কলকাতার জোঁড়াসাকোতে জমিদার বাড়িতে ঘর আলো করে জন্ম নিলো এক ছেলে। তার নাম রাখা হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাবা মা’র আদরে বড় হতে থাকলো ছেলেটি।
যতোই বড় হতে থাকলো সবাই দেখলো ছেলেটি অন্য আট দশটা ছেলের মতো না। সে অনেক ব্যাতিক্রম। তার সাথের অন্য ছেলেরা যখন টিভি দেখে আর ক্রিকেট খেলে সময় কাটাতো এই ছেলেটা তখন সময় কাটাতো কম্পিউটারের সামনে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ওপেন করে সে সুন্দর সুন্দর অনুকাব্য লিখতো আর সেভ করে রাখতো।
তার সাথের ছেলে পেলে স্কুলে গেলেও সে স্কুলে যেতো না। জমিদার বাড়ির ছেলে হওয়ায় তার জন্য বাসায়ই রাখা হয়েছিলো প্রাইভেট টিউটর।
একটু বড় হওয়ার পরে সে ফেসবুকে একাউন্ট খুললো। অতি কম বয়সে তার চিন্তা ভাবনার পরিপক্কতা দেখে অনেকেই তখন মুগ্ধ হয়েছিলেন যদিও একবার তার একটা স্ট্যাটাস দেখে তার বাবা তাকে উত্তম প্যাদানি দিয়েছিলেন। কয়েকদিনের জন্য তার একাউন্ট ডি-একটিভও করতে হয়েছিলো। স্ট্যাটাসটি হলো “আমার ** ছোট্ট ** বদির ** মত্ত …”
যাই হোক, বয়স যখন ১৮ তখন ছেলেটা সামহোয়্যারইনব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করলো।
রবীন্দ্রনাথের লেখালেখির প্রতিভা ছিলো। তাই সে দু হাত খুলে লেখালেখি শুরু করলো। কিন্তু ব্লগ বড়ই অদ্ভুত যায়গা। এখানে কবিতাকে কেউ বেইল দেয় না। তাই ছেলেটির কবিতাকে কেউ পাত্তাই দিলো না।
রবি কবিতা লিখে পাবলিশ করতো। তার কবিতায় থাকতো ৫৫ হিট। আর তার পরে দেয়া আশিফ এন্তাজ রবি’র পোস্টে থাকতো ৫৫০ হিট।
ধীরে ধীরে হতাশা গ্রাস করতে থাকলো রবিকে।
একদিন সে বিরক্ত হয়ে বললো “ধুশ্লা! আর কবিতাই লিখবো না”। এভাবেই সে কবিতা লেখা বাদ দিয়ে দিলো চিরতরে।
কিন্তু কিছু একটা তো লিখতে হবে! চিন্তা ভাবনা করে সে সিদ্ধান্ত নিলো সে দিবে আস্তিক নাস্তিক পোস্ট। শুরু করলো আস্তিক নাস্তিক পোস্ট দেয়া। সাথে সাথে তার ব্লগ হিটে ভরে গেলো।
কিন্তু জাত কবি বলে কথা। রবি সিদ্ধান্ত নিলো কবিতা তাকে লিখতেই হবে। তবে সাইয়্যা নিক থেকে। কারণ সাইয়্যা নিক থেকে যা-ই লেখা হয় তা-ই হিট হয়।
সে “রবী”র সাথে মিল রেখে ব্লগে একটি নিক খুললো “রুবি”।
রুবি নিক থেকে সে আস্তে আস্তে কবিতা পোস্ট করতে লাগলো। এবার সে সফল। কারণ প্রতিটা কবিতাই হিট। একে একে রুবি নিক থেকে সে পাবলিশ করলো “সোনার তরী” “নিদ্রিতা” “স্বর্গ হইতে বিদায়” “জন্মদিনে” “সোনার বাধন” সহ অন্যান্ন কবিতা।
যে কবিতাগুলো নিজ থেকে দেয়ায় পাত্তা পেলো না সেগুলোই রুবি নিক থেকে দেয়ায় চরম হিট হলো। লুল-রা এসে কমেন্ট দিয়ে ভাসিয়ে ফেলতো প্রতিটা কবিতা।
রবি এগুলো দেখতো আর হাসতো।
ব্লগে রবী-র মুল নিকটি এর মাঝে বেশ পপুলার হয়ে গেলো। ফেসবুকে ফিমেল ফ্যান-রা নক করতে থাকলো ঘন ঘন। রবিও মহা খুশি। একটু টাংকি মারতে পারলে ক্ষতি কি!
কিন্তু টাংকি মারতে গিয়ে ফেসে গেলো রবি। সিরিয়াসলি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলো। এমন প্রেমে পড়লো প্রেম যাকে বলে।
মেয়েটাকে ভেবে ভেবে সে রাত দিন শুধু কবিতা লিখতো। আফটার অল কবি মানুষ বলে কথা। মেয়েটাকে কবিতা, গল্প, অনুকাব্য, ফেসবুক নোট লিখে ভাসিয়ে ফেললো রবীন্দ্রনাথ।
কিন্তু মেয়ের মনে ছিলো অন্যটা। সে রবী’র সাথে ভালোবাসার অভিনয় করলেও আসলে ভালোবাসতো আরেক ছেলেকে। আধুনিক মেয়ে তো!
যাই হোক, একদিন রবি জানতে পারলো আসল কাহিনী। মেয়েটা কেবল তার সাথে প্রতারনাই করেছে। কাহিনী জেনে পুরা ভেঙ্গে পড়লো রবীন্দ্রনাথ। তার তখন পুরা পাগল প্রায় অবস্থা।
মানষিক ভাবে এতো বিপর্যস্থ হয়ে গেলো যে কয়েকদিনের মাঝে সে উলটা পালটা জিনিষপত্র খাওয়া শুরু করলো।
“লোকে তবে করে কি সুখের তরে এমন দুঃখেরই আশ” টাইপ ডায়লগ দেবার পরে প্রায়ই সে বন্ধুদের বলতো “মামা, একটা চুরুট দে, কয়েকটা টান দেই”
এভাবেই চলছিলো রবীন্দ্রনাথের দিন। চুরুটে টান দিয়ে সে ব্লগিং করতে বসতো। পোস্ট দিতো।
একদিন রবী ভাবলো অনেক তো হলো এবার একটা আঠারো প্লাস পোস্ট দেই। যেই ভাবা সেই কাজ। রবী একদিন চুরুটে টান দিয়ে লিখতে বসলো একটি ১৮+ পোস্ট। কিন্তু উলটা পালটা জিনিষ পত্র খেয়ে লেখায় ১৮+ পোস্টটা ভয়ংকর রকম অশ্লিল হয়ে গেলো। রবী সেটা পাত্তা দিলো না। “গীতাঞ্জলী (১৮+)” শিরোনাম দিয়ে সে পোস্ট পাবলিশ করে দিলো।
ভয়ংকর ১৮+ পোস্ট দেখে কিছুক্ষনের মধ্যে ব্লগে সাড়া পড়ে গেলো।
মানুষ এসে গালাগালি করলো, রিপোর্ট করলো। মডারেটররা রিপোর্ট দেখে কিছুক্ষনের মধ্যেই পোস্ট ডিলিট করলেন এবং রবীন্দ্রনাথকে আই পি সহ ব্যান করলেন।
এভাবে গীতাঞ্জলী লেখার কারণে ২০১২ সালে রবীন্দ্রনাথকে ব্যান খেতে হয়। তখনই তার লেখালেখি জীবনের অবসান ঘটে।
*************************************************************************
চার পাঁচ মাস আগে লেখা। সামহোয়্যারইন ব্লগে এর আগে প্রকাশ করলেও বিশেষ কারনে পরে ড্রাফট করে ফেলি।
আজ আবার পাবলিশ করে দিলাম। :)
যতোই বড় হতে থাকলো সবাই দেখলো ছেলেটি অন্য আট দশটা ছেলের মতো না। সে অনেক ব্যাতিক্রম। তার সাথের অন্য ছেলেরা যখন টিভি দেখে আর ক্রিকেট খেলে সময় কাটাতো এই ছেলেটা তখন সময় কাটাতো কম্পিউটারের সামনে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ওপেন করে সে সুন্দর সুন্দর অনুকাব্য লিখতো আর সেভ করে রাখতো।
তার সাথের ছেলে পেলে স্কুলে গেলেও সে স্কুলে যেতো না। জমিদার বাড়ির ছেলে হওয়ায় তার জন্য বাসায়ই রাখা হয়েছিলো প্রাইভেট টিউটর।
একটু বড় হওয়ার পরে সে ফেসবুকে একাউন্ট খুললো। অতি কম বয়সে তার চিন্তা ভাবনার পরিপক্কতা দেখে অনেকেই তখন মুগ্ধ হয়েছিলেন যদিও একবার তার একটা স্ট্যাটাস দেখে তার বাবা তাকে উত্তম প্যাদানি দিয়েছিলেন। কয়েকদিনের জন্য তার একাউন্ট ডি-একটিভও করতে হয়েছিলো। স্ট্যাটাসটি হলো “আমার ** ছোট্ট ** বদির ** মত্ত …”
যাই হোক, বয়স যখন ১৮ তখন ছেলেটা সামহোয়্যারইনব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করলো।
রবীন্দ্রনাথের লেখালেখির প্রতিভা ছিলো। তাই সে দু হাত খুলে লেখালেখি শুরু করলো। কিন্তু ব্লগ বড়ই অদ্ভুত যায়গা। এখানে কবিতাকে কেউ বেইল দেয় না। তাই ছেলেটির কবিতাকে কেউ পাত্তাই দিলো না।
রবি কবিতা লিখে পাবলিশ করতো। তার কবিতায় থাকতো ৫৫ হিট। আর তার পরে দেয়া আশিফ এন্তাজ রবি’র পোস্টে থাকতো ৫৫০ হিট।
ধীরে ধীরে হতাশা গ্রাস করতে থাকলো রবিকে।
একদিন সে বিরক্ত হয়ে বললো “ধুশ্লা! আর কবিতাই লিখবো না”। এভাবেই সে কবিতা লেখা বাদ দিয়ে দিলো চিরতরে।
কিন্তু কিছু একটা তো লিখতে হবে! চিন্তা ভাবনা করে সে সিদ্ধান্ত নিলো সে দিবে আস্তিক নাস্তিক পোস্ট। শুরু করলো আস্তিক নাস্তিক পোস্ট দেয়া। সাথে সাথে তার ব্লগ হিটে ভরে গেলো।
কিন্তু জাত কবি বলে কথা। রবি সিদ্ধান্ত নিলো কবিতা তাকে লিখতেই হবে। তবে সাইয়্যা নিক থেকে। কারণ সাইয়্যা নিক থেকে যা-ই লেখা হয় তা-ই হিট হয়।
সে “রবী”র সাথে মিল রেখে ব্লগে একটি নিক খুললো “রুবি”।
রুবি নিক থেকে সে আস্তে আস্তে কবিতা পোস্ট করতে লাগলো। এবার সে সফল। কারণ প্রতিটা কবিতাই হিট। একে একে রুবি নিক থেকে সে পাবলিশ করলো “সোনার তরী” “নিদ্রিতা” “স্বর্গ হইতে বিদায়” “জন্মদিনে” “সোনার বাধন” সহ অন্যান্ন কবিতা।
যে কবিতাগুলো নিজ থেকে দেয়ায় পাত্তা পেলো না সেগুলোই রুবি নিক থেকে দেয়ায় চরম হিট হলো। লুল-রা এসে কমেন্ট দিয়ে ভাসিয়ে ফেলতো প্রতিটা কবিতা।
রবি এগুলো দেখতো আর হাসতো।
ব্লগে রবী-র মুল নিকটি এর মাঝে বেশ পপুলার হয়ে গেলো। ফেসবুকে ফিমেল ফ্যান-রা নক করতে থাকলো ঘন ঘন। রবিও মহা খুশি। একটু টাংকি মারতে পারলে ক্ষতি কি!
কিন্তু টাংকি মারতে গিয়ে ফেসে গেলো রবি। সিরিয়াসলি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলো। এমন প্রেমে পড়লো প্রেম যাকে বলে।
মেয়েটাকে ভেবে ভেবে সে রাত দিন শুধু কবিতা লিখতো। আফটার অল কবি মানুষ বলে কথা। মেয়েটাকে কবিতা, গল্প, অনুকাব্য, ফেসবুক নোট লিখে ভাসিয়ে ফেললো রবীন্দ্রনাথ।
কিন্তু মেয়ের মনে ছিলো অন্যটা। সে রবী’র সাথে ভালোবাসার অভিনয় করলেও আসলে ভালোবাসতো আরেক ছেলেকে। আধুনিক মেয়ে তো!
যাই হোক, একদিন রবি জানতে পারলো আসল কাহিনী। মেয়েটা কেবল তার সাথে প্রতারনাই করেছে। কাহিনী জেনে পুরা ভেঙ্গে পড়লো রবীন্দ্রনাথ। তার তখন পুরা পাগল প্রায় অবস্থা।
মানষিক ভাবে এতো বিপর্যস্থ হয়ে গেলো যে কয়েকদিনের মাঝে সে উলটা পালটা জিনিষপত্র খাওয়া শুরু করলো।
“লোকে তবে করে কি সুখের তরে এমন দুঃখেরই আশ” টাইপ ডায়লগ দেবার পরে প্রায়ই সে বন্ধুদের বলতো “মামা, একটা চুরুট দে, কয়েকটা টান দেই”
এভাবেই চলছিলো রবীন্দ্রনাথের দিন। চুরুটে টান দিয়ে সে ব্লগিং করতে বসতো। পোস্ট দিতো।
একদিন রবী ভাবলো অনেক তো হলো এবার একটা আঠারো প্লাস পোস্ট দেই। যেই ভাবা সেই কাজ। রবী একদিন চুরুটে টান দিয়ে লিখতে বসলো একটি ১৮+ পোস্ট। কিন্তু উলটা পালটা জিনিষ পত্র খেয়ে লেখায় ১৮+ পোস্টটা ভয়ংকর রকম অশ্লিল হয়ে গেলো। রবী সেটা পাত্তা দিলো না। “গীতাঞ্জলী (১৮+)” শিরোনাম দিয়ে সে পোস্ট পাবলিশ করে দিলো।
ভয়ংকর ১৮+ পোস্ট দেখে কিছুক্ষনের মধ্যে ব্লগে সাড়া পড়ে গেলো।
মানুষ এসে গালাগালি করলো, রিপোর্ট করলো। মডারেটররা রিপোর্ট দেখে কিছুক্ষনের মধ্যেই পোস্ট ডিলিট করলেন এবং রবীন্দ্রনাথকে আই পি সহ ব্যান করলেন।
এভাবে গীতাঞ্জলী লেখার কারণে ২০১২ সালে রবীন্দ্রনাথকে ব্যান খেতে হয়। তখনই তার লেখালেখি জীবনের অবসান ঘটে।
*************************************************************************
চার পাঁচ মাস আগে লেখা। সামহোয়্যারইন ব্লগে এর আগে প্রকাশ করলেও বিশেষ কারনে পরে ড্রাফট করে ফেলি।
আজ আবার পাবলিশ করে দিলাম। :)