আবুলের মেজাজ কিছুটা খারাপ।
সে সকাল থেকে মুখ বেজার করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বারবার মুখ হাসি হাসি হয়ে যাচ্ছে। আজ সে কোরবানির জন্য গরু কিনতে যাবে। বউ বলে দিয়েছে এই দিনে অন্তত আবুলের মুখে সিরিয়াস ভাব আসা দরকার। বউ সত্যিই বলেছে। গরু কেনা তো মামুলি ব্যপার না। বেশ সিরিয়াস ব্যাপার। এই দিনে মুখে সিরিয়াস ভাব আনাটা বেশ জরুরী। এ জন্য আবুল সকাল থেকেই মুখে জোর করে সিরিয়াস ভাব আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যতোবারই গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করছে ততোবার মুখে আরো বেশি হাসি চলে আসছে। খুবই মুশকিলের ব্যাপার।
আবুলের বাজেট বেশি না। ২৫০০০ টাকা। আজকালকার বাজারের জন্য এমন কোন টাকা না। আবুল অবশ্য সেটা নিয়ে বেশি চিন্তিত না। তার মোটামোটি সাইজের একটা গরু হলেই চলবে।
তাছাড়া তার সাথে তার এক বন্ধু আছে। কম টাকা দিয়ে ভালো গরু কেনার ব্যাপারে বন্ধুর নাকি ভালো অভিজ্ঞতা।
বন্ধুর নাম কামাল। দুষ্টরা ডাকে মাল।
কামাল থাকতে আবুলের অর্থ নিয়ে অঝথাই চিন্তা করার কিছু নাই। “অর্থ ও পরিকল্পনা”র দায়ীত্বটা সে কামালের উপরই দিয়ে রাখতে চায়। সে কেবল সাথে থাকবে।
সন্ধ্যায় বের হলো আবুল ও কামাল। সন্ধা-ই নাকি হরু কেনার উপযুক্ত সময়। এ কথা বলেছে কামাল। কামালের থিওরি অনুযায়ী সন্ধার কম আলো-তে যে গরুর চোখ জ্বল জ্বল করবে সেটাই নাকি উৎকৃষ্ট গরু।
আবুল কামালের থিওরি শুনে চমকৃত হলো। কামাল ছেলেটা আসলেই জ্ঞানী। কামালের জ্ঞান দেখে আবুল মুচকী হাসলো।
বেশ মুশকিল হয়ে গেলো। পুরো বাজার ঘুরেও গরু ম্যানেজ করতে পারছে না আবুল ও কামাল।
সব গরুর চোখই জ্বল জ্বল করে। সব গরুকেই মনে হয় পারফেক্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকায় কুলায় না। উলটা দোকানদার তাদেরকে কথা শুনিয়ে দেয়। একটা উদাহারণ দেয়া যেতে পারে।
মোটামোটি সাইজের এক গরুর কাছে গিয়ে সেটার দাম জিজ্ঞেস করলো কামাল
- ভাই এটার দাম কতো?
- এক লাখ।
- ভাই ২৫ হাজার দেবো। হবে?
গরুওয়ালা অন্য দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো “গরু কোথাকার।”
ঠিক তখনই আবুল নিজের উপর উষ্ণ পানির ধারা অনুভব করলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা গরু তার উপরই প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনা করে ফেলেছে।
কামাল ও আবুল অতি দ্রুত যায়গা ত্যাগ করলো।
রাত ১০ টার দিকে অবশেষে আবুল ও কামালের একটা গরু পছন্দ হলো। যদিও গরুর সাইজ হালকা ছোট। ব্যাপার না। ২৫০০০ টাকা দিয়ে নিশ্চয়ই হাতি পাওয়া যাবে না। ছোট গরুই ভালো।
গরু নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো তারা।
কিছু রাস্তা আসার পর হালকা “পরিকল্পনা” আসলো কামালের মাথায়। সাথে সাথে সে সেটা জানালো সে আবুলকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা হেটে যাবে না। দুজনেই গরুর পিঠে চড়ে বাড়ি ফিরবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। আবুল ও কামাল দুজনেই উঠে পড়লো গরুর পিঠে।
গরুটা ভালোই। বেশ ভালো হাটছিলো। গরুর পিঠে বসে গল্প করতে করতে এগুচ্ছিলো দুই বন্ধু।
কামাল এক পর্যায়ে বললো,
- আবুল, শেয়ারে কোরবানি দিলে কেমন হয়? তুমি আর আমি দুজনই শেয়ার।
আবুল মুচকি হেসে বললো, “শেয়ারে করবানি দেয়ার ব্যাপারে আমার জানাশোনা কম।”
- আমার অনেক জানাশোনা। শেয়ারে দিলে সওয়াব বেশি।
শুনে আবুল মুচকি হাসি দিতে যাচ্ছিলো আরেকটা। কিন্তু তার আগেই একটা ঘটনা ঘটে গেলো। হঠাৎ করে দৌড় শুরু করলো গরুটা। হঠাৎ দৌড় করায় গরুর পিঠ থেকে ধুম করে পড়ে গেলো দুই বন্ধু।
গরুর পিঠ থেকে পড়ে এই প্রথম আবুল খেয়াল করলো গরুর লেজটা নিচের দিকে না। লেজটা উপরের দিকে উঠে আছে। ব্যাপারটা সে জানালো কামালকে।
কামাল হালকা গম্ভির হয়ে বললো, “বন্ধু কিঞ্চিত মিসটেক হয়ে গেছে। আমরা সম্ভবত গরু কিনতে গিয়ে ছাগল কিনে ফেলেছি।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবুল বললো, “তাই তো দেখছি। যাই হোক, যা হবার হয়ে গেছে। এখন ছাগলটাকে ধরার ব্যাবস্তা করতে হবে।”
কিছুক্ষন পর দেখা গেলো মাঝরাতে একটা ছাগলের পিছনে দুইটা মানুষ প্রানপনে দৌড়াচ্ছে।
খবর ২৪-এর ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত
সে সকাল থেকে মুখ বেজার করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বারবার মুখ হাসি হাসি হয়ে যাচ্ছে। আজ সে কোরবানির জন্য গরু কিনতে যাবে। বউ বলে দিয়েছে এই দিনে অন্তত আবুলের মুখে সিরিয়াস ভাব আসা দরকার। বউ সত্যিই বলেছে। গরু কেনা তো মামুলি ব্যপার না। বেশ সিরিয়াস ব্যাপার। এই দিনে মুখে সিরিয়াস ভাব আনাটা বেশ জরুরী। এ জন্য আবুল সকাল থেকেই মুখে জোর করে সিরিয়াস ভাব আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যতোবারই গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করছে ততোবার মুখে আরো বেশি হাসি চলে আসছে। খুবই মুশকিলের ব্যাপার।
আবুলের বাজেট বেশি না। ২৫০০০ টাকা। আজকালকার বাজারের জন্য এমন কোন টাকা না। আবুল অবশ্য সেটা নিয়ে বেশি চিন্তিত না। তার মোটামোটি সাইজের একটা গরু হলেই চলবে।
তাছাড়া তার সাথে তার এক বন্ধু আছে। কম টাকা দিয়ে ভালো গরু কেনার ব্যাপারে বন্ধুর নাকি ভালো অভিজ্ঞতা।
বন্ধুর নাম কামাল। দুষ্টরা ডাকে মাল।
কামাল থাকতে আবুলের অর্থ নিয়ে অঝথাই চিন্তা করার কিছু নাই। “অর্থ ও পরিকল্পনা”র দায়ীত্বটা সে কামালের উপরই দিয়ে রাখতে চায়। সে কেবল সাথে থাকবে।
সন্ধ্যায় বের হলো আবুল ও কামাল। সন্ধা-ই নাকি হরু কেনার উপযুক্ত সময়। এ কথা বলেছে কামাল। কামালের থিওরি অনুযায়ী সন্ধার কম আলো-তে যে গরুর চোখ জ্বল জ্বল করবে সেটাই নাকি উৎকৃষ্ট গরু।
আবুল কামালের থিওরি শুনে চমকৃত হলো। কামাল ছেলেটা আসলেই জ্ঞানী। কামালের জ্ঞান দেখে আবুল মুচকী হাসলো।
বেশ মুশকিল হয়ে গেলো। পুরো বাজার ঘুরেও গরু ম্যানেজ করতে পারছে না আবুল ও কামাল।
সব গরুর চোখই জ্বল জ্বল করে। সব গরুকেই মনে হয় পারফেক্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকায় কুলায় না। উলটা দোকানদার তাদেরকে কথা শুনিয়ে দেয়। একটা উদাহারণ দেয়া যেতে পারে।
মোটামোটি সাইজের এক গরুর কাছে গিয়ে সেটার দাম জিজ্ঞেস করলো কামাল
- ভাই এটার দাম কতো?
- এক লাখ।
- ভাই ২৫ হাজার দেবো। হবে?
গরুওয়ালা অন্য দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো “গরু কোথাকার।”
ঠিক তখনই আবুল নিজের উপর উষ্ণ পানির ধারা অনুভব করলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা গরু তার উপরই প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনা করে ফেলেছে।
কামাল ও আবুল অতি দ্রুত যায়গা ত্যাগ করলো।
রাত ১০ টার দিকে অবশেষে আবুল ও কামালের একটা গরু পছন্দ হলো। যদিও গরুর সাইজ হালকা ছোট। ব্যাপার না। ২৫০০০ টাকা দিয়ে নিশ্চয়ই হাতি পাওয়া যাবে না। ছোট গরুই ভালো।
গরু নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো তারা।
কিছু রাস্তা আসার পর হালকা “পরিকল্পনা” আসলো কামালের মাথায়। সাথে সাথে সে সেটা জানালো সে আবুলকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা হেটে যাবে না। দুজনেই গরুর পিঠে চড়ে বাড়ি ফিরবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। আবুল ও কামাল দুজনেই উঠে পড়লো গরুর পিঠে।
গরুটা ভালোই। বেশ ভালো হাটছিলো। গরুর পিঠে বসে গল্প করতে করতে এগুচ্ছিলো দুই বন্ধু।
কামাল এক পর্যায়ে বললো,
- আবুল, শেয়ারে কোরবানি দিলে কেমন হয়? তুমি আর আমি দুজনই শেয়ার।
আবুল মুচকি হেসে বললো, “শেয়ারে করবানি দেয়ার ব্যাপারে আমার জানাশোনা কম।”
- আমার অনেক জানাশোনা। শেয়ারে দিলে সওয়াব বেশি।
শুনে আবুল মুচকি হাসি দিতে যাচ্ছিলো আরেকটা। কিন্তু তার আগেই একটা ঘটনা ঘটে গেলো। হঠাৎ করে দৌড় শুরু করলো গরুটা। হঠাৎ দৌড় করায় গরুর পিঠ থেকে ধুম করে পড়ে গেলো দুই বন্ধু।
গরুর পিঠ থেকে পড়ে এই প্রথম আবুল খেয়াল করলো গরুর লেজটা নিচের দিকে না। লেজটা উপরের দিকে উঠে আছে। ব্যাপারটা সে জানালো কামালকে।
কামাল হালকা গম্ভির হয়ে বললো, “বন্ধু কিঞ্চিত মিসটেক হয়ে গেছে। আমরা সম্ভবত গরু কিনতে গিয়ে ছাগল কিনে ফেলেছি।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবুল বললো, “তাই তো দেখছি। যাই হোক, যা হবার হয়ে গেছে। এখন ছাগলটাকে ধরার ব্যাবস্তা করতে হবে।”
কিছুক্ষন পর দেখা গেলো মাঝরাতে একটা ছাগলের পিছনে দুইটা মানুষ প্রানপনে দৌড়াচ্ছে।
খবর ২৪-এর ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।