'যাচ্ছেতাই' - একটি ম্যাগাজিনের নাম। যে ম্যাগাজিনের কোনো সংখ্যা আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। হবেও না হয়তো আর।
আমার কৈশোরের স্বপ্নগুলোর সমার্থক ছিল এই 'যাচ্ছেতাই' নামের ম্যাগাজিনটা।
যৌথ পরিবার, বাড়িতে শাষণ করার মানুষের অভাব হয়নি কখনো। সারাদিন ঘুরঘুর করলেও সন্ধ্যার পরে লক্ষি ছেলের মতো পড়ার টেবিলে বসতে হতো। ঐ বসা পর্যন্তই। পড়া আর হতো না। আমি চুপচাপ বসে বসে 'যাচ্ছেতাই' ম্যাগাজিনটা সাজাতাম। আমার স্বপ্ন সাজাতাম। এ ফোর সাইজের কাগজ কাটা স্বপ্ন, স্ট্যাপলারের পিনে আটকানো মলাট বন্দি স্বপ্ন।
যাচ্ছেতাই নিয়ে পাগলামীটা কয়েকদিনের বা কয়েক মাসের ছিলো না। একটা দীর্ঘ সময় এই পাগলামীটাকে খুব যত্ন করে পুষেছি আমি। ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত। প্রায় ৪/৫ বছর।
কাঁপা কাঁপা হাতে আমি আমার যাচ্ছেতাই-এর লোগো বানাতাম। ম্যাগাজিনের স্লোগানকে লোগোর নিচে বসিয়ে দিতাম।
আমিই ছিলাম সম্পাদক, লেখক আর একমাত্র পাঠক। খুব যত্ন করে একেকটা 'সংখ্যা' বানানোর পর আমি পরম মমতায় হাতে নিতাম ছোট্ট যাচ্ছেতাই-কে।
উহু! খুব যে আহামরী কিছু হতো, তা না। অনেক কাটাকুটি থাকতো প্রতিটা পাতায়। গল্প, ফিচার অতোটা মানসম্পন্ন অতোটা না। ভুল বানানের ছড়াছড়ি ছিলো প্রতিটা লাইনে। থাকতো ইরেজারের ঘষাঘষি।
কিন্তু তারপরেও... আমি এখনো মনে করতে পারি, আনাড়ি হাতে করা 'যাচ্ছেতাই' হাতে নিয়ে আমার মুগ্ধতার কোনো সীমা থাকতো না তখন।
অনেক কিছুর জন্য দায়ী ৮ পৃষ্ঠার যাচ্ছেতাই।
ক্লাস নাইন পর্যন্ত জঘন্য রেজাল্ট করার পেছনের একমাত্র কারণ হলো এই ম্যাগাজিনটা। জঘন্য হবে নাইবা কেনো? সহপাঠিরা যখন চোখ মুখ বন্ধ করে পড়াশোনা করতো আমি তখন যাচ্ছেতাই নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম। মাথায় ঘুরতো - লোগোটাকে আরেকটু বাকিয়ে দেবো কি না, নতুন গল্পটার শেষে কী করবো, এই ফিচারটা লিখতে কোন বই দেখবো, এ সংখ্যার সম্পাদকীয়টা কীভাবে লিখবো এসব চিন্তাভাবনা।
'যাচ্ছেতাই'-এর অনেকগুলো সংখ্যাসহ একদিন ধরা পড়ে গেলাম।
ক্লাস নাইনের প্রথম সাময়ীক পরীক্ষায় হাইয়ার ম্যাথে ০৪ পাওয়ার পর মেজচাচা টেবিলে এসে হানা দিলেন। সব জব্দ করা হলো। ম্যাগাজিন, রঙ পেনসিল, গল্পের পান্ডুলীপি, কাটা কাগজ সব। চাচা জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন সবকিছু। খুব বৃষ্টি ছিল সেদিন। বৃষ্টিতে দ্রুত ভিজে গেলো যাচ্ছেতাই। বৃষ্টি আর রঙ পেনসিলের রঙ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো।
এরপর আর যাচ্ছেতাই এর কোনো সংখ্যা বের হয়নি। আমার রেজাল্টও ভালো হতে শুরু করলো হঠাৎ করে। বেশ কয়েকটি বেসরকারী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে ভয়ংকর রকম ভালো রেজাল্ট করে ফেললাম।
এসএসসি'র পর ভর্তি হলাম কলেজে। জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ। আর্মি ইন্সটিটিউট। পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে কেটেছে ২ বছর। যাচ্ছেতাই নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
এইচএসসি'র পর মেডিকেল, সাপ্লির ধকল। যাচ্ছেতাই নিয়ে ভাবার সময় হয়না এখনও।
এর মধ্যে অবশ্য বাইরের জগত দেখা হয়ে অনেক।
ব্লগে সময় দিয়েছি বেশ। ব্লগ ছেড়ে পত্রিকায়ও লেখালেখি করেছি টানা।
অর্জন একেবারে শূন্য বললে ঠিক হবে না। কীভাবে যেনো একবার সামহোয়ারইনব্লগের বর্ষসেরা ব্লগার হয়ে গেলাম। রস+আলো-তে অনেকগুলো লেখা খুব পাঠক প্রিয় হলো। আলোচিত হলো, সমালোচিত হলো। ব্লগস্পটের ব্লগটাতে পাঠক পেলাম অপ্রত্যাশিতভাবে। এসবের প্রতি আগ্রহও কমে গেলো একটা সময়।
কিন্তু এখনো 'যাচ্ছেতাই' নামের ছোট্ট ম্যাগাজিনটাকে খুব অনুভব করি আমি। খুব অনুভব করি মলাট বন্দি জলরঙা স্বপ্নগুলোকে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আবার এ ফোর সাইজের কিছু কাগজ নিয়ে বসি, খুব যত্ন করে সেগুলো কেটে আট পৃষ্ঠার ম্যাগাজিন বানাই, রংপেন্সিল দিয়ে আঁকাআঁকি শুরু করি ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায়।
...প্রিয় 'যাচ্ছেতাই', তোমার জন্য ভালোবাসা।
আমার কৈশোরের স্বপ্নগুলোর সমার্থক ছিল এই 'যাচ্ছেতাই' নামের ম্যাগাজিনটা।
যৌথ পরিবার, বাড়িতে শাষণ করার মানুষের অভাব হয়নি কখনো। সারাদিন ঘুরঘুর করলেও সন্ধ্যার পরে লক্ষি ছেলের মতো পড়ার টেবিলে বসতে হতো। ঐ বসা পর্যন্তই। পড়া আর হতো না। আমি চুপচাপ বসে বসে 'যাচ্ছেতাই' ম্যাগাজিনটা সাজাতাম। আমার স্বপ্ন সাজাতাম। এ ফোর সাইজের কাগজ কাটা স্বপ্ন, স্ট্যাপলারের পিনে আটকানো মলাট বন্দি স্বপ্ন।
যাচ্ছেতাই নিয়ে পাগলামীটা কয়েকদিনের বা কয়েক মাসের ছিলো না। একটা দীর্ঘ সময় এই পাগলামীটাকে খুব যত্ন করে পুষেছি আমি। ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত। প্রায় ৪/৫ বছর।
কাঁপা কাঁপা হাতে আমি আমার যাচ্ছেতাই-এর লোগো বানাতাম। ম্যাগাজিনের স্লোগানকে লোগোর নিচে বসিয়ে দিতাম।
আমিই ছিলাম সম্পাদক, লেখক আর একমাত্র পাঠক। খুব যত্ন করে একেকটা 'সংখ্যা' বানানোর পর আমি পরম মমতায় হাতে নিতাম ছোট্ট যাচ্ছেতাই-কে।
উহু! খুব যে আহামরী কিছু হতো, তা না। অনেক কাটাকুটি থাকতো প্রতিটা পাতায়। গল্প, ফিচার অতোটা মানসম্পন্ন অতোটা না। ভুল বানানের ছড়াছড়ি ছিলো প্রতিটা লাইনে। থাকতো ইরেজারের ঘষাঘষি।
কিন্তু তারপরেও... আমি এখনো মনে করতে পারি, আনাড়ি হাতে করা 'যাচ্ছেতাই' হাতে নিয়ে আমার মুগ্ধতার কোনো সীমা থাকতো না তখন।
অনেক কিছুর জন্য দায়ী ৮ পৃষ্ঠার যাচ্ছেতাই।
ক্লাস নাইন পর্যন্ত জঘন্য রেজাল্ট করার পেছনের একমাত্র কারণ হলো এই ম্যাগাজিনটা। জঘন্য হবে নাইবা কেনো? সহপাঠিরা যখন চোখ মুখ বন্ধ করে পড়াশোনা করতো আমি তখন যাচ্ছেতাই নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম। মাথায় ঘুরতো - লোগোটাকে আরেকটু বাকিয়ে দেবো কি না, নতুন গল্পটার শেষে কী করবো, এই ফিচারটা লিখতে কোন বই দেখবো, এ সংখ্যার সম্পাদকীয়টা কীভাবে লিখবো এসব চিন্তাভাবনা।
'যাচ্ছেতাই'-এর অনেকগুলো সংখ্যাসহ একদিন ধরা পড়ে গেলাম।
ক্লাস নাইনের প্রথম সাময়ীক পরীক্ষায় হাইয়ার ম্যাথে ০৪ পাওয়ার পর মেজচাচা টেবিলে এসে হানা দিলেন। সব জব্দ করা হলো। ম্যাগাজিন, রঙ পেনসিল, গল্পের পান্ডুলীপি, কাটা কাগজ সব। চাচা জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন সবকিছু। খুব বৃষ্টি ছিল সেদিন। বৃষ্টিতে দ্রুত ভিজে গেলো যাচ্ছেতাই। বৃষ্টি আর রঙ পেনসিলের রঙ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো।
এরপর আর যাচ্ছেতাই এর কোনো সংখ্যা বের হয়নি। আমার রেজাল্টও ভালো হতে শুরু করলো হঠাৎ করে। বেশ কয়েকটি বেসরকারী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে ভয়ংকর রকম ভালো রেজাল্ট করে ফেললাম।
এসএসসি'র পর ভর্তি হলাম কলেজে। জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ। আর্মি ইন্সটিটিউট। পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে কেটেছে ২ বছর। যাচ্ছেতাই নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
এইচএসসি'র পর মেডিকেল, সাপ্লির ধকল। যাচ্ছেতাই নিয়ে ভাবার সময় হয়না এখনও।
এর মধ্যে অবশ্য বাইরের জগত দেখা হয়ে অনেক।
ব্লগে সময় দিয়েছি বেশ। ব্লগ ছেড়ে পত্রিকায়ও লেখালেখি করেছি টানা।
অর্জন একেবারে শূন্য বললে ঠিক হবে না। কীভাবে যেনো একবার সামহোয়ারইনব্লগের বর্ষসেরা ব্লগার হয়ে গেলাম। রস+আলো-তে অনেকগুলো লেখা খুব পাঠক প্রিয় হলো। আলোচিত হলো, সমালোচিত হলো। ব্লগস্পটের ব্লগটাতে পাঠক পেলাম অপ্রত্যাশিতভাবে। এসবের প্রতি আগ্রহও কমে গেলো একটা সময়।
কিন্তু এখনো 'যাচ্ছেতাই' নামের ছোট্ট ম্যাগাজিনটাকে খুব অনুভব করি আমি। খুব অনুভব করি মলাট বন্দি জলরঙা স্বপ্নগুলোকে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আবার এ ফোর সাইজের কিছু কাগজ নিয়ে বসি, খুব যত্ন করে সেগুলো কেটে আট পৃষ্ঠার ম্যাগাজিন বানাই, রংপেন্সিল দিয়ে আঁকাআঁকি শুরু করি ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায়।
...প্রিয় 'যাচ্ছেতাই', তোমার জন্য ভালোবাসা।
যাচ্ছেতাই এর প্রতি রইল অনেক ভালবাসা
উত্তরমুছুনভালোবাসা :)
মুছুনকিন্তু 'নামহীন' কেনো?