১।
টুবোকন।
বিখ্যাত রোবট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। গত ৪০ বছর যাবত তারা বিভিন্ন রকম রোবট তৈরী করে যাচ্ছে। তবে এবার তাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছ থেকে আদেশ এসেছে একটি হাইপার ইনট্যালিজ্যান্ট রোবট বানিয়ে দিতে হবে। রোবট বিজ্ঞানে যেটাকে বলা হবে ১৪ মাত্রার রোবট। প্রতিরক্ষা বিভাগে এই রোবটটি নাকি অনেক গুরত্বপূর্ন কোন পদে কাজ করবে।
আদেশ পেয়েই কাজ শুরু করে টুবোকন। পৃথিবীর সেরা সেরা বিজ্ঞানীরা পাচটি বছর অক্লান্ত গবেষনা করেছেন। অবশেষে টুবোকনের গোপন ল্যাবরটরিতে তৈরী হয়েছে সেই ১৪ মাত্রার রোবট।
২।
আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষন।
রোবটটিকে হস্তান্তর করা হবে প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছে। এ উপলক্ষে নগরীতে বিশাল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় বলেছে এই রোবটটি নাকি মানব সভ্যতার ইতিহাসে সব চেয়ে বড় আবিষ্কার। আজকের অনুষ্ঠানের পর রোবটটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। শত শত টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী একযোগে দেখবে অনুষ্ঠানটি।
৩।
অনুষ্ঠান শুরু হলো।
মঞ্চে উঠলেন প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান। পঞ্চাশ উর্ধ এই প্রৌড়ের চেহারায় এখনো তারুন্যের দ্বিপ্তী। ভারী গলায় কথা বলা শুরু করলেন তিনি। অসংখ্য ক্যামেরা আর ফ্ল্যাশ লাইটের আলো এক সাথে জ্বলে উঠলো।
- "প্রিয় পৃথিবীবাসী। আপনারা জানেন, আমরা এক মাহেন্দ্রক্ষনে এসে দাড়িয়েছি। কিছুক্ষন পর পুরো পৃথিবীর প্রতিরক্ষা বিভাগের দায়ীত্ব নেবে একটি রোবট। ১৪ মাত্রার রোবট। আপনারা যেনে খুশি হবেন আমরা এই রোবট-টির নামকরণ করেছি "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী"।"
সাথে সাথে করতালীতে ভরে গেলো চারপাশ।
একটু কাশী দিয়ে আবার কথা বলা শুরু করলেন প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান।
- "আমি এখন সুপার কম্পিউটারে কিছু কোড প্রবেশ করাবো। সাথে সাথে চালু হয়ে যাবে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।"
আস্তে করে একটা সুপার কম্পিউটারে কিছু কোড প্রবেশ করালেন তিনি। সাথে সাথে পৃথিবীবাসী প্রত্যক্ষ করলো ইতিহাসের সব গুরত্বপূর্ন ঘটনা।
মঞ্চের এক কোনায় রাখা একটা বাক্স থেকে একটা মানুষ আকৃতির রোবট বেরিয়ে আসলো। রোবটটি সোজা হয়ে দাড়ালো। পৃথিবীবাসী হা করে চেয়ে আছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে।
প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান বললেন, - "মহা মান্য স্বরষ্ট্রমন্ত্রী! আপনি আমাদের মঞ্চে এসে পৃথিবীবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকের সামনে আসার জন্য পা বাড়ালেন। তখনই ঘটলো একটি আশ্চর্য ঘটনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধুপ করে পড়ে গেলেন।
সঙ্গে সঙ্গে সিকিউরিটি এলার্ম বাজতে শুরু করলেন। মাইকে একজন ঘোষনা দিলেন, - "প্রিয় পৃথীবিবাসী, আমরা দুঃখিত। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রোগ্রামিং-এ কিছু ত্রুটী ছিলো। যার ফলে তার বা পা-টা কাজ করছে না।"
"আমরা এই বাগ ওয়ালা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাতিল ঘোষনা করছি। এখনই তাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হবে"
পৃথবীবাসী দেখলো এক ঝাক নিরাপত্তাকর্মী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘিরে ধরেছে। তারপরই ঘটলো এক আশ্চর্য ঘটনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখ থেকে বেরিয়ে আসলো লেসার রশ্মি। নিমিষে পুড়ে ছাই হলে গেলো এক ঝাক নিরাপত্তা কর্মী।
৪।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মনে অনেক দুঃখ।
তার ঠ্যাং নাই।
হাটতে পারেন না। এক ঠ্যাং দিয়ে আর কিইবা করা যায়। তবে কি তাকে সারা জীবন তাকে খোড়া হয়েই থাকতে হবে! গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। এক সাথে কাজ শুরু করলো তার কপোট্রনের কোটি কোটি কিউরন(কপট্রোনিক নিউরণ)।
হঠাৎ ঝিলিক দিয়ে উঠলো তার চোখ। একটা উপায় আছে। পৃথিবীর সব চেয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউওটার "সিডিসি" কে হ্যাক করতে হবে। তারপর সিডিসিতে কিছু জটিল কোড প্রবেশ করাতে হবে। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের মাধ্যমে সিডিসি তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কপোট্রনে কিছু কোড পাঠাবে। সাথে সাথে তার বা পা ঠিক হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একবার বলে উঠলেন ইয়াহহু!
৫।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন ১৪ মাত্রার রোবট। তার পক্ষে সিডিসিকে হ্যাক করাটা তেমন কঠিন কিছু না। তিনি সহজেই হ্যাক করে ফেললেন।
তার অন্দর মহলে বসে বসে সিডিসিতে কিছু কঠিন কোড প্রবেশ করালেন। উত্তেজনায় ঘামছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিছুক্ষন পরেই রিপোর্ট জানাবে সি ডি সি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন সিডিসি-র মনিটরের দিকে।
সাদা মনিটরে আবছা ভাবে কিছু লেখা আসলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফটোসেলের চোখ দিয়ে দেখলেন মনিটরে লেখা আছে- "আপনার ঠ্যাং-এর ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই।"
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পিসি ইউজাররা উপরের(ফেইসবুক কমেন্ট) অথবা নিচের যেকোনো বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা যে বক্সটি দেখা যাচ্ছে সেটিতে কমেন্ট করুন।