যে বয়সে মানুষের ভাঙে হার্ট সে বয়সে আমার বন্ধুবান্ধবের ভাঙে হাঁটু। হায়!
মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তিন বন্ধুর হাঁটু ভেঙে চুরমার।
১.
প্রথমজনের নাম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সিএনজি করে কোথায় যেন যাচ্ছিলেন তিনি। ভালোই চলছিল সিএনজি। হঠাৎ ড্রাইভার গতি বাড়িয়ে দিল। দেলোয়ার হোসেনের ভাষায় ড্রাইভারের মাথায় মাল উঠে গেল।
যাই হোক, কিছুদূর যাওয়ার পরই সিএনজি গেল উলটে। পুরো এসে পড়ল দেলোয়ার হোসেনের পায়ে। ফলাফল হল সাংঘাতিক। ছিঁড়ে গেল ডান হাঁটুর এন্টেরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট আর মিডিয়াল মেনিসকাস। দেলোয়ার হোসেন হয়ে গেলেন ‘হাঁটু ভাঙা দ’।
ছোটবেলায় ‘হাঁটু ভাঙা দ’-এর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। এই জিনিস এভাবে প্রত্যক্ষ করব, ভাবিনি।
উন্নত চিকিৎসার্থে ‘হাঁটু ভাঙা দ’ মানে দেলোয়ার হোসেন গেলেন ভারতে। সেখান থেকে তিনি ভাঙা হার্ট নিয়ে ফিরে এলেন। তার ভাষায়, ‘মামা, ভারতে খালি রূপবতী তরুণী। তাদের দেখে আমার হাঁটুতে সুখের মতো ব্যথা’ দেখা দিল।
বুঝলাম, রূপবতীদের দেখলে হাঁটুর ব্যথাও সুখের হয়ে যায়।
২.
দ্বিতীয়জনের নাম আবুল হাসনাত সুজন। আবুল হোসেনের পদ্মা সেতু কেলেংকারির অভিযোগ ওঠার পর প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি নামের ‘আবুল’ অংশ বাদ দিয়ে হয়েছেন ‘হাসনাত সুজন’। কিছুদিন আগে এক বিকালে তিনি সফলভাবে দ্বিতীয়বারের মতো নিজের হাঁটু ভেঙে হয়ে গেছেন ‘হঁটুা ভাঙা হ’ মানে হাঁটু ভাঙা হাসনাত সুজন।
ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ বলের আঘাত! এতদিন জানতাম ক্রিকেট বলের আঘাতে পুরুষের 'অন্যকিছু' ফাটে, এবার জানলাম হাঁটুও ফাটে। বল লেগে হাসনাত সুজনের বাম হাঁটুর কোন একও লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেল।
ওইদিন সন্ধ্যার দিকে হাসনাত সুজনের প্রেমিকা ফোন দিল। আমি ফোন দেখে যথেষ্ট বিব্রত। ধরব নাকি ধরব না? আমি নিশ্চিত, ফোন ধরলেই মেয়ে প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করবে। কী সান্ত্বনা দেব শোকাতুর এই মেয়েকে?
আগে কিছু সান্ত্বনা বাণী ঠিক করে তারপর ফোন ধরলাম। ফোন ধরেই আমি স্তব্ধ!
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মেয়ে বললো, ‘রাজি, জানো? ওই পাজি ছেলের আবার ঠ্যাং ভেঙেছে।’ এটা বলেই মেয়ে খিলখিল করে হাসা শুরু করল। আমার সান্ত্বনা দেয়ার প্ল্যান মাঠে মারা গেল। হায়! হার্টহীনাদের কাছে হাঁটুর দাম কী আছে!
হাঁটু ভাঙার খবর শুনে প্রেমিকা হেসে কুটি কুটি হচ্ছে এই খবর ‘হাঁটু ভাঙা হ’কে দেয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। শুনে যদি তার হার্টও ভেঙে যায়!
৩.
তৃতীয়জনের নাম শেখর রয়। জীবনের ২১টি বসন্ত চলে যাওয়ার পর তার প্রেমের ফুল ফুটেছে, মানে একটা প্রেম হয়েছে। ফেসবুকে পরিচয় মেয়ের সঙ্গে। সেখান থেকেই প্রণয়। মেধাবী এবং মনোযোগী ছাত্র শেখর রয় প্রেমে পড়ার পর পুরোপুরি বদলে গেলেন। সারাদিন যে শেখর বই পড়তেন তিনি এখন শুধু চ্যাট করেন। পারলে চ্যাটেই মেয়ের কোলে উঠে বসে থাকেন এমন অবস্থা!
একদিন শেখর রয়কে বললাম, ‘দোস্ত! অনেক তো চ্যাট হল এবার দেখা-সাক্ষাৎ কর।’ শেখর লাজুক লতার মতো মুখ করে বললেন, ‘হ্যাঁ রে! ঠিক বলেছিস একদম’!
আমরা শেখরের কথা শুনে চমকিত হলাম। যে শেখর আগে বলত ‘ঠিক কইছস মামা’, তার মুখে এই ভাষা! কী জানি! প্রেমে পড়লে মনে হয় এরকমই হয়।
অবশেষে এক বিকালে শেখর লজ্জারাঙা হয়ে ডেটিংয়ে গেলেন। আমরা তাকে ফুঁ-টু দিয়ে দিলাম।
রাতে এক ভয়াবহ খবর পেলাম। শেখর রয় ভাঙা হাঁটু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হয়েছেন। আমরা দৌড় দিয়ে তাকে দেখতে গেলাম। শেখরকে জিজ্ঞেস করলাম কী ঘটনা?
শেখর রয় নীরস মুখে বিস্তারিত জানালেন।
‘এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও ফেসবুক কন্যা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি।
তার ফোনও বন্ধ। ঘণ্টাখানেক পর ঘটনাস্থলে ষণ্ডামার্কা দুই ছেলে এসে শেখর রয়কে পিটিয়ে তার ঠ্যাং ভেঙে দিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় ছেলে দুইটা বলে গেছে, ‘আবার লাইন মারার চেষ্টা করলে হাতও ভেঙে দেব।’
শেখরের মাথা থেকে প্রেমের ভূত নেমেছে। তার চেয়ে বড় কথা, তার মুখের ভাষা স্বাভাবিক হয়েছে।
বিচ্ছু (দৈনিক যুগান্তর) - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তিন বন্ধুর হাঁটু ভেঙে চুরমার।
১.
প্রথমজনের নাম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সিএনজি করে কোথায় যেন যাচ্ছিলেন তিনি। ভালোই চলছিল সিএনজি। হঠাৎ ড্রাইভার গতি বাড়িয়ে দিল। দেলোয়ার হোসেনের ভাষায় ড্রাইভারের মাথায় মাল উঠে গেল।
যাই হোক, কিছুদূর যাওয়ার পরই সিএনজি গেল উলটে। পুরো এসে পড়ল দেলোয়ার হোসেনের পায়ে। ফলাফল হল সাংঘাতিক। ছিঁড়ে গেল ডান হাঁটুর এন্টেরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট আর মিডিয়াল মেনিসকাস। দেলোয়ার হোসেন হয়ে গেলেন ‘হাঁটু ভাঙা দ’।
ছোটবেলায় ‘হাঁটু ভাঙা দ’-এর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। এই জিনিস এভাবে প্রত্যক্ষ করব, ভাবিনি।
উন্নত চিকিৎসার্থে ‘হাঁটু ভাঙা দ’ মানে দেলোয়ার হোসেন গেলেন ভারতে। সেখান থেকে তিনি ভাঙা হার্ট নিয়ে ফিরে এলেন। তার ভাষায়, ‘মামা, ভারতে খালি রূপবতী তরুণী। তাদের দেখে আমার হাঁটুতে সুখের মতো ব্যথা’ দেখা দিল।
বুঝলাম, রূপবতীদের দেখলে হাঁটুর ব্যথাও সুখের হয়ে যায়।
২.
দ্বিতীয়জনের নাম আবুল হাসনাত সুজন। আবুল হোসেনের পদ্মা সেতু কেলেংকারির অভিযোগ ওঠার পর প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি নামের ‘আবুল’ অংশ বাদ দিয়ে হয়েছেন ‘হাসনাত সুজন’। কিছুদিন আগে এক বিকালে তিনি সফলভাবে দ্বিতীয়বারের মতো নিজের হাঁটু ভেঙে হয়ে গেছেন ‘হঁটুা ভাঙা হ’ মানে হাঁটু ভাঙা হাসনাত সুজন।
ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ বলের আঘাত! এতদিন জানতাম ক্রিকেট বলের আঘাতে পুরুষের 'অন্যকিছু' ফাটে, এবার জানলাম হাঁটুও ফাটে। বল লেগে হাসনাত সুজনের বাম হাঁটুর কোন একও লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেল।
ওইদিন সন্ধ্যার দিকে হাসনাত সুজনের প্রেমিকা ফোন দিল। আমি ফোন দেখে যথেষ্ট বিব্রত। ধরব নাকি ধরব না? আমি নিশ্চিত, ফোন ধরলেই মেয়ে প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করবে। কী সান্ত্বনা দেব শোকাতুর এই মেয়েকে?
আগে কিছু সান্ত্বনা বাণী ঠিক করে তারপর ফোন ধরলাম। ফোন ধরেই আমি স্তব্ধ!
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মেয়ে বললো, ‘রাজি, জানো? ওই পাজি ছেলের আবার ঠ্যাং ভেঙেছে।’ এটা বলেই মেয়ে খিলখিল করে হাসা শুরু করল। আমার সান্ত্বনা দেয়ার প্ল্যান মাঠে মারা গেল। হায়! হার্টহীনাদের কাছে হাঁটুর দাম কী আছে!
হাঁটু ভাঙার খবর শুনে প্রেমিকা হেসে কুটি কুটি হচ্ছে এই খবর ‘হাঁটু ভাঙা হ’কে দেয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। শুনে যদি তার হার্টও ভেঙে যায়!
৩.
তৃতীয়জনের নাম শেখর রয়। জীবনের ২১টি বসন্ত চলে যাওয়ার পর তার প্রেমের ফুল ফুটেছে, মানে একটা প্রেম হয়েছে। ফেসবুকে পরিচয় মেয়ের সঙ্গে। সেখান থেকেই প্রণয়। মেধাবী এবং মনোযোগী ছাত্র শেখর রয় প্রেমে পড়ার পর পুরোপুরি বদলে গেলেন। সারাদিন যে শেখর বই পড়তেন তিনি এখন শুধু চ্যাট করেন। পারলে চ্যাটেই মেয়ের কোলে উঠে বসে থাকেন এমন অবস্থা!
একদিন শেখর রয়কে বললাম, ‘দোস্ত! অনেক তো চ্যাট হল এবার দেখা-সাক্ষাৎ কর।’ শেখর লাজুক লতার মতো মুখ করে বললেন, ‘হ্যাঁ রে! ঠিক বলেছিস একদম’!
আমরা শেখরের কথা শুনে চমকিত হলাম। যে শেখর আগে বলত ‘ঠিক কইছস মামা’, তার মুখে এই ভাষা! কী জানি! প্রেমে পড়লে মনে হয় এরকমই হয়।
অবশেষে এক বিকালে শেখর লজ্জারাঙা হয়ে ডেটিংয়ে গেলেন। আমরা তাকে ফুঁ-টু দিয়ে দিলাম।
রাতে এক ভয়াবহ খবর পেলাম। শেখর রয় ভাঙা হাঁটু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হয়েছেন। আমরা দৌড় দিয়ে তাকে দেখতে গেলাম। শেখরকে জিজ্ঞেস করলাম কী ঘটনা?
শেখর রয় নীরস মুখে বিস্তারিত জানালেন।
‘এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও ফেসবুক কন্যা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি।
তার ফোনও বন্ধ। ঘণ্টাখানেক পর ঘটনাস্থলে ষণ্ডামার্কা দুই ছেলে এসে শেখর রয়কে পিটিয়ে তার ঠ্যাং ভেঙে দিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় ছেলে দুইটা বলে গেছে, ‘আবার লাইন মারার চেষ্টা করলে হাতও ভেঙে দেব।’
শেখরের মাথা থেকে প্রেমের ভূত নেমেছে। তার চেয়ে বড় কথা, তার মুখের ভাষা স্বাভাবিক হয়েছে।
বিচ্ছু (দৈনিক যুগান্তর) - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।