কিছুক্ষণ পরেই ওয়ার্ড শুরু হবে। প্রথম ওয়ার্ড। সবার ভেতরে অন্যরকম একটা ভাব। সবাই চাচ্ছে মুখে পর্যাপ্ত পরিমান ভাব গাম্ভির্য আনতে। কিন্তু কেউ পারছে না। একটু পর পর দাত বেরিয়ে যাচ্ছে।
সব চেয়ে দেখার মতো অবস্থায় আছে সাদিয়া। তার চেহারাতেই ডাক্তারনি টাইপ একটা সিরিয়াসনেস আছে। সে নিজেও বোধ হয় সেটা জানে। তাই মুখ গম্ভির করার চেষ্টাটা সেই করে যাচ্ছে সব চেয়ে বেশি। কিন্তু শেষমেষ সে নিজেই সব বেশি হাসছে। মুচকি টাইপ হাসি। হাসার সাথে সাথে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে, এদিক ওদিক তাকায়। এমন ভাব যেনো "আমি হাসছি নাকি? আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে সিঙ্গাড়া দেখছি।"
যাই হোক। আমাদের প্রথম ওয়ার্ড হলো সার্জারি। সার্জারি ওয়ার্ডটা আসলে কোথায় সেটাই এখনো জানি না। সবাই ক্যান্টিনে বসে আছি।
হঠাৎ কোথা থেকে মনে হয় গায়েবী নির্দেশ এলো, "উপরে উঠো। তোমাদের সার্জারি ওয়ার্ড উপরে"। সবাই দৌড় দিয়ে চলে গেলো লিফটের দিকে। এই দৌড়ে সামনের সারিতে আছে তন্ময়। আহা ছেলেটা! আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে যেতে তার এই দৌড় অত্যান্ত প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু দৌড়বিধ হিসেবে তার পারফরম্যান্স খুব সুবিধাজনক হলো না। দৌড়াতে গিয়ে হাসপাতালের পিচ্ছিল ফ্লোরে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলো। "পড়বি তো পড় মাসির ঘাড়ে"। মানে সে গিয়ে পড়লো হাসপাতালের কর্তব্যরত এক মাসির উপর। মাসি তার দিকে চোখ কটমট করে তাকালেন। তন্ময় অতি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলো।
লিফটে যায়গা পেলাম না কয়েকজন। পায়ে হেটেই উঠতে লাগলাম। সাত তলা "উর্ধ্বে" যেতে হবে। আমি কবি নজরুলের বানি মনে করে করে সিড়ি বাইতে থাকলাম। "চল চল চল, উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল"।
যারা লিফটে করে এসেছে তাদের আগেই আমরা পৌছে গেলাম সাত তলায়। গিয়ে কিছুই বুঝি না। কোন ওয়ার্ডে যাবো? তবে "ফিমেল ওয়ার্ডের" দিকে দেলোয়ারের দৃষ্টি একটু বেশিই ছিলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি ব্যাপার ভ্রাতা? খালি ফিমেল ওয়ার্ডের দিকে উকি দিচ্ছো কেনো?" সে আমার কথার উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো, "এক লাড়কি কো দেখা সানাম"।
আবার গায়েবী নোটিশ এলো। "হে ছাত্রছাত্রিরা। তোমরা সার্জারি পুরুষ ওয়ার্ডে যাও"। পুরুষ ওয়ার্ডের দিকে দৌড় দিলো সবাই। তবে পুরুষ ওয়ার্ডে যেতে হবে এটা শুনে দেলোয়ার মুখে হালকা বিষাধের ছাপ পড়লো লক্ষ্য করলাম।
ওয়ার্ডে ঢুকলাম সবাই। জানতে পারলাম স্যারের আসতে দেরি হবে আধা ঘন্টা। স্যার গায়েবি নির্দেশ পাঠালেন "তোমরা ওয়ার্ডে প্যাশেন্ট দেখো। আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তবুও তোমরা প্যাশেন্ট দেখে যাবে"
নির্দেশগুলা কিভাবে আসছে কিছুই ধরতে পারলাম না। হঠাৎ দেখা যায় সবাই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাই এটাকে নাম দিয়েছি গায়েবি নির্দেশ।
যাই হোক, নির্দেশ পেয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই প্যাশেন্ট দেখতে নেমে পড়লাম। অবশ্য আমাদের কাছে তেমন কিছুই নেই ব্যাগ আর মোবাইল ছাড়া।
শেখর মুখে ব্যাপক ভাব নিয়ে গেলো এক প্যাশেন্টের কাছে। জিজ্ঞেস করলো, "চাচা মিয়া কি অবস্থা?"
চাচা মিয়া তার তার প্রশ্নের উত্তর দিলেন, "আফনে খে? আফনে হরো। আফনার বড় ডাক্তর কই?(আপনি কে? সরেন। বড় ডাক্তার কোথায়?)" শেখর ভয় পেয়ে "হরে" আসলো।
আরেক প্যাশেন্টের কাছে গেলো তানিয়া। সে রোগীর পেট টেট টিপে দেখলো মুখে অনেক গাম্ভির্য এনে। একটু দেখে টেখে বললো, "চিন্তা করবেন না। ভালো হয়ে যাবেন"
রোগীকে তখন আস্তে করে বলতে শোনা গেলো "বেফর্দা ফুড়ি কুনানোর। আমরা উদলা গাত গুতাগুতি করে আইয়া(বেপর্দা মেয়ে। আমার খালি গায়ে গুতাচ্ছে)"
আমাদের মধ্যে রাফি একজন মেধাবী মুখ। তার পড়াশোনা অনেক। লেখাপড়ায় অনেক সিরিয়াস।
তাকে এক প্যাশেন্টকে অনেক ক্ষন ধরে পর্যবেক্ষন করতে দেখা গেলো। সে রোগির পেট টিপলো। হা করিয়ে মোবাইলের লাইট দিয়ে জিহবা দেখলো, চোখ দেখলো।
অনেক ক্ষন দেখা দেখির পরে মুখে করুন ভাব এনে আমাদেরকে জানালো, "এই রোগী ৭/৮ দিনের বেশি টিকবে না। আফসুস।"
কিছুক্ষন পরে জানা গেলো রাফি যাকে দেখেছে সে আসলে রোগীই না। সে ছিলো রোগীর ছোট ভাই।
যাই হোক এভাবেই চলে গেলো আধা ঘন্টা। হঠাৎ...
(চলবে...)
সব চেয়ে দেখার মতো অবস্থায় আছে সাদিয়া। তার চেহারাতেই ডাক্তারনি টাইপ একটা সিরিয়াসনেস আছে। সে নিজেও বোধ হয় সেটা জানে। তাই মুখ গম্ভির করার চেষ্টাটা সেই করে যাচ্ছে সব চেয়ে বেশি। কিন্তু শেষমেষ সে নিজেই সব বেশি হাসছে। মুচকি টাইপ হাসি। হাসার সাথে সাথে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে, এদিক ওদিক তাকায়। এমন ভাব যেনো "আমি হাসছি নাকি? আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে সিঙ্গাড়া দেখছি।"
যাই হোক। আমাদের প্রথম ওয়ার্ড হলো সার্জারি। সার্জারি ওয়ার্ডটা আসলে কোথায় সেটাই এখনো জানি না। সবাই ক্যান্টিনে বসে আছি।
হঠাৎ কোথা থেকে মনে হয় গায়েবী নির্দেশ এলো, "উপরে উঠো। তোমাদের সার্জারি ওয়ার্ড উপরে"। সবাই দৌড় দিয়ে চলে গেলো লিফটের দিকে। এই দৌড়ে সামনের সারিতে আছে তন্ময়। আহা ছেলেটা! আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে যেতে তার এই দৌড় অত্যান্ত প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু দৌড়বিধ হিসেবে তার পারফরম্যান্স খুব সুবিধাজনক হলো না। দৌড়াতে গিয়ে হাসপাতালের পিচ্ছিল ফ্লোরে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলো। "পড়বি তো পড় মাসির ঘাড়ে"। মানে সে গিয়ে পড়লো হাসপাতালের কর্তব্যরত এক মাসির উপর। মাসি তার দিকে চোখ কটমট করে তাকালেন। তন্ময় অতি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলো।
লিফটে যায়গা পেলাম না কয়েকজন। পায়ে হেটেই উঠতে লাগলাম। সাত তলা "উর্ধ্বে" যেতে হবে। আমি কবি নজরুলের বানি মনে করে করে সিড়ি বাইতে থাকলাম। "চল চল চল, উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল"।
যারা লিফটে করে এসেছে তাদের আগেই আমরা পৌছে গেলাম সাত তলায়। গিয়ে কিছুই বুঝি না। কোন ওয়ার্ডে যাবো? তবে "ফিমেল ওয়ার্ডের" দিকে দেলোয়ারের দৃষ্টি একটু বেশিই ছিলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি ব্যাপার ভ্রাতা? খালি ফিমেল ওয়ার্ডের দিকে উকি দিচ্ছো কেনো?" সে আমার কথার উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো, "এক লাড়কি কো দেখা সানাম"।
আবার গায়েবী নোটিশ এলো। "হে ছাত্রছাত্রিরা। তোমরা সার্জারি পুরুষ ওয়ার্ডে যাও"। পুরুষ ওয়ার্ডের দিকে দৌড় দিলো সবাই। তবে পুরুষ ওয়ার্ডে যেতে হবে এটা শুনে দেলোয়ার মুখে হালকা বিষাধের ছাপ পড়লো লক্ষ্য করলাম।
ওয়ার্ডে ঢুকলাম সবাই। জানতে পারলাম স্যারের আসতে দেরি হবে আধা ঘন্টা। স্যার গায়েবি নির্দেশ পাঠালেন "তোমরা ওয়ার্ডে প্যাশেন্ট দেখো। আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তবুও তোমরা প্যাশেন্ট দেখে যাবে"
নির্দেশগুলা কিভাবে আসছে কিছুই ধরতে পারলাম না। হঠাৎ দেখা যায় সবাই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাই এটাকে নাম দিয়েছি গায়েবি নির্দেশ।
যাই হোক, নির্দেশ পেয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই প্যাশেন্ট দেখতে নেমে পড়লাম। অবশ্য আমাদের কাছে তেমন কিছুই নেই ব্যাগ আর মোবাইল ছাড়া।
শেখর মুখে ব্যাপক ভাব নিয়ে গেলো এক প্যাশেন্টের কাছে। জিজ্ঞেস করলো, "চাচা মিয়া কি অবস্থা?"
চাচা মিয়া তার তার প্রশ্নের উত্তর দিলেন, "আফনে খে? আফনে হরো। আফনার বড় ডাক্তর কই?(আপনি কে? সরেন। বড় ডাক্তার কোথায়?)" শেখর ভয় পেয়ে "হরে" আসলো।
আরেক প্যাশেন্টের কাছে গেলো তানিয়া। সে রোগীর পেট টেট টিপে দেখলো মুখে অনেক গাম্ভির্য এনে। একটু দেখে টেখে বললো, "চিন্তা করবেন না। ভালো হয়ে যাবেন"
রোগীকে তখন আস্তে করে বলতে শোনা গেলো "বেফর্দা ফুড়ি কুনানোর। আমরা উদলা গাত গুতাগুতি করে আইয়া(বেপর্দা মেয়ে। আমার খালি গায়ে গুতাচ্ছে)"
আমাদের মধ্যে রাফি একজন মেধাবী মুখ। তার পড়াশোনা অনেক। লেখাপড়ায় অনেক সিরিয়াস।
তাকে এক প্যাশেন্টকে অনেক ক্ষন ধরে পর্যবেক্ষন করতে দেখা গেলো। সে রোগির পেট টিপলো। হা করিয়ে মোবাইলের লাইট দিয়ে জিহবা দেখলো, চোখ দেখলো।
অনেক ক্ষন দেখা দেখির পরে মুখে করুন ভাব এনে আমাদেরকে জানালো, "এই রোগী ৭/৮ দিনের বেশি টিকবে না। আফসুস।"
কিছুক্ষন পরে জানা গেলো রাফি যাকে দেখেছে সে আসলে রোগীই না। সে ছিলো রোগীর ছোট ভাই।
যাই হোক এভাবেই চলে গেলো আধা ঘন্টা। হঠাৎ...
(চলবে...)
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।