১.
টানা ৫/৬ দিন ছিলো প্রচ্চন্ড গরম। "আয় বৃষ্টি ঝেপে" টাইপ আবহাওয়া। কিন্তু বৃষ্টি আর আসেনি। অবশেষে বৃষ্টি আসলো গতকাল রাত ১২ টার দিকে। ভয়ংকর বৃষ্টি। মনে হলো কেউ আকাশ থেকে শত শত পানি ভরা কলসী উপুড় করে দিয়েছে। একটু পর পর টুং টাং বাজনা বাজাচ্ছে কলসীর গায়ে। অদ্ভুত সুন্দর রিনিঝিনি বৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় "বরিষও ধরা মাঝে শান্তিরও বারি"।
কিন্তু সকালেই শান্তির বারি হয়ে গেলো অশান্তির বারি।
আমার অ্যানাটমি ভাইবা। বাসা থেকে বের হতেই হবে। কিন্তু বৃষ্টি আর থামে না। এ যেই সেই বৃষ্টি না। সিলেটের টিপিকাল বৃষ্টি। একেবারে বিরাট বড় ছাতা নিয়ে বের হলেও ভিজে চুপচুপে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা বলে কথা। আমাকে বের হতেই হলো। রিক্সা না পেয়ে হেটেই গেলাম কিছু যায়গা। ততক্ষনে ভিজে গেছি পুরোটাই। যেখানে গিয়ে সি এন জি তে উঠার কথা সেখানে গিয়ে দেখি গাড়ি টাড়ি কিছুই নাই। আমি বললাম "খাইছে! আইজ আমার খবর আছে।"
হঠাৎ একটা গাড়ি ব্যাক গিয়ারে বেল দিতে দিতে এসে দাড়ালো পাশে। দেখলাম ড্রাইভিং সিটে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের হ্যাড। স্যার দরজা খোলে দিয়ে বললেন।
- এই ছেলে উঠো।
আমি উঠে পড়লাম।
এই স্যারের সম্পর্কে উড়া কথা আছে তার মাথা নাকি খানিকটা "ইয়ে"।
একবার নাকি স্যার ক্লাসে হঠাৎ লেকচার থামিয়ে এক ছাত্রকে ডেকে বললেন। "এই দেখোতো, আমার মাথায় মাকরশা আছে কিনা!"
ঐ ছাত্র নাকি বলেছিলো "না স্যার। একটাও মাকরশা নেই"
যাই হোক। আমি স্যারের পাশেই বসলাম। স্যার কথা শুরু করলেন।
- তুমি তো বিরাট বোকা ছেলে।
- জি স্যার।
- আমি গাড়ি নিয়ে আসছি তুমি উঠতে দেরি করলা।
- জি স্যার।
- আমি তো তোমাকে চিনি। নবীন বরনে স্পিচ দিয়েছিলে না?
- জি স্যার।
- ক্লাস কয়টায়?
- স্যার, প্রফ চলছে। ৯ টায় শুরু।
- বোকা ছেলে। আমি গাড়ি নিয়ে না আসলে তো পরীক্ষা মিস করতা।
- জি স্যার।
স্যারের সাথে কথোপকথন চলছিলো। স্যার জানালেন আজকে এক সি এন জি ওয়ালা তার গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে। স্যার এও জানালেন যে সি এন জি ওয়ালা একটা "বোকা ছেলে"।
এই দেশের মানুষের সাইকোলোজির ব্যাপারেও স্যার কথা বললেন।
- এই ছেলে! আমাদের দেশের মানুষের সাইকোলোজিই জানি কেমন। সব সময় অস্থির ভাব। আমি ওয়েস্টে ছিলাম অনেক দিন। ওখানে এরকম না। আমি যদি এখন গাড়ি স্লো করি তাহলে আমার পেছনের গাড়ির উচিত তার গতিও স্লো করা। কিন্তু সে তা করবে না। সে আমাকে অভারটেক করে চলে যাবে।
স্যার নিজের কথার সত্যতা প্রমানের জন্য গাড়ির গতি কমালেন। পেছন থেকে একটা কার আমাদেরকে অভারটেক করে চলে গেলো। আমি ঐ কারের ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে মনে মনে বললাম "বোকা ছেলে"।
২.
হুমায়ুন আহমেদের কোলন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। খবরটা শুনেই কেমন জানি লাগছে। এই মানুষটার আরো ২০ বছর বেচে থাকা দরকার।
হুমায়ন আহমেদকে বলা হয় কথা শিল্পি। আমার মনে হয় তিনি শুধু কথা শিল্পি না। কথার জাদুকর। এই মানুষটার তৈরী করা বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে ভাবাটা আমার প্রিয় কাজগুলোর একটি।
মানুষের ভন্ডামি, প্রতারনা, মিথ্যা সহ অনেক কিছুই গায়ে না মাখার চেষ্টা করি নিজেকে হিমু ভেবে। কি হবে গায়ে মেখে! হিমু জোছনা ছাড়া আর কিছু কি গায়ে মাখে? (এ জন্য নিজেই আনাড়ি হাতে হিমুর ব্রেক আপ লেখার দুঃসাহস লেখার স্পর্ধা দেখিয়েছিলাম হয়তো)
অনেক বাঙালি তরুনের মতো আমিও হুমায়ুন আহমেদকে দেখে লেখালেখি করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করি। আমার একটা লেখা যখন হুমায়ুন আহমেদ পড়েছিলেন তখন আমার আনন্দ দেখে কে!
বুক ফুলিয়ে বলার মতো ব্যাপার রীতিমতো।
স্যারকে বেচে থাকতেই হবে। সুখের খবর হলো স্যারের ক্যান্সার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আর উইকিপিডিয়াতে দেখলাম প্রাথমিক স্ট্যাজে থাকলে এটা কিউরেবল ডিজিজ। ৯৫% ক্ষেত্রেই প্যাশেন্ট ভালো হয়ে যান।
৩।
একটা ছবি। :)
যে গান শুনছিঃ এ কি লাবন্যে পূর্ন প্রান প্রানেশ - কবিতা কৃষ্ণমূর্তি (রবীন্দ্রসঙ্গীত)
(আমার বিয়ের সময় শুধু এই গানটাই বাজাবো বিয়ের আগের ও পরের ১০ দিন)
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
টানা ৫/৬ দিন ছিলো প্রচ্চন্ড গরম। "আয় বৃষ্টি ঝেপে" টাইপ আবহাওয়া। কিন্তু বৃষ্টি আর আসেনি। অবশেষে বৃষ্টি আসলো গতকাল রাত ১২ টার দিকে। ভয়ংকর বৃষ্টি। মনে হলো কেউ আকাশ থেকে শত শত পানি ভরা কলসী উপুড় করে দিয়েছে। একটু পর পর টুং টাং বাজনা বাজাচ্ছে কলসীর গায়ে। অদ্ভুত সুন্দর রিনিঝিনি বৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় "বরিষও ধরা মাঝে শান্তিরও বারি"।
কিন্তু সকালেই শান্তির বারি হয়ে গেলো অশান্তির বারি।
আমার অ্যানাটমি ভাইবা। বাসা থেকে বের হতেই হবে। কিন্তু বৃষ্টি আর থামে না। এ যেই সেই বৃষ্টি না। সিলেটের টিপিকাল বৃষ্টি। একেবারে বিরাট বড় ছাতা নিয়ে বের হলেও ভিজে চুপচুপে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা বলে কথা। আমাকে বের হতেই হলো। রিক্সা না পেয়ে হেটেই গেলাম কিছু যায়গা। ততক্ষনে ভিজে গেছি পুরোটাই। যেখানে গিয়ে সি এন জি তে উঠার কথা সেখানে গিয়ে দেখি গাড়ি টাড়ি কিছুই নাই। আমি বললাম "খাইছে! আইজ আমার খবর আছে।"
হঠাৎ একটা গাড়ি ব্যাক গিয়ারে বেল দিতে দিতে এসে দাড়ালো পাশে। দেখলাম ড্রাইভিং সিটে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের হ্যাড। স্যার দরজা খোলে দিয়ে বললেন।
- এই ছেলে উঠো।
আমি উঠে পড়লাম।
এই স্যারের সম্পর্কে উড়া কথা আছে তার মাথা নাকি খানিকটা "ইয়ে"।
একবার নাকি স্যার ক্লাসে হঠাৎ লেকচার থামিয়ে এক ছাত্রকে ডেকে বললেন। "এই দেখোতো, আমার মাথায় মাকরশা আছে কিনা!"
ঐ ছাত্র নাকি বলেছিলো "না স্যার। একটাও মাকরশা নেই"
যাই হোক। আমি স্যারের পাশেই বসলাম। স্যার কথা শুরু করলেন।
- তুমি তো বিরাট বোকা ছেলে।
- জি স্যার।
- আমি গাড়ি নিয়ে আসছি তুমি উঠতে দেরি করলা।
- জি স্যার।
- আমি তো তোমাকে চিনি। নবীন বরনে স্পিচ দিয়েছিলে না?
- জি স্যার।
- ক্লাস কয়টায়?
- স্যার, প্রফ চলছে। ৯ টায় শুরু।
- বোকা ছেলে। আমি গাড়ি নিয়ে না আসলে তো পরীক্ষা মিস করতা।
- জি স্যার।
স্যারের সাথে কথোপকথন চলছিলো। স্যার জানালেন আজকে এক সি এন জি ওয়ালা তার গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে। স্যার এও জানালেন যে সি এন জি ওয়ালা একটা "বোকা ছেলে"।
এই দেশের মানুষের সাইকোলোজির ব্যাপারেও স্যার কথা বললেন।
- এই ছেলে! আমাদের দেশের মানুষের সাইকোলোজিই জানি কেমন। সব সময় অস্থির ভাব। আমি ওয়েস্টে ছিলাম অনেক দিন। ওখানে এরকম না। আমি যদি এখন গাড়ি স্লো করি তাহলে আমার পেছনের গাড়ির উচিত তার গতিও স্লো করা। কিন্তু সে তা করবে না। সে আমাকে অভারটেক করে চলে যাবে।
স্যার নিজের কথার সত্যতা প্রমানের জন্য গাড়ির গতি কমালেন। পেছন থেকে একটা কার আমাদেরকে অভারটেক করে চলে গেলো। আমি ঐ কারের ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে মনে মনে বললাম "বোকা ছেলে"।
২.
হুমায়ুন আহমেদের কোলন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। খবরটা শুনেই কেমন জানি লাগছে। এই মানুষটার আরো ২০ বছর বেচে থাকা দরকার।
হুমায়ন আহমেদকে বলা হয় কথা শিল্পি। আমার মনে হয় তিনি শুধু কথা শিল্পি না। কথার জাদুকর। এই মানুষটার তৈরী করা বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে ভাবাটা আমার প্রিয় কাজগুলোর একটি।
মানুষের ভন্ডামি, প্রতারনা, মিথ্যা সহ অনেক কিছুই গায়ে না মাখার চেষ্টা করি নিজেকে হিমু ভেবে। কি হবে গায়ে মেখে! হিমু জোছনা ছাড়া আর কিছু কি গায়ে মাখে? (এ জন্য নিজেই আনাড়ি হাতে হিমুর ব্রেক আপ লেখার দুঃসাহস লেখার স্পর্ধা দেখিয়েছিলাম হয়তো)
অনেক বাঙালি তরুনের মতো আমিও হুমায়ুন আহমেদকে দেখে লেখালেখি করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করি। আমার একটা লেখা যখন হুমায়ুন আহমেদ পড়েছিলেন তখন আমার আনন্দ দেখে কে!
বুক ফুলিয়ে বলার মতো ব্যাপার রীতিমতো।
স্যারকে বেচে থাকতেই হবে। সুখের খবর হলো স্যারের ক্যান্সার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আর উইকিপিডিয়াতে দেখলাম প্রাথমিক স্ট্যাজে থাকলে এটা কিউরেবল ডিজিজ। ৯৫% ক্ষেত্রেই প্যাশেন্ট ভালো হয়ে যান।
৩।
একটা ছবি। :)
যে গান শুনছিঃ এ কি লাবন্যে পূর্ন প্রান প্রানেশ - কবিতা কৃষ্ণমূর্তি (রবীন্দ্রসঙ্গীত)
(আমার বিয়ের সময় শুধু এই গানটাই বাজাবো বিয়ের আগের ও পরের ১০ দিন)
লাবন্যে পুর্ণ প্রাণ--প্রাণেশ হে......
আনন্দ বসন্ত সমাগমে...
একি লাবন্যে পুর্ণ প্রান--প্রাণেশ হে...
বিকশিত প্রীতি কুসম হে...আনন্দ বসন্ত সমাগমে...
বিকশিত প্রীতি কুসম পুলকিত চিত কাননে...
একি লাবন্যে পুর্ণ প্রান--প্রাণেশ হে.....
যে বনলতা অবনতা...তব চরনে...
হরষ গীত,উচ্ছসিত হে...আনন্দ বসন্ত সমাগমে...
হরষ গীত,উচ্ছসিত হে....
কিরন মগন গগনে
একি লাবন্য পুর্ণ প্রান--প্রাণেশ হে....
আনন্দ বসন্ত সমাগমে..
আনন্দ বসন্ত সমাগমে...
একি লাবন্যে পুর্ণ প্রান--প্রাণেশ হে...
বিকশিত প্রীতি কুসম হে...আনন্দ বসন্ত সমাগমে...
বিকশিত প্রীতি কুসম পুলকিত চিত কাননে...
একি লাবন্যে পুর্ণ প্রান--প্রাণেশ হে.....
যে বনলতা অবনতা...তব চরনে...
হরষ গীত,উচ্ছসিত হে...আনন্দ বসন্ত সমাগমে...
হরষ গীত,উচ্ছসিত হে....
কিরন মগন গগনে
একি লাবন্য পুর্ণ প্রান--প্রাণেশ হে....
আনন্দ বসন্ত সমাগমে..
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।