মা শুয়ে আছেন স্ট্র্যাচারে। কিছুক্ষণ পরেই তাকে নেয়া হবে অপারেশন থিয়েটারে।
বাবা কাদছেন।
বোন কাদছে।
মা শক্ত করে আমার হাত ধরে আছেন। আমি যাবো তার সাথে অপারেশন থিয়েটারে।
নার্স স্ট্র্যাচার নিয়ে যেতে শুরু করলো। আমি বাবার চোখের দিকে তাকালাম। অদ্ভুত শূন্যতা। আমি বাবার এই চোখের সাথে পরিচিত না একটুও। মা হাত ধরে আছেন বাবার।
ডক্টর স্বান্তনা দিচ্ছেন বাবাকে "বেশি সিরিয়াস কিছু না। আল্লাহকে ডাকুন। এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো চলবে না"
আমিও জানি অপারেশনটা বেশি জটিল না।
তারপরেও আমার ভেঙ্গে পড়া উচিত। একটু হলেও হার্টবিট বেড়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার কিছুই হলো না। আমি রীতিমতো হেসে হেসে চলে গেলাম অপারেশন থিয়েটারে।
ম্যাডাম বললেন অপারেশন থিয়েটারের ড্রেস পরে আসতে। আমি পরে আসলাম।
ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কাছে দাড়াতে পারবা? ভয় পাবা কিন্তু।"
- না ম্যাডাম। ভয় পাবো না।
- প্রথম সার্জারি দেখে কিন্তু সবাই ভয় পায়। তার উপর প্যাশেন্ট এখন তোমার মা।
- আচ্ছা ম্যাডাম দেখি। ভয় পেলে না হয় সরে আসবো।
- আচ্ছা
আমি পাশে গিয়ে দাড়ালাম। সার্জন সহ অপারেশন থিয়েটারে আরো চারজন ডাক্তার।
মা-কে আগেই এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়েছে।
ইনসিশন দেয়া হলো। স্কিন কেটে গেলো। গল গল করে রক্ত বের হচ্ছে। গজ দিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে রক্ত। মোটামোটি বিভৎস একটা দৃশ্য। আমার ভয় পাওয়া উচিত। অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করলাম আমার মধ্যে কোন বিকার নেই। একবারও হাটু কাপলো না।
খুব দ্রুত স্কিন, ফাসা, লিনিয়া এলবা সব কেটে ফেললেন। একেকটা ইনসিশন দেয়ার পর রক্ত এসে ভরে যাচ্ছে। সাকশন দিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে রক্ত। মাসল, আর্টারি, ভেইন, লিগামেন্ট একটার পর একটা কাটছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এ এক অদ্ভুত মাদকতা। নিজেকে সম্মোহিত মনে হচ্ছিলো।
অপারেশন সম্পর্কে আমার ধারনা ছিলো অন্যরকম।
ভাবতাম লিভিং বডির ভেতরে সব কিছু মনে হয় খুব আলতোভাবে করা হয়। কিন্তু দেখলাম আমার ধারনা খুব একটা ঠিক না।
বডির ভেতরে খুব আলতো ভাবে কিছু করা হয় না। অনেকগুলা কাচি একসাথে রাখা হয়, মাসল, লিগামেন্ট, আর্টারি কাটাকাটিতে সার্জনের হাত কাপে না একটুও। বাসায় মরা গরুর মাংস যেভাবে কাটা হয় এখানেও ব্যাপারটা অনেকটা এরকম।
আমি চোখ সরু করে পুরো প্রক্রিয়াটা দেখলাম।
আমার হাত কেটে রক্ত বের হলেই মা কেদে কেটে অস্থির হয়ে যেতেন। অথচ আমি মায়ের শরীরের কাটাকাটি দেখছি সম্পুর্ন নিস্পৃহ হয়ে। কি অদ্ভুত!!
সব কিছু হলো অনেক দ্রুত। তারপরেও সময় লেগে গেলো প্রায় দেড় ঘন্টা।
সেলাই দেয়া হলো অনেকগুলো।
ম্যাডাম বললেন, "তোমার সাহস আছে।"
আমি মনে মনে ভাবলাম। কি জানি! এমনও হতে পারে আমার কোন ইমোশনই নেই।
অথচ আমি কিছুদিন আগেও নিজেকে অসম্ভব ইমোশনাল মনে করতাম।
মা-কে কেবিনে দেয়া হলো ২৪ ঘন্টারও কিছু সময় পরে।
কেবিনে দুটা বিছানা। একটাতে মা, আরেকটাতে বাবা। আমার থাকার যায়গা নেই। বাবা বললেন বাসায় চলে যেতে। আমি বাসায় চলে আসলাম।
রাত তিনটার সময় ফোন করলেন মা। "বাবা, তাড়াতাড়ি আয়। এখানে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তোর বাবা পড়ে গেছেন সিড়ি থেকে"
গভীর রাতে মায়ের কাছ থেকে এরকম ফোন। আমি স্বাভাবিকভাবেই ফোনে কথা বললাম।
"আচ্ছা আসছি"।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বাসা থেকে বের হলাম। রিক্সা পেলাম না। এতো রাতে রিক্সা পাওয়ার কথাও না।
প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার হেটে গেলাম হাসপাতালে।
বাবা বসে আছেন। চোখ মুখ লাল।
মুল ঘটনা হলো, মা হঠাৎ বিছানা থেকে উলটে পড়ে গিয়েছিলেন। বাবা হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে তাকে ধরাধরি করে তুলেছিলেন। তুলে গেলেন বাথরুমে।
বাথরুম থেকে ফেরার পথে হঠাৎ ঘামতে শুরু করলেন। তারপর সাথে সাথে উলটে পড়ে গেলেন। মাথায় আঘাত পেলেন বেশ জোরে। মুখের একটা জয়েন্টেও আঘাত পেলেন বেশ।
একটু ডেকে যে কর্তব্যরত ডাক্তারকে আনবেন সেই শক্তিও নেই।
গিয়ে ডাক্তারকে ডাকলাম। ডাক্তার বললেন হাইপোটেনশন। আমি বাবাকে শুইয়ে দিলাম। শুয়ে থাকলে প্রেশার নরমাল হয়ে যাওয়ার কথা।
বারান্দায় এসে দাড়ালাম।
এই প্রথম আমি অনুভব করলাম আমার অনেক দায়ীত্ব। অনে...ক।
বাবা কাদছেন।
বোন কাদছে।
মা শক্ত করে আমার হাত ধরে আছেন। আমি যাবো তার সাথে অপারেশন থিয়েটারে।
নার্স স্ট্র্যাচার নিয়ে যেতে শুরু করলো। আমি বাবার চোখের দিকে তাকালাম। অদ্ভুত শূন্যতা। আমি বাবার এই চোখের সাথে পরিচিত না একটুও। মা হাত ধরে আছেন বাবার।
ডক্টর স্বান্তনা দিচ্ছেন বাবাকে "বেশি সিরিয়াস কিছু না। আল্লাহকে ডাকুন। এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো চলবে না"
আমিও জানি অপারেশনটা বেশি জটিল না।
তারপরেও আমার ভেঙ্গে পড়া উচিত। একটু হলেও হার্টবিট বেড়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার কিছুই হলো না। আমি রীতিমতো হেসে হেসে চলে গেলাম অপারেশন থিয়েটারে।
ম্যাডাম বললেন অপারেশন থিয়েটারের ড্রেস পরে আসতে। আমি পরে আসলাম।
ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কাছে দাড়াতে পারবা? ভয় পাবা কিন্তু।"
- না ম্যাডাম। ভয় পাবো না।
- প্রথম সার্জারি দেখে কিন্তু সবাই ভয় পায়। তার উপর প্যাশেন্ট এখন তোমার মা।
- আচ্ছা ম্যাডাম দেখি। ভয় পেলে না হয় সরে আসবো।
- আচ্ছা
আমি পাশে গিয়ে দাড়ালাম। সার্জন সহ অপারেশন থিয়েটারে আরো চারজন ডাক্তার।
মা-কে আগেই এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়েছে।
ইনসিশন দেয়া হলো। স্কিন কেটে গেলো। গল গল করে রক্ত বের হচ্ছে। গজ দিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে রক্ত। মোটামোটি বিভৎস একটা দৃশ্য। আমার ভয় পাওয়া উচিত। অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করলাম আমার মধ্যে কোন বিকার নেই। একবারও হাটু কাপলো না।
খুব দ্রুত স্কিন, ফাসা, লিনিয়া এলবা সব কেটে ফেললেন। একেকটা ইনসিশন দেয়ার পর রক্ত এসে ভরে যাচ্ছে। সাকশন দিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে রক্ত। মাসল, আর্টারি, ভেইন, লিগামেন্ট একটার পর একটা কাটছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এ এক অদ্ভুত মাদকতা। নিজেকে সম্মোহিত মনে হচ্ছিলো।
অপারেশন সম্পর্কে আমার ধারনা ছিলো অন্যরকম।
ভাবতাম লিভিং বডির ভেতরে সব কিছু মনে হয় খুব আলতোভাবে করা হয়। কিন্তু দেখলাম আমার ধারনা খুব একটা ঠিক না।
বডির ভেতরে খুব আলতো ভাবে কিছু করা হয় না। অনেকগুলা কাচি একসাথে রাখা হয়, মাসল, লিগামেন্ট, আর্টারি কাটাকাটিতে সার্জনের হাত কাপে না একটুও। বাসায় মরা গরুর মাংস যেভাবে কাটা হয় এখানেও ব্যাপারটা অনেকটা এরকম।
আমি চোখ সরু করে পুরো প্রক্রিয়াটা দেখলাম।
আমার হাত কেটে রক্ত বের হলেই মা কেদে কেটে অস্থির হয়ে যেতেন। অথচ আমি মায়ের শরীরের কাটাকাটি দেখছি সম্পুর্ন নিস্পৃহ হয়ে। কি অদ্ভুত!!
সব কিছু হলো অনেক দ্রুত। তারপরেও সময় লেগে গেলো প্রায় দেড় ঘন্টা।
সেলাই দেয়া হলো অনেকগুলো।
ম্যাডাম বললেন, "তোমার সাহস আছে।"
আমি মনে মনে ভাবলাম। কি জানি! এমনও হতে পারে আমার কোন ইমোশনই নেই।
অথচ আমি কিছুদিন আগেও নিজেকে অসম্ভব ইমোশনাল মনে করতাম।
মা-কে কেবিনে দেয়া হলো ২৪ ঘন্টারও কিছু সময় পরে।
কেবিনে দুটা বিছানা। একটাতে মা, আরেকটাতে বাবা। আমার থাকার যায়গা নেই। বাবা বললেন বাসায় চলে যেতে। আমি বাসায় চলে আসলাম।
রাত তিনটার সময় ফোন করলেন মা। "বাবা, তাড়াতাড়ি আয়। এখানে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তোর বাবা পড়ে গেছেন সিড়ি থেকে"
গভীর রাতে মায়ের কাছ থেকে এরকম ফোন। আমি স্বাভাবিকভাবেই ফোনে কথা বললাম।
"আচ্ছা আসছি"।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বাসা থেকে বের হলাম। রিক্সা পেলাম না। এতো রাতে রিক্সা পাওয়ার কথাও না।
প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার হেটে গেলাম হাসপাতালে।
বাবা বসে আছেন। চোখ মুখ লাল।
মুল ঘটনা হলো, মা হঠাৎ বিছানা থেকে উলটে পড়ে গিয়েছিলেন। বাবা হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে তাকে ধরাধরি করে তুলেছিলেন। তুলে গেলেন বাথরুমে।
বাথরুম থেকে ফেরার পথে হঠাৎ ঘামতে শুরু করলেন। তারপর সাথে সাথে উলটে পড়ে গেলেন। মাথায় আঘাত পেলেন বেশ জোরে। মুখের একটা জয়েন্টেও আঘাত পেলেন বেশ।
একটু ডেকে যে কর্তব্যরত ডাক্তারকে আনবেন সেই শক্তিও নেই।
গিয়ে ডাক্তারকে ডাকলাম। ডাক্তার বললেন হাইপোটেনশন। আমি বাবাকে শুইয়ে দিলাম। শুয়ে থাকলে প্রেশার নরমাল হয়ে যাওয়ার কথা।
বারান্দায় এসে দাড়ালাম।
এই প্রথম আমি অনুভব করলাম আমার অনেক দায়ীত্ব। অনে...ক।
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।