমার অসাধারণ ইনিংসগুলোর কথা মনে পড়ার কথা ছিলো বারবার। কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারনে আমার সেগুলোর কথা মনে না পড়ে তোমার বাজে ইনিংসগুলোর কথা মনে পড়ছে কেন জানি।
বারবার মনে পড়ছে তুমি খুব কম রান করে মাথা নিচু করে প্যাভিলিওনের দিকে হাটতে হাটতে চলে যাচ্ছো। ব্যাট দিয়ে অসহায় আক্রোশে মাঠে আঘাত করছো বারবার। ব্যার্থতার লজ্জ্বায় একবার চোখ সোজা করে তাকাতেও পারছো না তুমি।
আমার খুব মনে পড়ছে প্রতিপক্ষের দীর্ঘদেহী অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়ে তুমি লাল সবুজ পতাকার প্রতিনিধিত্ব করছো, ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করছো 'বাংলাদেশ ভালো খেলবে...'
আমার খুব মনে পড়ছে গত বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটার কথা। ব্যাটিং ভালো করো নি, কিন্তু বল হাতে কয়েকটা উইকেট পাবার পর তোমার সে কী উচ্ছাস। মাঠে শিশুর মতো কী লাফালাফি!
আশরাফুল, ফিক্সিং টিক্সিং যা-ই করো না কেন তুমি যে খুব বোকা একটা ছেলে এটা কিন্তু তুমি মাঠেও লুকাতে পারতেনা কখনো, এখনো লুকাতে পারছো না।
আর সবচেয়ে বাজে ব্যাপার কী জানো? এই বোকা ছেলেটাকে কীভাবে কীভাবে যেন ভালোবেসে ফেলেছি আমরা। তোমার ভুলে রাগ করেছি, অভিমান করেছি, আবার ভালোও বেসেছি আগের মতো।
আমি তোমার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট হবো। কিন্তু তারপরেও খুব ইচ্ছে করছে তোমার গালে জোরে একটা চিমটি দিয়ে বলে, 'অ্যাশের বাচ্চা আর যেন না হয় এরকম? ঠিক আছে?' কিন্তু সেই সুযোগ আমার নেই। বেঁচে গেলে গাল টানাটানি থেকে।
টিভি দেখলে খুব মন খারাপ হয়, তাই না? বাইরের পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা তোমাকে অবাক করছে বারবার জানি। এক কাজ করো, টিভি দেখার দরকার নেই। আজ সন্ধ্যায় একটু ছাদে চলে যেও। বুক ভরে একবার নিঃশ্বাস নিও। চোখ বন্ধ করে একবার ভেবে নিও তোমার অসাধারণ ইনিংসগুলোর কথা। আর সময় পেলে একটু ফেইসবুকে ঢু মেরো। তোমার ভুলগুলো ভুলে তোমাকে আবার আমরা ভালোবাসছি, এটা দেখতে হবে না?
ভালো থেকো। অনেক... অনেক।
ইতি,
আলিম আল রাজি
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এক পাগলা ভক্ত।
প্রকাশঃ বাংলানিউজ২৪
প্রিয় আশরাফুল,
আমি জানি তুমি ভালো নেই। ভালো থাকার কথাও না।
খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি কী অসহ্য মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে তুমি যাচ্ছো। আজ প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া একটা ছবিতে দেখলাম খুব মন খারাপ করে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো তুমি। আমি ছবিটার দিকে খুব বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারিনি। তোমার বিষণ্ন মুখটার দিকে একটু তাকিয়েই পাতা উলটে পরের পাতায় চলে গেছি।
প্রিয় আশরাফুল,
তোমার ব্যাট দিয়ে তুমি আমাদের জন্য কিছু অসাধারণ মুহূর্ত এনে দিয়েছিলে। আমার মনে আছে অস্ট্রেলিয়াকে যেবার তুমি একাই হারিয়ে দিয়েছিলে তখন আমি শিশুর মতো কেঁদেছিলাম আনন্দে। তোমার প্রতি প্রত্যাশার পারদও বেড়ে গিয়েছিলো অনেক। কিন্তু অসংখ্যবার আমাদের হতাশ করেছো তুমি। প্রতিবার তোমাকে গালি দিয়েছি। কখনো সবার সামনে, কখনো মনে মনে।
কিন্তু যখনই ভালো খেলেছো তখন আবার তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছি। এই তো কিছু দিন আগের কথা, তোমাকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ফেইসবুকে। সেখানে প্রথম বাক্যটাই ছিলো এরকম, 'আমাদের বোকা বোকা চেহারার অ্যাশ আজ যা করলো...'
প্রিয় আশরাফুল, তুমি যখন আমাদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছো তখন তোমাকে ভালোবেসে আমরা 'অ্যাশ' ডেকেছি।
এই লেখাটা যখন লিখছি তখন তোমাকে 'অ্যাশ' ডাকতে ইচ্ছে করছে। ভয় নেই, অন্য কোনো অনুভূত নিয়ে নয়, আগের মতো প্রচন্ড রকম ভালোবাসা নিয়ে।
প্রিয় অ্যাশ,
তোমাকে বাইরের পৃথিবী, বাইরের মানুষ কিংবা মিডিয়ার সাথে যতটা যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমি জানি তার চেয়ে অনেক বেশি যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজের সাথে।
আমি দেখিনি, কিন্তু ধারণা করতে পারি কী হচ্ছে তোমার বাসায় গত কিছুদিন ধরে? কী করছো তুমি বাসাটার ভেতরে?
তুমি নিশ্চয়ই কিছু খেতে পারোনি এই ক'দিনে। মা-বাবার জোরাজুরিতে হয়তো খেতে বসেছো কয়েকবার কিন্তু গলা দিয়ে এক ফোঁটা পানিও নামে নি তোমার। তুমি নিশ্চয়ই এক পৃথিবী সমান অপরাধবোধ আর কিছুটা অভিমান নিয়ে তোমার বাবার দিকে তাকিয়েছো বারবার। আর প্রতিবার গলায় এসে দলা পাকিয়েছে খুব অচেনা কিছু কষ্ট। খাওয়া ফেলে বাথরুমে গিয়েও তুমি নিশ্চয়ই থমকে যাচ্ছো বারবার। আয়নায় নিজের মুখটা দেখে অদ্ভূত সব অনুভূতি খেলা করছে তোমার ভেতরে।
তোমার বেডরুমে ও ড্রয়িং রুমে নিশ্চয়ই ক্রিকেটের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে সেখানে রাখা আছে অনেক ক্রেস্ট। দেয়ালে নিশ্চয়ই টানানো আছে অনেক ছবি।
প্রিয় অ্যাশ, আমি জানি এইসব তুমি যখনই দেখছো তখনই নিজের প্রতি এক ধরনের করুনা অনুভব করছো।
প্রিয় অ্যাশ,
সত্যি কথা বলতে কী তোমার প্রতি খুব রাগ হয়েছিলো প্রথম দিন। মনে মনে সেদিন কিছু গালিও দিয়েছিলাম। রাগটা কেটে যাবার পর অভিমান হয়েছিলো খুব। আমাদের বোকাবোকা চেহারার আশরাফুল এটা কীভাবে করলো? আমাদের ভালোবাসাকে এভাবে...? ছিহ্।
অভিমানটা কেটে যেতেও সময় লাগে নি, যখন তোমাকে টিভিতে খুব কাঁদতে দেখলাম।
আশরাফুল,তুমি শুধু নিজেই কাঁদোনি সেদিন, কাঁদিয়েছো সবাইকে। অন্যদের কথা জানি না, সেদিন প্রেস কনফারেন্স শেষ হবার পরেই যে কথাটা মাথায় এসেছিলো সেটা হলো, 'অ্যাশ, সাথে ছিলাম, এখনো আছি।'
অ্যাশ,
নিজেকে নিশ্চয়ই স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছো অনেক। আমি নতুন করে আর স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করবো না। শুধু নিজে কী অনুভব করছি সেটা সংক্ষেপে বলি।
তোমার অসাধারণ ইনিংসগুলোর কথা মনে পড়ার কথা ছিলো বারবার। কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারনে আমার সেগুলোর কথা মনে না পড়ে তোমার বাজে ইনিংসগুলোর কথা মনে পড়ছে কেন জানি।
বারবার মনে পড়ছে তুমি খুব কম রান করে মাথা নিচু করে প্যাভিলিওনের দিকে হাটতে হাটতে চলে যাচ্ছো। ব্যাট দিয়ে অসহায় আক্রোশে মাঠে আঘাত করছো বারবার। ব্যার্থতার লজ্জ্বায় একবার চোখ সোজা করে তাকাতেও পারছো না তুমি।
আমার খুব মনে পড়ছে প্রতিপক্ষের দীর্ঘদেহী অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়ে তুমি লাল সবুজ পতাকার প্রতিনিধিত্ব করছো, ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করছো 'বাংলাদেশ ভালো খেলবে...'
আমার খুব মনে পড়ছে গত বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটার কথা। ব্যাটিং ভালো করো নি, কিন্তু বল হাতে কয়েকটা উইকেট পাবার পর তোমার সে কী উচ্ছাস। মাঠে শিশুর মতো কী লাফালাফি!
আশরাফুল, ফিক্সিং টিক্সিং যা-ই করো না কেন তুমি যে খুব বোকা একটা ছেলে এটা কিন্তু তুমি মাঠেও লুকাতে পারতেনা কখনো, এখনো লুকাতে পারছো না।
আর সবচেয়ে বাজে ব্যাপার কী জানো? এই বোকা ছেলেটাকে কীভাবে কীভাবে যেন ভালোবেসে ফেলেছি আমরা। তোমার ভুলে রাগ করেছি, অভিমান করেছি, আবার ভালোও বেসেছি আগের মতো।
আমি তোমার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট হবো। কিন্তু তারপরেও খুব ইচ্ছে করছে তোমার গালে জোরে একটা চিমটি দিয়ে বলে, 'অ্যাশের বাচ্চা আর যেন না হয় এরকম? ঠিক আছে?' কিন্তু সেই সুযোগ আমার নেই। বেঁচে গেলে গাল টানাটানি থেকে।
টিভি দেখলে খুব মন খারাপ হয়, তাই না? বাইরের পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা তোমাকে অবাক করছে বারবার জানি। এক কাজ করো, টিভি দেখার দরকার নেই। আজ সন্ধ্যায় একটু ছাদে চলে যেও। বুক ভরে একবার নিঃশ্বাস নিও। চোখ বন্ধ করে একবার ভেবে নিও তোমার অসাধারণ ইনিংসগুলোর কথা। আর সময় পেলে একটু ফেইসবুকে ঢু মেরো। তোমার ভুলগুলো ভুলে তোমাকে আবার আমরা ভালোবাসছি, এটা দেখতে হবে না?
ভালো থেকো। অনেক... অনেক।
ইতি,
আলিম আল রাজি
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এক পাগলা ভক্ত।
প্রকাশঃ বাংলানিউজ২৪
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।