’৭১। অদ্ভুত একটা সংখ্যা। কেবল এই একটি সংখ্যার সঙ্গেই মিশে আছে কত সহস্র রকম আবেগ। গর্ব, শোক, আনন্দ, বিজয়, সংগ্রাম... সব, সবকিছু ধারণ করে আছে এই ’৭১। ১৯৭১।
আমার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। দেখিনি যুদ্ধের উত্তাল সময়টাকে। দেখিনি হানাদারদের বীভৎসতা, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব। কিন্তু তারপরও আশ্চর্যভাবে অনুভব করতে পারি সব। ১৯৭১ সংখ্যাটা খুব সহজে মনে করিয়ে দিয়ে যায় সবকিছু। এরকম কোন সংখ্যা কি আর কোন জাতির আছে? মনে হয় না।
আমার খুব সৌভাগ্য আমি একদম ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। আমার বয়সী বাচ্চারা যখন রূপকথার গল্প শুনত আমি তখন বাবার কাছে অসম্ভব কৌতূহল নিয়ে শুনতাম মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সন্ধ্যা হতো, বাবা আমাকে আস্তে আস্তে শুনাতেন মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা। - "রাতে হঠাৎ গোলাগোলি...আমরা গ্রাম ছেড়ে পালালাম... খুব ভোরে আবার এলাম গ্রামে... রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখলাম আহত এক মুক্তিযোদ্ধাকে... ধরাধরি করে নিয়ে এলাম তাকে..."
গল্প চলতো, আমি অলৌকিক মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকতাম বাবার মুখের দিকে।
রাজনৈতিক কথাবার্তার বেশিরভাগই বুঝতাম না। তবে এটুকু বুঝতে পারতাম- "পাকিস্তান খারাপ। অনেক খারাপ।”
একটু বড় হওয়ার পর নিজে নিজে পড়া শিখলাম।
ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলো পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আগ্রহ বেড়ে গেলো অনেক। তারপর আস্তে আস্তে পড়ে ফেললাম অনেকগুলো বই।
মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর আছে অদ্ভুত এক ক্ষমতা। কিছু বই পড়লে ঝর ঝর করে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। কিছু বই পড়লে গর্বে বুকটা ১০০ হাত ফুলে যায়। আবার কিছু বই কাপন ধরায় রক্তে। নিজেকে মনে হয় ’৭১-এর কোন এক দুরন্ত ছেলে। হাতে পতাকা নিয়ে গ্রামের পথ দিয়ে দৌড়াচ্ছে ছেলেটি।
পেরিয়ে গেছে স্বাধীনতার চার দশক। আমি রাজনীতি বুঝি না খুব বেশি। তবে আশপাশটা দেখে একটু বুঝি আমাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধানটা মনে হয় একটু বেশি। হতাশাবাদীরা এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
কোন এক অদ্ভুত কারণে অন্যসব কম বয়সী ছেলেমেয়ের মতো আমিও হতাশ হই না। বিশ্বাস করি যার একাত্তর আছে তার আর কী লাগে? যাদের মুক্তিযুদ্ধ আছে তাদের আর কী দরকার?
আমাদের ত্রিশ লাখ স্বপ্ন আছে। ত্রিশ লাখ আত্মত্যাগ আছে। সব প্রতিকূলতা আমরা জয় করবোই। আজ অথবা কাল।
লেখাটি যুগান্তরের উনিশ কূড়ি পাতায় প্রকাশিত। (২৩/০৩/২০১২)
আমার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। দেখিনি যুদ্ধের উত্তাল সময়টাকে। দেখিনি হানাদারদের বীভৎসতা, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব। কিন্তু তারপরও আশ্চর্যভাবে অনুভব করতে পারি সব। ১৯৭১ সংখ্যাটা খুব সহজে মনে করিয়ে দিয়ে যায় সবকিছু। এরকম কোন সংখ্যা কি আর কোন জাতির আছে? মনে হয় না।
আমার খুব সৌভাগ্য আমি একদম ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। আমার বয়সী বাচ্চারা যখন রূপকথার গল্প শুনত আমি তখন বাবার কাছে অসম্ভব কৌতূহল নিয়ে শুনতাম মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সন্ধ্যা হতো, বাবা আমাকে আস্তে আস্তে শুনাতেন মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা। - "রাতে হঠাৎ গোলাগোলি...আমরা গ্রাম ছেড়ে পালালাম... খুব ভোরে আবার এলাম গ্রামে... রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখলাম আহত এক মুক্তিযোদ্ধাকে... ধরাধরি করে নিয়ে এলাম তাকে..."
গল্প চলতো, আমি অলৌকিক মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকতাম বাবার মুখের দিকে।
রাজনৈতিক কথাবার্তার বেশিরভাগই বুঝতাম না। তবে এটুকু বুঝতে পারতাম- "পাকিস্তান খারাপ। অনেক খারাপ।”
একটু বড় হওয়ার পর নিজে নিজে পড়া শিখলাম।
ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলো পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আগ্রহ বেড়ে গেলো অনেক। তারপর আস্তে আস্তে পড়ে ফেললাম অনেকগুলো বই।
মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর আছে অদ্ভুত এক ক্ষমতা। কিছু বই পড়লে ঝর ঝর করে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। কিছু বই পড়লে গর্বে বুকটা ১০০ হাত ফুলে যায়। আবার কিছু বই কাপন ধরায় রক্তে। নিজেকে মনে হয় ’৭১-এর কোন এক দুরন্ত ছেলে। হাতে পতাকা নিয়ে গ্রামের পথ দিয়ে দৌড়াচ্ছে ছেলেটি।
পেরিয়ে গেছে স্বাধীনতার চার দশক। আমি রাজনীতি বুঝি না খুব বেশি। তবে আশপাশটা দেখে একটু বুঝি আমাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধানটা মনে হয় একটু বেশি। হতাশাবাদীরা এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
কোন এক অদ্ভুত কারণে অন্যসব কম বয়সী ছেলেমেয়ের মতো আমিও হতাশ হই না। বিশ্বাস করি যার একাত্তর আছে তার আর কী লাগে? যাদের মুক্তিযুদ্ধ আছে তাদের আর কী দরকার?
আমাদের ত্রিশ লাখ স্বপ্ন আছে। ত্রিশ লাখ আত্মত্যাগ আছে। সব প্রতিকূলতা আমরা জয় করবোই। আজ অথবা কাল।
লেখাটি যুগান্তরের উনিশ কূড়ি পাতায় প্রকাশিত। (২৩/০৩/২০১২)
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।