স্যার, জানেন? বাংলাদেশে কাল জোসনা ছিলো না। ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিলো কালকের
রাতটা। স্যার, এমন তো কথা ছিলো না! জোসনা রাত আসার আগেই কেনো চলে গেলেন
এভাবে? আপনি কথা রাখেন নি।
আচ্ছা স্যার! অন্যভুবনে গতকাল কি জোসনা ছিলো? আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে অন্য ভুবনে কাল উথালপাতাল জোসনা ছিলো। বুদ্ধদেব বসুর গৃহত্যাগী জোসনা। সেই জোসনা দেখেই আপনি পাড়ি জমিয়েছেন অন্য ভুবনে। তাই না?
স্যার, একদম ভালো হয়নি কাজটা। একদম না। আমাদের এতো ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে এভাবে চলে গেলেন? এতো তাড়াতাড়ি?
স্যার, আমাকে চিনেছেন?
চেনার কথা না। আমি খুব বেয়াদব একটা ছেলে। যে সুযোগ পেলেই হিমু হতে চায়। যে আপনার সন্তান হিমুকে নিয়ে ফাজলামো করার ধৃষ্টতা দেখায়, আপনার লেখা নিয়ে কটু কথা বলারও ধৃষ্টতা দেখায়।
কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার - অসম্ভব রকম ভালোবাসি আপনাকে। অসম্ভব রকম। কিছু মান, কিছু অভিমান - সব সাময়ীক, খুব সাময়ীক।
আশংকাটা করছিলাম কিছুদিন ধরেই। অনেকবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি - শান্ত হও রাজি। নিজেকে প্রস্তুত করো। খুব ভালোবাসার কাউকে বেশিদিন আটকে রাখা যায়না।
পরক্ষণেই আবার নিজেকে প্রবোধ দিতাম - ধুর! কিচ্ছু হবে না। স্যার এতো ভালোবাসা ছেড়ে যাবেন না। যেতে পারেন না।
জানেন স্যার? প্রথমে বিশ্বাসই করিনি খবরটা। পত্রিকার শিরোনাম, টিভি নিউজ কিছুই বিশ্বাস করিনি। অসম্ভব ছেলেমানুষী নিয়ে পত্রিকাগুলো রিফ্রেশ দিচ্ছিলাম বারবার। মনে ক্ষীণ আশা - নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে! নিশ্চয়ই খবর বদলে যাবে।
আমার ঝাপসা চোখ আরো ঝাপসা হয়, কিন্তু খবর আর বদলায় না। পর্দায় লেখা থাকে- 'হুমায়ূন আহমেদ নেই'
কী নিষ্ঠুর আমরা! কী অবলীলায় বলতে পারি আপনি নেই।
সত্যিই কি অবলীলায় বলছি? মোটেও না।
বায়বীয় আবেগগুলো কী ভীষণ কষ্টে কান্না হয়ে যাচ্ছে বারবার!
স্যার, হিমু হওয়ার চেষ্টা করেছি অনেক। আমার ধারণা ছিলো অনেকটাই সফল হয়েছি হিমু হওয়ার পথে। কিন্তু হিমু যে হতে পারিনি তা বুঝেছি গতকাল রাতে।
আপনার হিমু সকল আবেগ অনুভূতির উর্ধে। আপনার হিমু কিছুই গায়ে মাখে না। আপনার হিমু কখনো কেঁদে বুক ভাসায় না।
স্যার আমি হিমু হতে পারিনি। একদমই পারিনি।
কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে আটকে ছিলো অনেকক্ষণ। প্রাণপণ চেষ্টা করেছি না কাঁদতে। আপনিই তো বলেছেন 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়'। শেষ পর্যন্ত পারিনি স্যার। কান্না আটকে রাখতে পারিনি এক ফোটাও।
স্যার, খুব একা করে দিয়ে গেছেন। হিমু, রূপা, শুভ্র, বাদল, মিসির আলী, মাজেদা খালা, ধানমন্ডি থানার অসি... সবাইকে নিয়ে গেছেন সাথে করে।
কেমন আছে তাঁরা সবাই? অন্যভুবনে হিমু কি এখনো জোসনা দেখে? রূপা কি নীল শাড়ি পরে? মিসির আলীর চশমায় কি ধুলো জমেছে অনেক?
স্যার প্লিজ সবাইকে দেখে রাখবেন। নিজের দিকেও খেয়াল রাখবেন ভালোমতো। সিগারেট কম খাবেন। ঠিক আছে?
স্যার, বাংলাদেশে তবুও জোসনা হবে। বৃষ্টি হবে। মন খারাপ করা সব জোসনা, মন খারাপ করা সব বৃষ্টি। আপনার একার না থাকাই সব থাকার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে যাবে।
ভালো থাকবেন স্যার।
ও হ্যাঁ! অনেক লিখবেন কিন্তু। অন্যভুবনে আপনার সাথে দেখা হলো অনেকগুলো বই নিয়ে আসবো। কেমন?
আপনার জন্য ভালোবাসা এবং ভালোবাসা।
সংযুক্তিঃ
যে মানুষটার আরো অনেক দিন লিখে যাওয়ার কথা ছিলো আমাদের শোক আর সুখগুলোকে, সে মানুষটার মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য শোক বই খুলবো - ভয়ংকরতম দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন। কিন্তু...
খুব জরুরী কিছু ছিলো না। তারপরেও... থাকুকনা কিছু কান্না একটা ওয়ালে!
আচ্ছা স্যার! অন্যভুবনে গতকাল কি জোসনা ছিলো? আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে অন্য ভুবনে কাল উথালপাতাল জোসনা ছিলো। বুদ্ধদেব বসুর গৃহত্যাগী জোসনা। সেই জোসনা দেখেই আপনি পাড়ি জমিয়েছেন অন্য ভুবনে। তাই না?
স্যার, একদম ভালো হয়নি কাজটা। একদম না। আমাদের এতো ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে এভাবে চলে গেলেন? এতো তাড়াতাড়ি?
স্যার, আমাকে চিনেছেন?
চেনার কথা না। আমি খুব বেয়াদব একটা ছেলে। যে সুযোগ পেলেই হিমু হতে চায়। যে আপনার সন্তান হিমুকে নিয়ে ফাজলামো করার ধৃষ্টতা দেখায়, আপনার লেখা নিয়ে কটু কথা বলারও ধৃষ্টতা দেখায়।
কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার - অসম্ভব রকম ভালোবাসি আপনাকে। অসম্ভব রকম। কিছু মান, কিছু অভিমান - সব সাময়ীক, খুব সাময়ীক।
আশংকাটা করছিলাম কিছুদিন ধরেই। অনেকবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি - শান্ত হও রাজি। নিজেকে প্রস্তুত করো। খুব ভালোবাসার কাউকে বেশিদিন আটকে রাখা যায়না।
পরক্ষণেই আবার নিজেকে প্রবোধ দিতাম - ধুর! কিচ্ছু হবে না। স্যার এতো ভালোবাসা ছেড়ে যাবেন না। যেতে পারেন না।
জানেন স্যার? প্রথমে বিশ্বাসই করিনি খবরটা। পত্রিকার শিরোনাম, টিভি নিউজ কিছুই বিশ্বাস করিনি। অসম্ভব ছেলেমানুষী নিয়ে পত্রিকাগুলো রিফ্রেশ দিচ্ছিলাম বারবার। মনে ক্ষীণ আশা - নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে! নিশ্চয়ই খবর বদলে যাবে।
আমার ঝাপসা চোখ আরো ঝাপসা হয়, কিন্তু খবর আর বদলায় না। পর্দায় লেখা থাকে- 'হুমায়ূন আহমেদ নেই'
কী নিষ্ঠুর আমরা! কী অবলীলায় বলতে পারি আপনি নেই।
সত্যিই কি অবলীলায় বলছি? মোটেও না।
বায়বীয় আবেগগুলো কী ভীষণ কষ্টে কান্না হয়ে যাচ্ছে বারবার!
স্যার, হিমু হওয়ার চেষ্টা করেছি অনেক। আমার ধারণা ছিলো অনেকটাই সফল হয়েছি হিমু হওয়ার পথে। কিন্তু হিমু যে হতে পারিনি তা বুঝেছি গতকাল রাতে।
আপনার হিমু সকল আবেগ অনুভূতির উর্ধে। আপনার হিমু কিছুই গায়ে মাখে না। আপনার হিমু কখনো কেঁদে বুক ভাসায় না।
স্যার আমি হিমু হতে পারিনি। একদমই পারিনি।
কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে আটকে ছিলো অনেকক্ষণ। প্রাণপণ চেষ্টা করেছি না কাঁদতে। আপনিই তো বলেছেন 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়'। শেষ পর্যন্ত পারিনি স্যার। কান্না আটকে রাখতে পারিনি এক ফোটাও।
স্যার, খুব একা করে দিয়ে গেছেন। হিমু, রূপা, শুভ্র, বাদল, মিসির আলী, মাজেদা খালা, ধানমন্ডি থানার অসি... সবাইকে নিয়ে গেছেন সাথে করে।
কেমন আছে তাঁরা সবাই? অন্যভুবনে হিমু কি এখনো জোসনা দেখে? রূপা কি নীল শাড়ি পরে? মিসির আলীর চশমায় কি ধুলো জমেছে অনেক?
স্যার প্লিজ সবাইকে দেখে রাখবেন। নিজের দিকেও খেয়াল রাখবেন ভালোমতো। সিগারেট কম খাবেন। ঠিক আছে?
স্যার, বাংলাদেশে তবুও জোসনা হবে। বৃষ্টি হবে। মন খারাপ করা সব জোসনা, মন খারাপ করা সব বৃষ্টি। আপনার একার না থাকাই সব থাকার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে যাবে।
ভালো থাকবেন স্যার।
ও হ্যাঁ! অনেক লিখবেন কিন্তু। অন্যভুবনে আপনার সাথে দেখা হলো অনেকগুলো বই নিয়ে আসবো। কেমন?
আপনার জন্য ভালোবাসা এবং ভালোবাসা।
সংযুক্তিঃ
যে মানুষটার আরো অনেক দিন লিখে যাওয়ার কথা ছিলো আমাদের শোক আর সুখগুলোকে, সে মানুষটার মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য শোক বই খুলবো - ভয়ংকরতম দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন। কিন্তু...
খুব জরুরী কিছু ছিলো না। তারপরেও... থাকুকনা কিছু কান্না একটা ওয়ালে!
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।